গতকাল ছিল বাংলাদেশের জাতীয় শোক দিবস। আর এই উপলক্ষ্যে সারা দেশে আওয়ামীলীগের তরফ থেকে আয়োজন করা হয় নানা আয়োজন। আর এই আয়োজনই যেন রণক্ষেত্রে পরিনীত হয়েছিল গতকাল বরগুনাতে।
বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ থামাতে লাঠিচার্জ করায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মহরম আলীকে তিরস্কার করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু।
এর পরপরই এমপির সামনে ছাত্রলীগ নেতার বড় ভাইকে মারধর করে পুলিশ। এসময় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বেধড়ক মারধরের কারণ জানতে চাইলে এমপি ও পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। সোমবার দুপুর ১টার দিকে জেলা আর্ট একাডেমির সামনে এ ঘটনা ঘটে।
এর ঘণ্টাখানেক আগে জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে এমপির সামনে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে পিটিয়ে আহত করে।
উপস্থিত ছিলেন বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, বরগুনা পৌর মেয়র কামরুল আহসান মহারাজ, জেলা যুবলীগের সভাপতি রেজাউল করিম অটম প্রমুখ।
জেলা যুবলীগের সভাপতি রেজাউল করিম পরমাণু জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে এমপি শম্ভু জেলা আর্ট একাডেমির সামনে আসেন। এ সময় তিনি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলীর কাছে বেত্রাঘাতের কারণ জানতে চান।
তখন মহরম আলী বলেন, স্যার আমাদের গাড়ি ছাত্রলীগ ভেঙে দিয়েছে। আমরা তাদের ফুল দেইনি। আমাদের গাড়ি কেন ভেঙেছে তার জবাব দিতে হবে।
এ সময় সংসদ সদস্য বলেন, আপনি কী করবেন? আটকে গেছি? তুমি তাদের বাধা দিলে না কেন?’ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি মামলা করব।’
এ সময় আরেক অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য এসএম তারেক রহমান বলেন, স্যার, আমরা যদি ধাক্কা দিতে যাই তাহলে আমাদের শক্তি প্রয়োগ করতে হবে, সেটা আপনার জন্য ভালো হবে না।
এমপি ও ছাত্রলীগ নেতাদের সঙ্গে পুলিশের তর্কাতর্কি চলাকালে সেখানে উপস্থিত জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সবুজ মোল্লার বড় ভাই জসিম মোল্লা এমপি শম্ভুর কাছে পুলিশের লাঠিচার্জের অভিযোগ করেন।
একপর্যায়ে এমপির সামনে জসীম মোল্লা পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লে এএসপি মহরম তাকে হুমকি দিয়ে বলেন, গাড়ি ভাঙচুরের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জবাবে জসিম বলেন, আপনি মামলা করলেন কেন, মারধর করলেন কেন?
তিনি এ কথা বলার সাথে সাথে ডিবি পুলিশ এমপির সামনেই জসিম মোল্লাকে মারধর করে ধরে নিয়ে যেতে চায়। এ সময় এমপি আবারো বলেন, আপনি যদি তাকে মেরে থাকেন তাহলে তাকে ছেড়ে দিন। পরে জসিম মোল্লাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
এএসপি মহররম আলী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) এসএম তারেক রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তারা ফোন ধরেননি। পরে, আমি অফিসিয়াল হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একটি বার্তা পাঠালাম, কিন্তু কোন উত্তর নেই।
এ ঘটনায় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, “পুলিশ বলেছে গাড়ি ভাংচুরকারীকে চিনতে পেরেছে। আমি বলেছি, কে ভাংচুর করেছে তাকে দেখান। আমি তাকে আপনাদের হাতে তুলে দেব। আসলে তাদের (পুলিশ) উদ্দেশ্য ছিল ছাত্রলীগের ছেলেদের হত্যা করা। আমি তাদের মারতে চেষ্টা করলাম।কিন্তু এত পুলিশ আসছিল যে হুকুম শোনার কেউ ছিল না।
সাংসদ আরও বলেন, “সোমবার বিকেলে জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে পুলিশ নির্বিচারে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মারধর করে। সেখানে পুলিশ কর্মকর্তা মহরম ছিলেন। তিনি অনেক ভুল করেছেন। আমরা চাই তার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খতিয়ে দেখুক এবং আইনের আওতায় আনুক। তাকে বিচার করতে।
“আমি যেখানে আছি সেখানে সে এমন কাজ করতে পারে না। আমি তাকে মারতে নিষেধ করেছি। তারা (পুলিশ) আমার কথা শোনেনি। ডিআইজি অতিরিক্ত জিআইজিকে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পাঠিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, সেদিন ঘটনার সুত্রপাত হয় মুলত সোমবার দুপুর ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধুর ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কমপ্লেক্সে তার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে ফেরার সময়। শিল্পকলা একাডেমির সামনে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায় পদবঞ্চিত কয়েকজন। এ সময় দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।