চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে আরেক সচিবকে। রেলওয়ে সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবিরের মেয়াদ ২০ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা ছিল। এর আগে ১৫ ফেব্রুয়ারি তাকে এক বছরের চুক্তি দেওয়া হয়। সচিব হিসেবে ড. মোঃ হুমায়ুন কবির যে অনেক দক্ষতা দেখিয়েছেন তার কোন প্রমাণ নেই। তার কোনো কর্মকাণ্ডে জনসাধারণের উৎসাহের কোনো নজির নেই। ছাত্রজীবনে তার রাজনৈতিক পরিচয় বিতর্কিত। তার অনেক সহকর্মীর দাবি, তিনি ছাত্রজীবনে বিরোধী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তারপরও তিনি আরও এক বছরের জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। ফলে মোট সচিবের প্রায় অর্ধেকই এখন চুক্তিতে কর্মরত। এ নিয়ে সচিবালয়ে তোলপাড় চলছে।
একজন সচিবকে চুক্তিতে নিয়োগ দিলে অন্তত এক ডজন লোককে পদোন্নতি থেকে আটকানো হয়। এখন ১৫তম ব্যাচ সচিব হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। প্রশাসন ক্যাডারের অনেকগুলো ব্যাচ রয়েছে যারা এখনও পর্যন্ত পদোন্নতির অপেক্ষায় আছেন। তাছাড়া ১০, ১১ এবং ১৩ ব্যাচের অনেক যোগ্য কর্মকর্তা রয়েছেন যারা সচিব হওয়ার অপেক্ষায়। এই পর্যায়ে নির্বাচনের পর পর নতুন সরকার রেলওয়ের সচিবকে কোন যোগ্যতায় চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিলেন তা নিয়ে সচিবালয়ে বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে প্রশাসনের শীর্ষ সব কর্মকর্তাই চুক্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত। আর এই চুক্তির কারণে চিলে চ্যাপটা হয়েছে প্রশাসন। চুক্তির ভারে প্রশাসন যান এখন চলতে ফিরতে পারছে না।
বর্তমানে চুক্তিতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আখতার হোসেন, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বা এনবিআরের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোঃ রহমাতুল মুনিম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্বাহী চেয়ারম্যান সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় শেখ ইউসুফ হারুন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব গোলাম মোঃ হাসিবুল আলম, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আব্দুস সালাম, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব জনাব মোস্তাফিজুর রহমান, রাষ্ট্রপতির সচিব সম্পদ বড়ুয়া, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে সংযুক্ত ওয়াহিদুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত সচিব জনাব মোকাম্মেল হোসেন, ইরাকে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ফজলুল বারী, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, গৃহায়ন পূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান যিনি সচিব পদমর্যাদায় আছেন জনাব মো. আনিসুর রহমান মিয়া।
এ ছাড়া এডিবির বিকল্প নির্বাহী পরিচালক ফাতেমা ইয়াসমিন এবং সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক ওয়াশিংটন থেকে পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস এখন চুক্তির তালিকায় রয়েছেন। কারণ, ডাঃ কায়কাউসের পদত্যাগপত্র এখনো বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় অনুমোদন পায়নি।
গুরুত্বপূর্ণ সব মন্ত্রণালয়সহ অর্ধেক সচিব এখন চুক্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন। আর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের এই সিঁড়িতে পিছিয়ে পড়ছে মেধাবী ও দক্ষ শ্রমিকরা। নতুন করে হুমায়ুন কবীরের চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া নিয়ে সচিবালয়ে প্রশ্ন উঠেছে, বিতর্ক উঠেছে, বিষয়টি সমালোচিত হচ্ছে।