ভারতের প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক নেতার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে বিপুল স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ভারতীয় কংগ্রেসের রাজ্যসভার সদস্য ধীরাজ সাহুর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে ৩৫৩ কোটি টাকা।
রোববার রাতে রুপি গোনা শেষে ভারতীয় আয়কর দপ্তর থেকে রুপির এই পরিমাণের তথ্য সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করা হয়েছে।
মোট ১৭৬টি ব্যাগে এবং ৩টি ব্যাংক থেকে এই বিপুল পরিমাণ রুপি উদ্ধার হয়েছে। ৪০টি মেশিন আনা হয়েছে রুপি গুনতে। ৯ টি দল টানা ৫ দিন ধরে রুপি গণনার কাজ করেছে। দলে ব্যাংক ও পুলিশের ২৪ জন কর্মকর্তা ও সদস্য ছিলেন। নোটবন্দির পরও যে কত টাকার দুর্নীতি হয়েছে, তা এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট বলে কটাক্ষ করেছেন বিজেপি নেতারা।
প্রসঙ্গত, বুধবার ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশায় কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ ধীরাজ সাহুর বাড়িতে হানা দেয় আয়কর বিভাগ। তল্লাশির প্রথম দিনে আলমারি ও বাক্স থেকে টাকার বান্ডিল উদ্ধার করা হয়। এরপর টাকা গুনতে ব্যাংক থেকে কাউন্টিং মেশিন আনা হয়। আয়কর কর্মকর্তা থেকে শুরু করে প্রশাসনের কর্মীরা টাকা গুনতে শুরু করেন। তার পর টানা কয়েকদিন ধরে গণনার শেষে টাকার যে পরিমাণ দাঁড়াল, তা শোনে সবারই চোখ কপালে উঠে।
এদিকে কংগ্রেস দাবি করেছে, সাংসদের ব্যবসার সঙ্গে দলের কোনও যোগসূত্র নেই। দলের তরফে সিনিয়র নেতা জয়রাম রমেশ এক্স (প্রাক্তন টুইটার হ্যান্ডেল) এ লিখেছেন, ধীরাজ সাহুর ব্যবসার সঙ্গে জাতীয় কংগ্রেসের কোনো সম্পর্ক নেই। তার বাড়ি থেকে কিভাবে এত টাকা উদ্ধার হলো তা কেবল সংশ্লিষ্ট সাংসদই বলতে পারবেন।
আয়কর দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওড়িশার একটি মদ উৎপাদনকারী সংস্থা এবং এর সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন দোকানের অ-আয় সম্পদের ভিত্তিতে এই অভিযান চালানো হয়। ঝাড়খণ্ডের বোকারো এবং রাঁচিতে অভিযান চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া ওড়িশার সম্বলপুর ও সুন্দরগড়েও তল্লাশি চালানো হচ্ছে। ঝাড়খণ্ডের সাংসদ ধীরাজ সাহু এই দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধীরাজ সাহু ১৯৫৫ সালে রাঁচিতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা রায়সাহেব বলদেব এবং মা সুশীলা দেবী। ধীরাজের বাবা দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ছাত্র রাজনীতিতে ধীরাজের উত্থান যুব কংগ্রেসের হাত থেকে কংগ্রেসের সাথে তার পরিবারের সংযোগের কারণে।
১৯৭৭ সালে ধীরাজ রাজনীতির জগতে প্রবেশ করেন। ধীরাজের ভাই শিবপ্রসাদ সাহুও একজন কংগ্রেস নেতা। রাঁচি থেকে দু’বার সাংসদ হয়েছেন তিনি। ধীরাজ স্নাতক পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। তার পরিবার ঝাড়খণ্ডের লোহারদাগায় থাকে। ধীরাজ ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো রাজ্যসভার সাংসদ হন। তিনি ২০১৮ সালে দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হন।
২০১৮ সালে রাজ্যসভা নির্বাচনের জন্য ধীরাজকে যে হলফনামা দিতে হয়েছিল, তাতে তিনি বলেছিলেন যে তার সম্পত্তির পরিমাণ ৩৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এর বাইরে ধীরাজ জানান, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তার আয় ছিল এক কোটি টাকা।
ধীরাজের হলফনামা অনুযায়ী, তাঁর নামে মোট দেড় কোটি টাকার চারটি গাড়ি রয়েছে। ৮৭ লাখ টাকার একটি বিএমডব্লিউ, ৩২ লাখ টাকার ফরচুনার, ২৪ লাখ টাকার রেঞ্জ রোভার, সাড়ে ৮ লাখ টাকার পাজেরো।