টাঙ্গাইল আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া বড় মনিকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত এক তরুণীকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেন, “ধর্ষণের মামলা করার পর থেকে আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে প্রসবের পর শিশুটির পরিচয় নিশ্চিত করতে ডিএনএ টেস্ট করা হচ্ছে। তবে আমি আশঙ্কা করছি যে মোটা টাকা এই ডিএনএ রিপোর্ট পরিবর্তন করতে পারে। তারা টাঙ্গাইল-২ আসনের সংসদ সদস্য ছোট মনিরের বড় ভাই বলে তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করছে।আমি ও আমার সন্তানের ডিএনএ স্যাম্পল না দিতে ধর্ষক এক কোটি টাকা ও একটি ফ্ল্যাট দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে।
সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় মেয়েটির পাশে ছিল এক জামাই ও একটি শিশু।
সংবাদ সম্মেলন শেষে কিশোর যুগান্তরকে বলেন, টাঙ্গাইলে ভীতিকর পরিস্থিতির কারণে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করতে এসেছি। কিন্তু এখানেও আমাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। বড় মনি তার গাড়ি ও ড্রাইভারসহ ডিআরইউ-এর সামনে লোক পাঠিয়েছেন। আমি প্রেস কনফারেন্স থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর তারা আমাকে ২০ মিনিট অনুসরণ করেছিল। আমি এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাই, আমি আমার নিরাপত্তা চাই, আমি একটি স্বাভাবিক জীবন চাই।
সংবাদ সম্মেলনে কিশোরী বলেন, তারা (বড় মনি, ছোট মনির) আমাকে নানা প্রলোভন ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। আমাকে ফ্ল্যাট, টাকা দিতে চান। এখন বড় মনি যদি আমাকে বিয়ে করতে চায়, আমি তাতেও রাজি নই। আমি শুধু আমার সন্তানের অধিকার চাই। তারা এটি চায় যাতে তারা ডিএনএ রিপোর্টের সাথে টেম্পার করতে না পারে।
বড় মনি আপনাকে বিয়ে করতে চান, আপনি রাজি আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, আমি বিয়ে করতে রাজি নই। আমি আমার সন্তানের অধিকার চাই, অভিযুক্তের শাস্তি চাই। আমি টাকা চাই যাতে ডিএনএ রিপোর্ট পাল্টানো না যায় এবং মামলাটি চাপা দেওয়া যায়। আমরা এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।
এর আগে ধর্ষণের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাবা-মা না থাকায় অসহায় জীবন যাপন করতাম। আমার মামলার আসামী বড় মনি আমার আত্মীয় হিসেবে পরিচিত। বিবাদী আমাকে ও আমার ভাইকে সম্পত্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার কথা বললে আসামি আমাকে তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে সমস্যার সমাধান করে দেবে, আমাকে ধর্ষণ করে এবং আমার বিভিন্ন ছবি তোলে।
ধর্ষণের পর আসামি আমাকে ঘটনাটি কাউকে জানাতে নিষেধ করে। প্রকাশ করলে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এ ঘটনার দু-একদিন পর বড় মনি আমাকে একইভাবে হুমকি দেন। তারা আমাকে ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করে। ধর্ষণের ফলে আমি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ি। আমি এ ঘটনা বিবাদীকে জানালে সে আমাকে গর্ভস্থ সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ ও হুমকি দেয়। পরে বড় মনি অনাগত সন্তানের কথা অস্বীকার করে জোরপূর্বক শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে।
কিশোরী আরও বলেন, আমি টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা করতে গেলে প্রথমে পুলিশ মামলা নিতে অস্বীকার করে। পরে বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ায় পুলিশ মামলা নিতে বাধ্য হয়। আসামি আদালতে হাজিরা দিতে গেলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বড় মনি। অভিযুক্তের ডিএনএ টেস্ট করার কথা থাকলেও তিনি দীর্ঘদিন ডিএনএ নমুনা দিতে অস্বীকৃতি জানান। গত ২১ আগস্ট হাইকোর্টের আদেশে আসামিকে ডিএনএ নমুনা দিতে বাধ্য করা হয়।
তিনি আরও বলেন, আমার দুই মাস বয়সী শিশুর ডিএনএ টেস্টের সময় আসামি ও আমি সিআইডির কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার অভদ্র আচরণের শিকার হয়েছিলাম। যদিও আমি ভুক্তভোগী, তাদের আচরণ আমাকে অপরাধীর মতো মনে করে। লোকজনের মুখে শুনছি, এ ক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষার ফল পরিবর্তন করতে আসামিদের কোনো সমস্যা হবে না। সিআইডিতে কর্মরত একজন পুলিশ সুপার অভিযুক্তদের ডিএনএ পরিবর্তনের জন্য সহযোগিতা করবেন।
তিনি আরও বলেন, বড় লোক আমাকে এক কোটি টাকা ও একটি ফ্ল্যাট দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন যাতে আমাকে ডিএনএ নমুনা দিতে না হয়। তাছাড়া টাঙ্গাইলে ছোট মনির ও বড় মনিরকে সমর্থনকারী আওয়ামী লীগের কিছু নেতা কয়েক কোটি টাকা দিয়ে আমাকে বিদেশে বদলিসহ সারা জীবনের দায়িত্ব নিতে চায়। আমি টাকা চাই না আমি আমার সন্তানের অধিকার চাই। ডিএনএ নমুনা পরিবর্তন করার জন্য প্রভাবশালী মহলে বড় বড় অর্থের প্রস্তাব আমাকে ডিএনএ পরীক্ষা এবং মামলার সঠিক তদন্ত সম্পর্কে সন্দেহ করে তোলে।
ওই তরুণীর অভিযোগ, মামলা তুলে নিতে ছাত্রলীগের এক নেতা তাকে হুমকি দেন। বড় মনির স্ত্রী আমার মামলার দ্বিতীয় আসামি। সে আমাকে ফোন করে হুমকি দেয়। আমি চারপাশের লোকদের দ্বারা পর্যবেক্ষণ করছি। আমি আমার বাচ্চা ছেলেকে নিয়ে কোথাও যেতে পারব না। আমি স্বাভাবিক জীবন থেকে বঞ্চিত। বড় মনির সাথে রাজনীতি করে এমন কিছু লোক রাত ১২টার পর আমাকে ফোন করে। মামলা নিষ্পত্তির জন্য আমার স্বজনদের দ্বারা আমাকে চাপ দেওয়া হয়। এসব ঘটনায় পুলিশের কোনো সহযোগিতা পাইনি। উল্টো অনেকবার পুলিশের হাতে হয়রানির শিকার হয়েছি।