মাত্র দুই বছরের মধ্যে একটি বইকে ঘিরে সংসদ সচিবালয়ের ভেতরে দেখা গেছে একেবারে উল্টো চিত্র। এই বইটির লেখক হলেন নোবেলজয়ী এবং বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ২০২২ সালে সংসদ সচিবালয় ড. ইউনূসের লেখা “এ ওয়ার্ল্ড অফ থ্রি জিরোস: দ্য নিউ ইকোনমিকস অফ জিরো প্রভার্টি, জিরো আনইমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড জিরো নেট কার্বন ইমিশনস” বইটি সংগ্রহ করে। এরপর থেকেই বইটি নিয়ে শুরু হয় নানা ধরনের জটিলতা।
সংসদ সচিবালয়ের লাইব্রেরিতে বইটি নিয়ে চলে লুকোচুরি খেলা— কখনও শেলফে রাখা হয়, আবার কখনও কোনো কর্মকর্তার রুমে। এমনও হয়েছে যে, শেলফে বইটি উল্টো করে রাখা হয়েছে যাতে এর নাম দেখা না যায়। অবশেষে ২০২২ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর বইটি গায়েব হয়ে যায়, এবং লাইব্রেরির কর্মকর্তারা জানান, শেষবার এটি যেখানে রাখা হয়েছিল সেখান থেকেও সরিয়ে ফেলা হয়।
বইটির অবস্থান প্রায় ১৫ থেকে ২০ বার পরিবর্তিত হওয়ার পর, সাম্প্রতিক সময়ে আবার এটি লাইব্রেরিতে ফিরে আসে। তবে এবার বিষয়টি পাল্টে গেছে— যেখানে আগে বইটি লুকানো হচ্ছিল, এখন তা রাখার জন্য কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। কেউ বইটি ভালোভাবে দৃশ্যমান করার জন্য শেলফ পরিবর্তন করতে চাইছেন, আবার কেউ বলছেন অন্য শেলফে রাখলে আরও ভালোভাবে দেখা যাবে।
সংসদ সচিবালয়ের একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তা বলেন, আগে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের বই নিয়ে আমরা সমস্যায় পড়েছিলাম, কারণ এতে সরকারবিরোধী কিছু মন্তব্য ছিল, যা নিয়ে আপত্তি তুলেছিল যাচাই-বাছাই কমিটি। সেই সময় বইটি লুকানোর চেষ্টায় আমরা আতঙ্কিত ছিলাম, কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। ৫ই আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর থেকেই নোবেলজয়ীর বই লাইব্রেরিতে সম্মানজনকভাবে স্থান পেয়েছে।
জানা গেছে, ২০২২ সালের মে ও জুন মাসে সংসদ সচিবালয় পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেডের মাধ্যমে চার শতাধিক বই সংগ্রহ করে। এর মধ্যে ড. ইউনূসের বইটি চূড়ান্ত তালিকায় থাকলেও, বইটি নিয়ে আপত্তি তোলার পর থেকেই তা নিয়ে শুরু হয় নানা নাটকীয়তা।