বাংলাদেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি সামনে বেশ কয়েকটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যার মধ্যে একটি হলো নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া। অন্যদিকে দলটির সভানেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা এবং ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারেক জিয়াকে দেশে আনা। তবে সেটা আপাতত সম্ভব না হলেও বিএনপি এখন একটি দাবিতে স্থির রয়েছে সেটি হল নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার ব্যবস্থা করা। এদিকে বিভিন্ন দাবিতে বিএনপি সমাবেশ এবং আন্দোলন করে যাচ্ছে।
বিএনপি দাবি নিয়ে বলছে, এই দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না। যে দলটি এই এক দফা দাবিতে স্থির হয়ে রয়েছে, তারা সে কারণে নির্বাচন কমিশনের সংলাপেও অংশ নিচ্ছে না। এই দাবির ভিত্তিতে বিএনপি এখন নানাভাবে নিজেদের ভিত্তি মজবুত করার চেষ্টা করছে।
একদিকে দেশের ভেতরে নানা ইস্যুতে রাজপথে থাকার চেষ্টা চলছে। অন্যদিকে বিদেশিদের সঙ্গে বাড়ছে যোগাযোগ। এক দফা দাবি পূরণ হলেই চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হবে বলে মনে করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন ভোটারদের সব আস্থা ও আস্থা ইতিমধ্যেই পুরোপুরি নষ্ট করে দিয়েছে। তাই ক্ষমতাসীন দলের অধীনে ভবিষ্যতে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দেয় বিএনপি। ঘোষণার পর থেকে তারা স্থানীয় নির্বাচনসহ অন্য কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়নি। নির্দলীয় সরকারের দাবি পূরণ করেই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচনে যাবে বলে দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে। যারা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন তাদের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
দলটির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের টোপ নিলে বিএনপি আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে কখনোই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তারা বলছেন, নির্দলীয় সরকার ছাড়া অন্য কোনো আলোচনা নেই। এরই অংশ হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের অনুষ্ঠিত সংলাপে অংশ নেয়নি বিএনপি।
বিএনপি শুরু থেকেই সব ধরনের নির্বাচনকেন্দ্রিক সংলাপ বয়কট করে আসছে। ইসি গঠন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আনুষ্ঠানিক সংলাপকে বাদ দিয়ে শুরু হয়েছে। এরপর ইভিএম নিয়ে আলোচনা করতে ইসিতে যায়নি বিএনপি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে এই নির্বাচন কমিশনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। দ্বিতীয়ত, ভোট চুরির পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সরকার এই কমিশনকে দলীয় খেলোয়াড় হিসেবে নিযুক্ত করেছে। প্রথম ও শেষ কথা, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা নিজের পায়ে কুড়াল মা”রার সমান।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এক ধরনের চাপ রয়েছে। এটাকে তাদের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বিএনপি। বিএনপির পক্ষ থেকে কূটনৈতিক যোগাযোগও বাড়ানো হয়েছে। এদিকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ে সরকারের বিরুদ্ধে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছে বিএনপি।
বিএনপির নীতিগত অবস্থান হলো, আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে তারা সরকার বা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনায় নামবে না। আলোচনা হবে শুধুমাত্র নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে। তাদের প্রধান দাবি এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারবে না বলে মনে করে বিএনপি। তা ছাড়া আগের কমিশনের মতো বর্তমান নির্বাচন কমিশনও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পরিকল্পনার বাইরে যেতে পারে না।
নির্বাচনকালীন সরকারের সমস্যা রাজনৈতিকভাবে সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ইসির সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করে কোনো লাভ হবে না বলে মনে করছে বিএনপি। একটি অবাধ নির্বাচনের জন্য বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, তারপরে একটি অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। সবার মতামতের ভিত্তিতে তারা নির্বাচন কমিশন গঠন করবে, সেই কমিশনের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে সংলাপ করবে বিএনপি।
এই অবস্থান থেকে ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির ডাকা সংলাপে অংশ নেয়নি বিএনপি। এর ভিত্তিতে রাজপথে বৃহত্তর সরকারবিরোধী ঐক্য গড়ার চেষ্টা করছে বিএনপি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা বারবার বলছি, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, অতীতেও হয়নি। বিএনপি এমন প্রহসন নির্বাচনে যাবে না। নির্বাচনের আগে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে, সংসদ ভেঙে দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হলেই বিএনপি অংশ নেবে।
উল্লেখ্য, বিএনপি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দল গোছানোর কাজ অন্তরালে করে চলেছে। তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করছে। তবে তারা নির্বাচনে যাবে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলেনি দলটির পক্ষ থেকে। এদিকে বিএনপির একটাই দাবি বর্তমান সরকারকে নির্দলীয় নির্বাচন দিতে হবে। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।