হেফাজতে আবারো বইছে শোকে ছায়া। এবার পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিয়েছেন হেফাজতের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। ইতিমধ্যে তার এই মৃত্যু নিয়ে শুরু হয়েছে নানা ধরনের আলোচনা। জানা গেছে হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বুধবার থেকে অসুস্থবোধ করছিলেন। বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) সকাল ৮টার দিকে তিনি স্ট্রোক করেন। সাড়ে চার ঘণ্টা পর দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাকে চট্টগ্রাম শহরের সিএসসিআর হাসপাতালে নিলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন হেফাজতে ইসলামের চট্টগ্রাম মহানগরের প্রচার সম্পাদক আ ন ম আহমদ উল্লাহ।
তিনি বলেন, ‘বুধবার থেকে হুজুর অসুস্থবোধ করেন, রক্তচাপও বেড়ে যায়। এরপরও ভালো ছিলেন। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে স্ট্রোক করেন। নাকে-মুখে ফেনা চলে আসে। উপস্থিত ছাত্ররাও এ অবস্থা দেখে ঘাবড়ে যায়। এরপর তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে চট্টগ্রাম সিএসসিআর হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।’
সিএসসিআর হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল চিকিৎসক এমজাদ হোসাইন বলেন, ‘দুপুর সাড়ে ১২টায় হুজুরকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। আনার পর আমরা ওনাকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। তিনি কিডনি, ডায়াবেটিসসহ জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন।’
আ ন ম আহমদ উল্লাহ আরও বলেন, ‘নিকটাত্মীয়দের দেখানোর জন্য আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর লাশ গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে। হাটহাজারী মাদ্রাসার যে মজলিসি শুরা কমিটি আছে, তারা ইতোমধ্যেই বৈঠকে বসেছেন। তারা সিদ্ধান্ত নেবেন, জানাজা-দাফন কোথায় হবে।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষা সচিব ও শায়খুল হাদিস ছিলেন, এখানেই তার জানাজা ও দাফন হবে। তিনি করোনার টিকা নিয়েছিলেন, চোখেরও সমস্যা ছিল। চোখের অপারেশন করা হয়েছিল। এ ছাড়া সব ঠিকঠাকই ছিল। তবে বুধবার থেকে তিনি অসুস্থবোধ করেন।’
হেফাজতের একজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, জুনায়েদ বাবুনগরী ১৯৫৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতকাণ্ডের পরদিন তিনি গ্রেফতার হলে আলোচনায় আসেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস পদে নিয়োজিত ছিলেন।
গত বছর হেফাজতের আমির আল্লামা আহমদ শফী মারা যাওয়ার পর ওই বছরের ১৫ নভেম্বর সম্মেলনে বাবুনগরীকে আমির করে হেফাজতের ১৫১ সদস্যের নতুন কমিটি গঠিত হয়েছিল। পরে চলতি বছরের ২৫ এপ্রিল নানা কারণে এই কমিটি ভেঙে দিয়ে পাঁচজনের আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এই কমিটির নেতৃত্বেও ছিলেন বাবুনগরী। এ কমিটি গত ৭ জুন ৩৩ জনে উন্নীত হয়।
শিক্ষাজীবনে মেধার স্বাক্ষর রেখে গেছেন বাবুনগরী। তার শিক্ষা জীবন সম্পর্কে খোজ নিয়ে জানা যায় হাটহাজারী মাদ্রাসায় দাওরায়ে হাদিস পড়াশোনা শেষ করে হাদিসের উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে ১৯৭৬ সালের দিকে তিনি পাকিস্তানের করাচিতে দারুল উলুম ইসলামিয়াতে ভর্তি হন জুনায়েদ বাবুনগরী। শিক্ষকতা জীবনে তিনি দীর্ঘসময় হাটহাজারী মাদ্রাসায় কর্মরত ছিলেন। ২০১০ সালে নারী উন্নয়ন নীতিমালার বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলাম গঠিত হলে তিনি সংগঠনটির মহাসচিবের দায়িত্ব পান।