কোন কোন সময় নিয়তি মানুষের সাথে অদ্ভুত খেলা খেলে তার বাস্তব প্রমান আজকের এই ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে আসার সপ্তহ না পেরতেই চিরতরে হারিয়ে হারিয়ে গেলেন রফিকুল তার ছেলে এবং ১১ দিন নিজের জীবনের সাথে লড়াই করা তার মেয়ে। অবশেষে নিয়তিরে সাথে হেরে গেলেন পরিবারের তিন সদস্য।
রফিকুল ইসলাম ও তার ছেলে মাইকুল ইসলামের মৃ/ত্যুর পর সিলেট ওসমানীনগরের তাজপুর স্কুল রোডের ভাড়া বাসা থেকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া একমাত্র মেয়ে সামিরা ইসলাম (২০) বর্তমানে একমাত্র মেয়ে সামিরা ইসলাম (২০)। ঘটনার ১১ দিন পর গত শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে সামিরা ইসলাম মারা যান।
ওসমানীনগর থানার ওসি এসএম মাইন উদ্দিন ব্রিটিশ নাগরিক সামিরা ইসলামের মৃ/ত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গত বুধবার সামিরার মা হোসনে আরা বেগম ও ভাই সাদিকুল ইসলামের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দিলেও তাজপুরে ভাড়া বাসায় ফিরে আসেন মা-ছেলে। গত ২৬ জুলাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলামের স্ত্রী হোসনে আরা বেগম, ছেলে সাদিকুল ইসলাম ও মেয়ে সামিরা ইসলামকে ওসমানী হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় মা ও ছেলেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সামিরার জ্ঞান ফেরেনি। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কিডনি, লিভারসহ কয়েকটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করা বন্ধ করে দেয় সামিরা। ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল বাদ আসর উপজেলার দয়ামীর ইউপির পারকুল মাদ্রাসায় জানাজা শেষে সামিরার লাশ খাতুপুর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এদিকে গত বুধবার হাসপাতাল থেকে বাসায় ফেরার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন। হাসপাতালে ফিরেই হোসনে আরা বেগম ও সাদিকুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এ সময় হোসনে আরা পুলিশ সুপারকে বলেন, বিদ্যুৎ না থাকলে ঘরের ভেতরে জেনারেটর চালু ছিল।
জেনারেটর চালু হওয়ার পর তার ছেলে মাইকুল ইসলামের শ্বাসকষ্ট হয়। পুলিশও বাড়িতে জেনারেটর চালু করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে। পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন জানান, জেনারেটর চালু হওয়ার পর উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি টের পান।
ঘটনার রাতে দীর্ঘদিন জেনারেটর চালু থাকায় যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ও তার ছেলে মাইকুল ইসলামের শ্বাসরোধে মৃ/ত্যু হয়েছে বলে পুলিশের ধারণা। অজ্ঞান হয়ে পড়েন স্ত্রী ও আরেক ছেলে সাদিকুল ইসলাম ও একমাত্র মেয়ে সামিরা ইসলাম। জেনারেটরের ধোঁয়ায় কী ধরনের বিষক্রিয়া হতে পারে তা নিশ্চিত করতে ফায়ার সার্ভিসে সংকেত পাঠানো হয়েছে। তবে মৃ/ত্যুর কারণ জানতে পুলিশ নিহত পিতা-পুত্রের ময়নাতদন্ত এবং ওই রাতে খাওয়া খাবারের রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, জেনারেটরটি বাড়ির বাইরে রয়েছে। কিন্তু ওই বাড়িতে জেনারেটর ছিল। বাড়ির জেনারেটর দিয়ে পরিবেশ পর্যবেক্ষণ শুরু করলে কিছুক্ষণ পর সেখানে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদেরও অস্বস্তিকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়। তাই ধারনা করা হচ্ছে ঘটনার রাতে দীর্ঘক্ষণ জেনারেটর চালু থাকায় ধোঁয়ায় শ্বাস নিতে না পারায় দম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তবে এখনো নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। জেনারেটর থেকে ধোঁয়া সংগ্রহ করে ফায়ার সার্ভিসে পাঠানো হয়েছে। পরীক্ষার পর এই ধোয়া থেকে কী ধরনের বিষ তৈরি হতে পারে তা ফায়ার সার্ভিস জানতে পারবে। ওসমানীনগর ট্রাজেডির প্রকৃত কারণ জানতে অপেক্ষা করতে হবে নিহত পিতা-পুত্রের ময়নাতদন্ত এবং ওই রাতে খাওয়া খাবারের রাসায়নিক প্রতিবেদনের জন্য।
উল্লেখ্য, গত ১২ জুলাই রফিকুল ইসলাম পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরেন। বড় ছেলে সাদিকুল ঢাকায় এক সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে গত ১৮ জুলাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলামসহ ৫ সদস্যের একটি পরিবার তাজপুর ইউপি চেয়ারম্যান অরুণোদয় পাল ঝলকের ৪ তলা বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ওঠেন। স্কুল রোড। ২৫ জুলাই রাতের খাবারের পর রফিকুল স্ত্রী, মেয়ে ও ছেলেদের নিয়ে বাড়ির একটি কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন এবং শ্বশুর, শাশুড়ি, শ্যালক, শ্যালকের স্ত্রী ও ভাই-বোন। শ্বশুরের মেয়ে অন্য দুটি ঘরে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে বাড়ির অন্য কক্ষে থাকা স্বজনরা রফিকুলের শ্যালক দিলওয়ারকে ফোন করলে কোনো সাড়া না পেয়ে ‘৯৯৯’ নম্বরে ফোন করেন। খবর পেয়ে ওসমানীনগর থানার একটি দল দরজা ভেঙ্গে অচেতন অবস্থায় যুক্তরাজ্য প্রবাসী ৫ জনকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ব্রিটিশ নাগরিক রফিকুল ইসলাম ও তার ছোট ছেলে মাইকুল ইসলামকে মৃ,ত ঘোষণা করেন। স্ত্রী হোসনে আরা, বড় ছেলে সাদিককুল ইসলাম ও একমাত্র মেয়ে সামিরা ইসলামকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। রফিকুলের স্ত্রী হোসনে আরা ও ছেলে সাদিকুল সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসলেও ১১ দিন অজ্ঞান হয়ে লাইফ সাপোর্টে থাকা সামিরা গত শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।