মোহাম্মদ এ আরাফাত হলেন বাংলাদেশের একজন সাবেক ক্রিকেটার এবং সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। এছাড়াই তিনি একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। বিভিন্ন সময় তিনি দেশের বিভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে তার বক্তব্য প্রধান করে থাকেন। মোহাম্মদ এ আরাফাত তার প্রতিষ্ঠানের নাম সুচিন্তা ফাউন্ডেশন রেখে মানুষকে সব বিষয়ে সুচিন্তা কররা জন্য উৎসাহী করেছেন। সম্প্রতি তিনি তার এক বক্তব্যে বলেছেন ‘পাকিস্তান আমল ভালো ছিল’ এ কেমন মানসিক প্রতিবন্ধিতা?
কেউ বলবে না বাংলাদেশ সব সমস্যার সমাধান করেছে। পাশ্চাত্যের উন্নত দেশগুলোও ‘সব’ সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। বাংলাদেশ এখনো ‘উন্নত’ দেশের জায়গায় পৌঁছাতে পারেনি। আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে চলে এসেছি। নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে। বিদেশিদের কাছ থেকে টাকা ধার ও দান না করে আমরা নিজেদের তহবিল দিয়ে পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্পে অর্থায়ন করার যোগ্যতা ও সামর্থ্য অর্জন করেছি। কিন্তু এখনও যেতে একটি দীর্ঘ পথ আছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০৪১ সালে আমরা উন্নত দেশ হতে পারি, কিন্তু তারপরও সব সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ, তা হয় না। তবে আমরা যেমন ২০ বছর আগের তুলনায় তুলনামূলকভাবে ভালো আছি, ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত হলে দেশের মানুষ বর্তমানের চেয়ে ভালো থাকবে।
বাংলাদেশে ২০ বছর আগেও অনেকে লবণ আনতে ‘পান্তা ফুরাতো’। এখন এই বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেও আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও পুষ্টিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারিনি। অনেক ক্ষেত্রে এখনও ঘাটতি রয়েছে।
কয়েকদিন আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশের সবাই স্বর্গে আছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে তার বক্তব্যের সমালোচনা করেছি। কারণ এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বর্তমান বাস্তবতায় পৃথিবীর কোনো দেশই স্বর্গ নয়। এমনকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একদিন পর পরিষ্কার করে বলেছেন, জ্বালানির দাম বাড়ায় নিত্যপণ্যের দামও বেড়েছে, মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ আছে, কিন্তু উন্নতি হয়েছে এবং আছে।
দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা অর্থনীতিবিদ এবং বিশিষ্ট উন্নয়ন অর্থনীতিবিদ জেফরি শ্যাস, যিনি দুই দশক ধরে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন এবং বর্তমানে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে শেখ হাসিনার অর্জনের প্রশংসা করছেন! তিনি বলেন, ‘২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অগ্রগতিতে বিশ্বে প্রথম হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের একজন মন্ত্রী সংসদে বলেন, মোট জিডিপির দিক থেকে আমরা সিঙ্গাপুরকে ছাড়িয়ে গেছি। সত্যি, কিন্তু মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে আমরা এখনও সিঙ্গাপুরের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। সিঙ্গাপুর একটি উন্নত দেশ, আমরা শুধু উন্নয়নের পথে। যদিও অনেকেই না বুঝেই এই বিষয়টি নিয়ে ট্রোল করেন। করোনা মহামারি ও যুদ্ধের বাস্তবতায় আজ বিশ্ব মন্দায় বিশ্বের উন্নত দেশগুলো জ্বালানি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে হিমশিম খাচ্ছে, বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। গত ১৩-১৪ বছরে অর্থনীতি যদি শক্ত অবস্থানে না থাকত তবে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা অসম্ভব ছিল।
যা-ই হোক, শত প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু কিছু মানুষের মানসিকতার বিকাশ হচ্ছে না! সব অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশ পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও এখনও কেউ কেউ মনে করেন পাকিস্তান ভালো ছিল। পাকিস্তানের শিক্ষিত শ্রেণী অন্তত বাংলাদেশের মতো পাকিস্তান করার দাবি জানিয়ে আসছে। আর আমাদের বাংলাদেশের কিছু মানসিক প্রতিবন্ধী মানুষ উল্টো কথা বলছে। দুঃখজনক!
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এদেশ স্বাধীন করা হয়েছে। পাক হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে এদেশের বীর সন্তানরা বুকের তাজা রক্ত ধেলে দিয়ে ছিনিয়ে এনেছে স্বাধীনতা। পাকিস্তানিরা বাংলার মানুষের উপর চালিয়েছিল খুব দুঃখজনক আক্রমণ। এমনটা পৃথিবীর ইতিহাসে সত্যিই বিরল। বাংলার সন্তানরা বাংলাকে স্বাধীন করে বাংলাকে ঠাই দিয়েছে বিশ্ব মানচিত্রে।