বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এদেশের বার বার নির্বাচিত একজন সফল প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক উচ্চশিক্ষিত একজন জ্ঞানী মানুষ। তার অসীম বীরত্ব ও সাহসিকতার কারণেই আজ পদ্মা সেতু পুরোপুরিভাবে শেষ করা সম্ভব হয়েছে। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ষড়যন্ত্রের কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণে দুই বছর দেরি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে-বিদেশে নানা ষড়যন্ত্রের কারণে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ দুই বছর ধরে পিছিয়ে আছে। বুধবার (২৯ জুন) সংসদে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য মেরিনা জাহানের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর পর্বে স্পিকার ড.
এ সময় তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রের কারণে সেতুর নির্মাণকাজ দুই বছর পিছিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত আমরা অন্ধকার কেটে আলোর মুখ দেখেছি। দেশ-বিদেশের সকল ষড়যন্ত্র ও বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে পদ্মা সেতুর স্বপ্ন আজ পূরণ হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, আমাদের সাহস, আমাদের সহনশীলতা এবং আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস এই সেতুর সঙ্গে জড়িত। আমরাই এই সেতু নির্মাণ করব, সেই জেদ। অবশেষে আমরা অন্ধকার ভেদ করে আলোর মুখ দেখতে পেলাম। পদ্মার বুকে লাল, নীল, সবুজ আর সোনালি আলো জ্বলছে। ৪২টি স্তম্ভ একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেছেন, বাঙালিকে কেউ আটকে রাখতে পারবে না। আমরা জিতে গেছি.
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে মাওয়া প্রান্তে সেতু নির্মাণ বন্ধ করে দেয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০০১ সালের ৪ জুলাই আমি আনুষ্ঠানিকভাবে মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে মাওয়া প্রান্তে সেতু নির্মাণ বন্ধ করে দেয়। তারা মানিকগঞ্জের আরিচা প্রান্তে পদ্মা সেতুর জন্য জাপান সরকারকে আরেকটি জরিপ করতে বলেন। দ্বিতীয় জরিপের পর মাওয়া সীমান্ত নির্দিষ্ট করে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রতিবেদন জমা দেয় জাপান।
২০০৯ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর পদ্মা সেতু নির্মাণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে উল্লেখ করে সংসদ নেতা বলেন, স্বল্পতম সময়ে সেতুর বিস্তারিত নকশা প্রস্তুত করতে একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। ২০১১ সালের এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), জাইকা এবং ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (আইডিবি) সঙ্গে ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা এবং আইডিবি প্রকল্পের বিভিন্ন প্যাকেজ নির্মাণের তদারকিতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগে ঋণ চুক্তি স্থগিত করেছে। যদিও কানাডার টরন্টোর একটি আদালতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হলে ২০১৭ সালে বিশ্বব্যাংক প্রকল্পে ফিরে আসার ঘোষণা দেয়। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে সব প্রতিকূলতাকে জয় করে, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এবং বহুল কাঙ্খিত পদ্মা সেতু প্রকল্পের উদ্বোধনে অটল মনোবলের মধ্য দিয়ে এই সেতুটি আজকের স্বপ্ন নয়, এটি দৃশ্যমান বাস্তবতা।
শেখ হাসিনা বলেন, লাখো মানুষের সঙ্গে আমি খুশি, গর্বিত ও অভিভূত। বহু বাধা উপেক্ষা করে ষড়যন্ত্রের জাল ভেঙ্গে আজ বহুল কাঙ্খিত সেতুটি দাঁড়িয়ে আছে নেশাগ্রস্ত পদ্মার বুকে। এই সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট-স্টিল-লোহা-কংক্রিটের অবকাঠামো নয়। এটি আমাদের গর্ব, আমাদের গর্ব, আমাদের ক্ষমতা এবং আমাদের মর্যাদার প্রতীক। এই সেতুটি বাংলাদেশের মানুষের।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন দেশের দুই অঞ্চলকে এক করে, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রেল যোগাযোগ সৃষ্টি, ব্যবসা-বাণিজ্যের বিকাশ, কৃষি, ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্প, ক্ষুদ্র শিল্প ইত্যাদিতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। এতে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক, সাংস্কৃতিক ও সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতুকে ঘিরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বেকারত্ব কমানোর পাশাপাশি দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও, সরাসরি সড়ক ও রেল যোগাযোগ সাধারণ মানুষের বিশাল কর্মঘণ্টা বাঁচাবে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করবে।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী যদি বীরত্ব না দেখাতো তাহলে পদ্মা সেতু কোনোদিনি করা সম্ভব হতো না। পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক কূট চাল চেলেছিল ষড়যন্ত্রকারীরা কিন্তু তাদের সব দুষ্ট পরিকল্পনাকে ভেঙে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী অবশেষে পদ্মায় নির্মাণ করলেন সেতু।