জাতীয় সংসদ বহুল আলোচিত সাইবার নিরাপত্তা বিল-২০২৩ পাস করেছে। বিলটি আইনে পরিণত হলে বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পুলিশের পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের হাতে চলে যাবে। তবে মিথ্যা মামলা হলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য করে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
বুধবার জাতীয় সংসদে বিলটি পাসের জন্য উপস্থাপন করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। বিলটির ওপর বিরোধী দলের সদস্যদের জনমত যাচাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাব নিষ্পত্তির পর কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়। এখন রাষ্ট্রপতির সম্মতিক্রমে আইনটি কার্যকর হবে এবং গেজেট আকারে প্রকাশিত হবে।
বিলের বিভিন্ন ধারার সমালোচনা করে বিরোধী দলের সদস্যরা বলেন, সংবিধানেই চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং স্বাধীন গণমাধ্যমের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বিলের বিভিন্ন ধারায় সংবিধান স্বীকৃত এসব অধিকার খর্ব করার ব্যবস্থা পরিপক্ক হয়েছে। একাধিক সদস্য পরোয়ানা ছাড়া গ্রেফতার ও তল্লাশির বিধান সংশোধনের দাবি জানান।
আলোচনায় অংশ নিয়ে গণফোরামের সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, এই আইনে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। পুরানো মদ নতুন বোতলে রাখার মতো। আইন নবায়ন হচ্ছে কিন্তু স্বস্তি ফিরছে না। এই আইনটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতোই বাস্তবায়িত হচ্ছে। জাতিসংঘ, সম্পাদকমণ্ডলীসহ সাংবাদিকদের আপত্তি ও উদ্বেগ রয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে সম্পাদক পরিষদ ৯টি ধারা সংশোধনের দাবি জানিয়েছে। এখন প্রস্তাবিত সাইবার আইনে শাস্তি ও জামিন সংক্রান্ত ৭টি ধারা সংশোধন করা হয়েছে। কিন্তু অপরাধের সংজ্ঞা স্পষ্ট করা হয়নি। এটি একই থাকে। এর দুটি ধারায় কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় দুটি ধারা বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবিত আইনটি বাতিল না করে শাস্তি ও জামিনের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
মোকাব্বির বলেন, এই আইন ভিন্নমত ও মুক্তচিন্তাকে দমন করার অন্যতম কার্যকরী হাতিয়ার। গত সাড়ে চার বছরে সরকার বা ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা ও মুক্তচিন্তা চাপা দিতেই এটি ব্যবহার করা হয়েছে। আর সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে সাংবাদিক সমাজ। এই আইনের কারণে তাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে খর্ব হয়েছে। এ আইনে পুলিশকে বাসা-বাড়ি ও অফিসে প্রবেশ ও তল্লাশির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভার সহ সবকিছু জব্দ করার সীমাহীন ক্ষমতা দিয়েছেন। অন্য কোনো আইন পুলিশকে এত ক্ষমতা দেয়নি।
মোকাব্বির খান বলেন, ‘রাজ্যের একজন শীর্ষ ব্যক্তি (প্রধানমন্ত্রী) যখন একটি জনপ্রিয় শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রকে বলতে পারেন যে এটি দেশের শত্রু, জাতির শত্রু, তখন মোকাব্বির খান বলেছিলেন যে কাউকে হয়রানি করা খুব সহজ। আইন। এটা অবাঞ্ছিত এবং অনিচ্ছাকৃত। অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে পত্রিকার ঘোষণা বাতিল করা যেতে পারে। স্বাধীন সাংবাদিকতার সাথে এটা কত বড় সরাসরি হস্তক্ষেপ তা সহজেই অনুমেয়। যদিও এর কারণ হুমকি বিপরীত করা হয়েছে।
জাতীয় পার্টির সদস্য মুজিবুল হক বলেন, দেশের স্বার্থে সাংবাদিকরা কলম তুলেন। প্রেস কাউন্সিলকে তাদের বিষয়ে সম্পৃক্ত করার সুযোগ ছিল। ধারা ৪২ পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেয়। এ আইনের অপব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে। এ সময় তিনি সম্প্রতি থানায় দুই ছাত্রলীগ নেতাকে নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরেন।
জাতীয় পার্টির আরেক সদস্য ফখরুল ইমাম বলেন, আইনে কিছু পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু সাংবাদিকরা বলেছেন, তারা সন্তুষ্ট নন। সংবিধানে বাক স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। সংবিধান হলো মৌলিক আইন। বাক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যে কোনো আইন অসাংবিধানিক হবে।
দলের আরেক সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, কিছু কারিগরি বিষয়ে এ আইন জরুরি। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন খুব কম ব্যবহার করা হয়েছে। চেতনা ও অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মূল মামলা করা হয়েছে। তিনি বলেন, সংবিধান চিন্তা, সংবাদপত্র ও বাক স্বাধীনতা দিয়েছে। যেহেতু তারা দাঁড়িয়েছে, এই ধরনের আইন অসাংবিধানিক। এ আইনে অপরাধের সংজ্ঞা একই রাখা হয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে শাস্তি কমানো হয়েছে। এ আইনে গণমাধ্যমের সেলফ সেন্সরশিপ বাড়বে।
জাতীয় পার্টির সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সবার জন্য বিতর্কিত। সাইবার নিরাপত্তা আইন কিছুটা সংশোধন করা হচ্ছে। এটি স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের ক্ষেত্রেও বাধা হয়ে দাঁড়াবে। ধারা ৪২ পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেয়। আইনে সাংবাদিকদের জন্য বিশেষ সুরক্ষার প্রয়োজন ছিল। প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের সুযোগ ছিল। মত প্রকাশের স্বাধীনতা একটি সাংবিধানিক অধিকার। এ আইনে মতপ্রকাশ ও চিন্তার স্বাধীনতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২৭ শতাংশ মামলা হয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে, বাদী ক