Tuesday , September 17 2024
Breaking News
Home / Exclusive / সত্য বচন পাগলামি, চাপে প্রলোভনেও সোচ্চার ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

সত্য বচন পাগলামি, চাপে প্রলোভনেও সোচ্চার ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী

বাংলাদেশের সম্মানিত ব্যক্তিদের মধ্যে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রায় সময় নানা রকম বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসেন। তিনি প্রায় সময় যে সকল বক্তব্য দেন এতে করে অনেকে তাকে রাজনীতিবিদ মনে করেন। এছাড়া তিনি দেশের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের জন্যেও কথা বলে থাকেন। যার কারণে তাকে অনেকে স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের রূপকার হিসেবেও জানেন। তিনি সমাজের সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলে থাকেন। তবে তিনি যখন সমাজের সব অসংগতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী করেন ঠিক এই সময় তাকে নিয়ে বেশ আলোচনা শুরু হয়। অনেকে তাকে পাগল পর্যন্ত বলে থাকেন। কিন্তু তিনি তার কোনো লাভের জন্য এই সকল অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলেন না। দেশের ভালোর জন্য তিনি প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছেন। এবার এই সম্মানিত ব্যক্তির সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য উঠে এসেছে।

ষাটের দশকে ঢাকা মেডিক্যালের ছাত্র থাকা অবস্থায় সেই প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন তথা ‘পাগলামি কর্মকাণ্ড’ করে বসেন ডা. জাফরুল্লাহ। বর্তমান সময়েও তাঁর ‘সত্য বচন’ অনেকের কাছে পাগলামি বলে মনে হয়।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে ভূমিকা পালন করায় এবং টিকা নিয়ে কথা বলায় জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে ছিল আওয়ামী লীগ। আবার এখন তারেক রহমানকে দুই বছরের জন্য রাজনীতি থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়ায় তাঁর কর্মকাণ্ডকে অপছন্দ করছে বিএনপি। কিন্তু বীর মুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে এসব ঘটনা দমাতে পারেনি। যে চেতনা ও সাহস তাঁকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার যেমন তাগিদ জুগিয়েছে, তেমনি দূরদর্শী প্রতিভা তাঁকে নিয়ে গেছে নতুন নতুন উদ্ভাবনী ভাবনা ও পরিকল্পনার দিকে। এ কারণেই মুক্তিযুদ্ধের সময় আগরতলায় মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ফিল্ড হাসপাতাল নির্মাণ, পরিবার পরিকল্পনায় বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে লাইগেশন সার্জারির উদ্ভাবন এবং এরশাদ আমলে জাতীয় ঔষধ নীতি প্রণয়নের মতো কাজ তিনি করতে পেরেছিলেন। লন্ডনে নিজের পাসপোর্টে আগুন লাগিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীর নির্মমতার প্রতিবাদ জানানোর ইতিহাসও তিনি।

বাংলাদেশে সম্ভবত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীই একমাত্র ব্যক্তি, মুক্তিযুদ্ধের পর যাঁর সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়াসহ দেশের বেশির ভাগ রাজনীতিকের ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক ছিল। কিন্তু ওই সম্পর্ক ব্যবহার করে ডা. জাফরুল্লাহ ব্যক্তিগত বা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন এমন উদাহরণ কেউ দিতে পারবেন না।

ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ভাষায়, ‘অন্যায়-অ’বি’চা’রে’র বিরুদ্ধে প্রতিবাদই হচ্ছে ডা. জাফরুল্লাহর জীবনের চালিকাশক্তি। তাঁকে এই সমাজের বাতিঘরও বলা যায়। কেননা মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু গত পাঁচ দশকের সব রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন। প্রতিবাদী ও একজন সংগঠকের ভূমিকায় আমরা তাঁকে দেখি।’

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মতে, ‘ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থক নন। তিনি যখন যা-ই বলেন সেটি তাঁর বিবেচনাবোধ থেকে। নিজের স্বার্থ বা উপার্জনের কথা চিন্তা করে তিনি কথা বলেন না। সত্য বলায় শুভাকাঙ্ক্ষীদের কোনো নিষেধও তিনি শোনেন না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক মনে করেন, ‘জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মধ্যে অসাধারণত্ব আছে এবং তিনি সঠিক ও সত্য কথাই বলেন। এই সত্যের হিসাব যখন কারো অপছন্দ হয়, তখনই তারা পাগলামির প্রসঙ্গটি ভাবতে থাকে।’ তিনি বলেন, তাঁর মতো সাহসী ও প্রতিবাদী মানুষকে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির লোক না বলাই ভালো। কারণ তিনি জন-আকাঙ্ক্ষার দিকে তাকিয়ে সহজ-সরলভাবে মত প্রকাশ করে থাকেন।

