নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাংসদ একেএম শামীম ওসমান। নারায়ণগঞ্জ আওয়ামীলীগের রাজনীতির তার ব্যাপক আধিপাত্য রয়েছে। আওয়ামীলীগের দুঃসময়ের কান্ডারী বলা হয় আলোচিত এই রাজনীতিবিদকে। বিভিন্ন কর্মকান্ডের কারনে আলোচিত এই রাজনীতেবিদ প্রায় আলোচনায় এসে থাকেন। সত্য বলতে না পারলে চুপ থাকেন প্রসঙ্গে নিয়ে যা বললেন সাংসদ একেএম শামীম ওসমান।
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, রাজনীতিতে এসে সত্য কথা বলতে না পারলে রাজনীতি করব কেন? কেউ যদি সত্য বলতে না পারে, চুপ করে থাকেন। সাংবাদিকরা কেন লেখেন না? এটা আপনার এলাকা, আপনার দেশ।
বুধবার (২৭ জুলাই) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া টাউন হলে বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষ মেলা ২০২২ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
শামীম ওসমান বলেন, আমরা ধান উৎপাদন করি। হয়তো খাবারের সংকট হবে না। গম ও ভুট্টা কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। ধনী দেশগুলি ইতিমধ্যে রিজার্ভ করছে। এখন গম না পেলে গম ও ভুট্টার দাম বাড়লে গরুর দুধ, ডিম, মাছ ও মাংসের দাম বাড়বে। কারণ গম ও ভুট্টা থেকে ভুসি, গো-খাদ্য ও মাছের খাদ্য উৎপন্ন হয়। তাই আমাদের সম্পদ সম্পদের সৎ ব্যবহার করা উচিৎ। আমাদের এখন এক খণ্ড জমি ফেলে রাখার সময় না। কোনো জিনিস অপচয় করার সময় না। বিনা কারণে এক মিনিটও লাইট জ্বালানোর দরকার নেই। সবকিছুই সাশ্রয় করতে হবে।
অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসমত আরার সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাইদুর ইসলামসহ নারায়ণগঞ্জের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসন ও সামাজিক বন বিভাগের আয়োজনে ৭ দিনব্যাপী এই মেলায় ৩০টি স্টলে ২৭টি নার্সারি ও দুটি মধু খামারি অংশ নেয়।
শামীম ওসমান আরো বলেন, বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়ে ছিল। অন্যান্য দেশের তুলনায় এখনো ভালো আছে। যাইহোক, আমাদের এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার কোনো কারণ নেই। আমাদের এটা কাটিয়ে উঠতে হবে। আর এ জন্য নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে।
নতুন প্রজন্মকে তাদের পিতামাতার প্রতি তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।এরপর যে সমাজে থাকে, সেই সমাজের প্রতি দায়িত্ব পালন করা। যাতে মৃত্যুর আগে বলতে পারেন, আমি আমার দেশের জন্য একটা ভালো কাজ করেছি। সাড়ে চার কোটি তরুণ যদি একটি করে ভালো কাজ করে তাহলে এ দেশকে কেউ রুখতে পারবে না।
তিনি বলেন, আমি জার্মানির চেম্বার অব কমার্সের লোকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম বিশ্বযু/দ্ধের পরও কীভাবে আপনি নিজেকে তুলে নিতে পেরেছেন? তারা বললো আমরা যুদ্ধের পর যখন ক্ষতবিক্ষত তখন ঠিক করেছিলাম দুটো রুটির জায়গায় একটা রুটি খাবো। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আরেকটি রুটি সংরক্ষণ করব। সেই জার্মানি আজ ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ। আমার মনে হয় এটা নিয়েও আমাদের ভাবতে হবে। আমরা অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ভালো অবস্থানে আছি। এর মেইন সোলজার হবে ইয়াং জেনারেশন যারা সব আন্দোলন করেছে। তাদেরই করতে হবে। কারণ তারাই এখন যো/দ্ধা।
তিনি বলেন, দুবাই মরুভূমির দেশ হলেও এখন সবুজ হয়ে উঠছে। আর আমাদের সবুজ শ্যামল দেশ দিন দিন মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। লিঙ্ক রোড দিয়ে এলাম। রাস্তার পাশের যে অবস্থা, দুপাশে ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকে, মরা গরুও পড়ে থাকে। মানুষ এগুলো দেখে এবং প্রশ্ন করে। ময়লা-আবর্জনার কারণে রাস্তার পাশের ড্রেন বন্ধ হয়ে যাবে। জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। আর এতে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ম্যাজিস্ট্রেট যারা পরিবেশ নিয়ে কাজ করেন তাদের এগুলো দেখা দরকার।।
মীর জুমলা রোড বন্ধ। চৌকি বসিয়ে টাকা নেওয়া হয়। এসব কারণে মানুষ আমাদের গালি দেয়। প্রশাসনে যারা আছেন তারা কাজ করার পর বদলি হয়ে যাচ্ছেন। আমাদের কাজ বলা আর প্রশাসনের কাজ করা। রাজনীতিতে এসে সত্য বলতে না পারলে রাজনীতি কেন করব। কেউ যদি সত্য বলতে না পারেন চুপ থাকেন। সাংবাদিকরা লেখেন না কেন। এটা আপনার এলাকা আপনার দেশ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
শামীম ওসমান বলেন, বন বিভাগ থেকে বিনামূল্যে গাছ বিতরণ করা হয়। হয়তো আমার নামে কিছু এসেছে। ময়লা ফেলার স্থান গুলোতে গাছগুলো রোপণ করবে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা। এতে গাছও হবে, সৌন্দর্যও বাড়বে। দেখতে খারাপ লাগবে না।
তিনি বলেন, এখন অনেকেই ছাদে ও বারান্দায় গাছ লাগান। দেখতে ভালো লাগছে। তাছাড়া গাছ শুধু পরিবেশকে সুন্দর করে না, ফলনও দেয়। এটি আপনাকে অনেক রিটার্ন দেবে। এক সময় এই শীতলক্ষ্যার পানি খেয়েছি এত পরিষ্কার ছিল। আজ এ পানিতে মাছ কেন সাপও হয় না। আমরাই এগুলো নষ্ট করেছি। আমাদের এটা পরিবর্তন করতে হবে।
প্রসঙ্গত, দেশের সংকটের সময় সবাইকে নিজের জায়গা থেকে দায়িত্ব নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন আলোচিত এই সাংসদ শামীম ওসমান। অন্যান্য দেশের মত আমাদের রির্জাভ নেই সেই কারনে আমাদের সম্পদের সৎ ব্যবহার করা উচিত বলে তিনি জানান।