সকল রোগীকে ছাড়পত্র দিয়ে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেল দেশের একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী রাজধানীর বাড্ডার বাড্ডার সাঁতারকুল এলাকার ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী সেবা বন্ধ রয়েছে বলে দাবি করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে মেডিকেল কলেজ শাখার সব কার্যক্রম চলছে।
সোমবার ইউনাইটেড হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা আরিফুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আমরা সাঁতারকুল শাখার সব কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি। জরুরি ও বহিঃবিভাগে কোনো রোগী চিকৎসা দেওয়া হচ্ছে না। আর হাসপাতালে যে সব রোগী ভর্তি ছিল তারা সবাই সুস্থ হওয়ার পথে ছিল, তাই তাদেরকে রিলিজ দেওয়া হয়েছে। রোগীদের অন্য কোথাও স্থানান্তর করা হয়নি।
আরিফুল হক আরও বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা আজ সোমবার থেকে সাঁতারকুল ইউনাইটেড হাসপাতাল শাখার সব কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি। তবে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ চালু আছে। এছাড়া গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালেরও সব কার্যক্রম চালু আছে। কিন্তু আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখছি, গুলশান শাখার ইউনাইটেড হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেছে, যা সঠিক নয়।
এর আগে লাইসেন্স নবায়ন না হওয়ায় হাসপাতালটির কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে।
রোববার স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মইনুল আহসান স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে এ আদেশ দেন আবু হোসেন মো. হাসপাতাল পরিদর্শনকালে হাসপাতালের লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়া যায়নি বলে জানা গেছে।
অফিস আদেশে বলা হয়, সম্প্রতি শিশু আয়ান আহমেদের (৫+ বছর) মৃত্যুর বিষয়ে তার বাবার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) এর নির্দেশে গত ১০ জানুয়ারি হাসপাতাল পরিদর্শন করা হয় ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরিদর্শনকালে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া লাইসেন্স দেখাতে ব্যর্থ হয়।
এছাড়া দপ্তরের অনলাইন ডাটাবেজ পর্যালোচনা এবং পরিদর্শনকালে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখা যায় যে, ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নামে কোনো প্রতিষ্ঠান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিকট নিবন্ধন/লাইসেন্স প্রাপ্তির জন্য কখনোই অনলাইন আবেদন করেনি। প্রতিষ্ঠানটি কোনো প্রকার আইনানুগ নিবন্ধন অথবা লাইসেন্স ব্যতিরেকে চিকিৎসাসেবা নির্মাণাধীন ভবনে পরিচালনা করে আসছে, যা সরকারের প্রচলিত আইনের পরিপন্থী। তাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশক্রমে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে এ আদেশ জারি করা হলো।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর একটি বেসরকারি স্কুলের নার্সারির ছাত্র শি”শু অয়নকে খতনার জন্য সাতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এ সময় তাকে জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়ায় খতনা করানো হয়।
অপারেশনের কয়েক ঘণ্টা পর জ্ঞান না ফিরলে অয়নকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে পাঠানো হয়। ৮ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর রোববার (৭ জানুয়ারি) মধ্যরাতে অয়নকে মৃ”ত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। সোমবার রূপগঞ্জে তাকে দাফন করা হয়।
শিশু অয়ন আহমেদের মৃত্যুতে ভুল চিকিৎসার অভিযোগে গত ৯ জানুয়ারি রাজধানীর বাড্ডা থানায় মামলা করেন অয়নের বাবা মো. শামীম আহমেদ।
এদিকে অয়নের মৃত্যুতে পরিবারকে কেন ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে সোমবার রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।