সম্প্রতি কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে দীর্ঘ আলাপে জাফরুল্লাহ চৌধুরী মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অংশগ্রহণসহ স্বাধীনতা-পরবর্তী কয়েকজন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে স্মৃতিচারণা করেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার বিএনপিকে শে’ষ করতে গিয়ে কার্যত রাজনীতিকেই শে’ষ করেছে। এ জন্য দেশে হিংসা-বিদ্বেষ তৈরি হয়েছে। রাজনীতি থেকে এই হিংসা-বিদ্বেষ দূর করার জন্য আমি এখনো দুই দলের মধ্যে এটা সমঝোতার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে চেষ্টা করেও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাচ্ছি না। এক দল আমলা তাঁকে ঘিরে রেখেছে।’

জাফরুল্লাহ জানান, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সর্বশেষ দেখা হয়েছিল। এর আগে ২১ আগস্টের ঘটনা এবং ডা. ওয়াজেদ মিয়ার মৃ”ত্যু”র পরও তিনি শেখ হাসিনার বাসায় গিয়ে তাঁকে সান্ত্বনা দিয়েছেন। ২১ আগস্টের ঘটনার পর নেতাকর্মীদের চিকিৎসায় সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে শেখ হাসিনা নিজেই তাঁকে ডেকে বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর সঙ্গে পরামর্শ করেছেন বলেও জানান ডা. জাফরুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘দেশে রাজনৈতিক বিভাজনের এই সময়ে একজন অভিভাবকের বড় অভাব।’

এরশাদবিরোধী আন্দোলনে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে আলোচনার টেবিলে বসানোয় নেপথ্যে মূল ভূমিকা রেখেছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক প্রয়াত ফয়েজ আহ্মদ। এর পরের কয়েক দশকে প্রখ্যাত আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হককে দুই নেত্রীর সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে। তাঁর মৃ”ত্যু”র পর দুই নেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ থাকা সর্বশেষ মানুষটি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলে অনেকে মনে করেন। কারণ দুই নেত্রীর সঙ্গে তাঁর একাধিকবার দেখা হয়েছে, বৈঠকও করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে যায় এমন কথা বলে আবার তাঁদের বিপদে পাশেও দাঁড়িয়েছেন। এরশাদ আমলে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হলে তাঁকে দ্রুত মুক্তি দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এখন আবার খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানাচ্ছেন। যদিও বর্তমান রাজনৈতিক বৈরিতা দূর করতে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও তিনি সফল হতে পারেননি। তবু থেমে নেই। অদম্য এই মানুষটি ৮০ বছর বয়সেও রাজনীতিসহ জাতীয় প্রায় প্রতিটি ইস্যুতে তত্পর রয়েছেন, প্রতিবাদ করছেন।

গত কয়েক বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দুই দফা খোলা চিঠি দিয়ে আলোচিত হয়েছেন ডা. জাফরুল্লাহ। যদিও ওই চিঠির বিষয়ে দুই নেত্রীর পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।

প্রখ্যাত সাংবাদিক ও কলামিস্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী ডা. জাফরুল্লাহর কিছু মতামত ও তত্পরতাকে ‘পাগলামি’ বলে অভিহিত করেছেন। দু-একটি লেখায় তাঁকে ‘বিএনপির অভিভাবক’ বলেও অভিহিত করেন তিনি।

এর মূল কারণ হলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে ভূমিকা পালন করেছিলেন জাফরুল্লাহ। কিন্তু এই জাফরুল্লাহর পরামর্শেই যে ১৫ আগস্ট খালেদা জিয়া কেক কা”টা বন্ধ করেছেন সেটি অনেকেরই জানা নেই। শুধু তা-ই নয়, খালেদা জিয়ার ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃ”ত্যু”র পর ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানানোর জন্য উপস্থিত বিএনপি নেতাদের অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু নেতাদের একটিই কথা ছিল, পত্রিকায় হেডিং করার বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে শেখ হাসিনা আসছেন। তাঁর অনুরোধ উপেক্ষিত হলে তিনি গুলশান কার্যালয় ত্যাগ করেন। পরে কার্যালয়ের ফটক বন্ধ করে দেওয়া হলে শেখ হাসিনা সেদিন ফিরে যেতে বাধ্য হন।

