সৌদি আরবের নাগরিক আবু নাসের (৬০) বাংলাদেশে তার কর্মচারীর গ্রামে এসেছেন আবহমান গ্রামের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি দেখতে। বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) সৌদি আরবের এই নাগরিক আট দিনের সফরে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের মঠবাড়ি গ্রামে আসেন। এই গ্রামের দুই ভাই দেলোয়ার হোসেন (৩০) ও মনির হোসেন (২৭) সৌদি আরবের জেদ্দায় আবু নাসের ও তার ভাইয়ের আরেকটি বাড়ির দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন। কর্মচারী হওয়া সত্ত্বেও কর্মীদের সততা, কাজের দক্ষতা এবং পরিবারের সদস্যের মতো সহাবস্থান দেখে মুগ্ধ করেছে ওই সৌদি নাগরিককে। যার ফলশ্রুতিতে তাদের গ্রামে আসা বলে জানিয়েছেন আবু নাসের।
দেলোয়ার হোসেন (৩০) ও মনির হোসেন (২৭) ময়মনসিংহের ত্রিশালের মঠবাড়ি ইউনিয়নের মঠবাড়ি গ্রামের কৃষক মিন্টু মিয়ার দুই ছেলে। মনির হোসেন ছয় বছর আগে এবং তার বড় ভাই দেলোয়ার হোসেন চার বছর আগে কাজের জন্য সৌদি আরবে যান। সেখানে এক ভাইকে জেদ্দায় আবু নাসেরের বাড়ি দেখাশোনার জন্য নিযুক্ত করা হয়েছিল এবং অন্য ভাইকে আবু নাসেরের ভাইয়ের বাড়িতে। যত্নশীল দায়িত্ব পালনের সময় মালিক এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে একটি আন্তরিক এবং প্রেমময় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই ভালোবাসার টানে গত ৬ সেপ্টেম্বর আট দিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন কর্মচারীদের ভালোবাসার সেই মানুষটি। যদিও দেলোয়ার হোসেন ও মনির হোসেন এখনও সৌদি আরবেই রয়েছেন।
এদিকে আবু নাসের দেশে আসার খবরে দেলোয়ার-মনিরের গ্রামে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। সৌদি মুনিবকে স্বাগত জানাতে ঢাকার বিমানবন্দরে ছুটে আসেন স্বজনরা। ফুল দিয়ে তাকে বরণ করে গ্রামের পথ ধরে মঠবাড়ি গ্রামে বাড়িতে নিয়ে আসেন। গ্রামীণ জনপদের রাস্তা-ঘাট, জীবন-জীবিকা, সবজির ক্ষেত, গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরগি পালন, মাছ ধরার বিভিন্ন পদ্ধতি, গ্রামের অভাবী মানুষের সামাজিকতা ও আতিথেয়তা ইত্যাদি। এই জনপদের নানা দৃশ্য তাকে মুগ্ধ ও উচ্ছ্বসিত করেছে গ্রামের কালচার ও সার্বিক চিত্র তুলে ধরাসহ সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলার জন্য দেলোয়ার-মনিরের পরিবারের পক্ষ থেকে নিয়োজিত করা হয়েছে দু’ভাষী দেলোয়ারের চাচা আব্দুস সাত্তারকে।
মঠবাড়ি গ্রামে আবু নাসেরের আগমনকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ তাকে এক নজর দেখার জন্য ভিড় জমায়। সৌদির জীবন ও বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসার কথাও বলছেন তিনি।
গ্রামীন মানুষের ভালোবাসায় মুগ্ধ সৌদি নাগরিক আবু নাসের বলেন, গ্রামের পথ চলা আর প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য আমাকে অনেক আনন্দ দেয়। এখানকার জীবন খুব ভালো। সবাই কাজ করে। আছে মুরগির খামার,পশুর খামার। তারা নিজেরাই মাছ চাষ করে। মানুষের নিত্যদিনের সব চাহিদা এই গ্রামের মাটিতেই হয়। কোনো তরকারি বা সবজির জন্য হোটেলে যেতে হবে না। এটা খুব ভালো লাগছে এবং আমি এটা উপভোগ করছি।
তিনি বলেন, ‘দেলোয়ার ও মনির আমাদের খুব আস্থাভাজন। আমি তাদের খুব ভালবাসি. তাদের দীর্ঘ কাজের অভিজ্ঞতার কারণে তাদের সততা এবং দক্ষতার কারণে আমরা তাদের বিশ্বাস করি। তাদের ভালোবাসায় এখানে আসতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। তাদের পরিবারের সদস্যরা খুব ভালো। সৌদিতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের তৎপরতা খুবই ভালো। তারা অনেক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। আবু নাসের আরও জানান, মেলোয়ার ও মনিরকে আমরা নিজেদের পরিবারের সদস্যদের মতোই মনে করি। নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসি। তারাও আমাদের অনেক ভালোবাসে।
দেলোয়ার ও মনিরের বাবা মিন্টু মিয়া বলেন, আমার দুই ছেলে তাদের মালিক এমন অজপাড়া গাঁয়ে গরিবের বাড়িতে বেড়াতে আসবেন, এটা আমার কল্পনাতেও ছিল না। সৌদি মনিবের আগমনে আমরা গর্বিত। তার মতো একজন মানুষ আজ আমাদের বাড়িতে সততা, আন্তরিকতা এবং আমার ছেলেদের প্রতি ভালবাসা নিয়ে আজ আমাদের বাড়িতে অবস্থান করছেন। আমরা চেষ্টা করছি, তিনি যেন বাংলাদেশের মানুষ সম্পর্কে ভালো ধারণা নিতে পারেন। তাদের সাথে আমাদের আত্মিক সম্পর্ক দৃঢ় হোক।’