ওই দিন খালেদা জিয়া খবর দিয়ে জাফরুল্লাহকে ডেকে নিলেও শেষ পর্যন্ত উপস্থিত গুলশান কার্যালয়ে কর্মকর্তারা তাঁকে দেখা করতে দেননি। বলা হয়েছিল, তিনি ঘুমিয়ে আছেন। এ প্রসঙ্গে জাফরুল্লাহ চৌধুরী কালের কণ্ঠকে জানান, ‘ওই ঘটনার বেশ কিছুদিন পর খালেদা জিয়া আবারও আমাকে ডেকে পাঠান। সেদিন গিয়ে আমি ফিরে এসেছি বলে জানালে খালেদা জিয়া বলেন, আপনি এসেছিলেন এ কথা আমাকে কেউ জানায়নি।’ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াও আমাকে বলেন, পত্রিকায় হেডিং করার জন্য প্রধানমন্ত্রী এসেছিলেন। কিন্তু আমি তাঁকে বলেছি যে সেটা হয়তো সত্য। কিন্তু আপনি তখন বলতে পারতেন যে আমার ছেলে তারেককে আমার কাছে এনে দেন। তাহলে আপনিই হেডিং হয়ে যেতেন।’

তারেক রহমানের বদলে তাঁর স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান অথবা তাঁর মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমানকে বিএনপির নেতৃত্বে আসার পরামর্শ দেওয়ায় ইদানীং জাফরুল্লাহর কর্মকাণ্ডকে আড়ালে পাগলামি বলছেন বিএনপির অনেকেও। অথচ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে ভূমিকা পালনের জন্য সরকারের কাছে এই জাফরুল্লাহই আবার ব্যাপকভাবে সমালোচিত (কারো কারো মতে শত্রুও)। ঐক্যফ্রন্ট করার কারণে তাঁর প্রতিষ্ঠিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে হামলা এবং মামলা পর্যন্ত হয়েছে। কিন্তু এসবের থোড়াই কেয়ার করেন ডা. জাফরুল্লাহ। এখনো তিনি সরকারের বিরুদ্ধেও বলেন, বিএনপির বিরুদ্ধেও বলেন। সর্বশেষ গত ২৬ জুন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বলতে গিয়ে ছাত্রদলের কয়েক নেতার বাধার মুখে পড়েন জাফরুল্লাহ। অথচ এ নিয়ে তাঁর বিরূপ কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘ওরা ছেলে মানুষ, কী বলেছে এটা বড় বিষয় নয়।’

জাফরুল্লাহ জানান, যত দিন তিনি বেঁচে থাকবেন, তাঁর চোখে ধরা পড়া অসংগতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে যাবেনই। কারণ তাঁর হারানো বা চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। তাঁর ভাষায়, ‘অধিকাংশ বুদ্ধিজীবী দলকানা হয়ে গেছেন। আবার যাঁরা আছেন, তাঁরা উদ্যোগী নন। সাহস হারিয়ে গেছে। হতাশ। বলছেন, এ দেশে আর কিছু হবে না। কিন্তু শূন্যতা পৃথিবীর ধর্ম নয়। পরিবর্তন হঠাৎ করেই হবে।’

 

উল্লেখ্য, দেশের এই সম্মানিত ব্যক্তি সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে চলেছেন। তিনি সাধারণ মানুষদের জন্য কম খরচে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়া সমাজের অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলে বেশ আলোচনায় এসেছেন তিনি। তবে তিনি সকল অনিয়ের বিরুদ্ধে সব সময় কথা বলে যাবেন বলে জানান। এদিকে, এই সম্মানিত ব্যক্তি রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে প্রায় সময় বেশ আলোচনায় এসেছেন। এমনকি তিনি বিএনপির নেতাদের নিয়েও প্রায় সময় নানা রকম বক্তব্য দেন। তবে তিনি সব সময় দেশের সকল রাজনৈতিক দলের ভালো চান।

About

Check Also

চুলের মুঠি ধরে নারী চিকিৎসককে রোগীর মারধর (ভিডিও সহ)

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আরজি কর হাসপাতালের এক নারী চিকিৎসককে হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *