টানা তিন বছর ঘাটতিতে থাকার পর লাভের মুখ দেখেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। আগের তিন বছরে দলের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি ছিল।
তবে এবার আয় বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে তহবিল সংকট থেকে উত্তরণের দিকে যাচ্ছে দলটি।
নির্বাচন কমিশনে (ইসি) ২০২২ ক্যালেন্ডার বছরে বিএনপির জমা দেওয়া আয়-ব্যয়ের হিসাব আগের বছরের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের জমা দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, ২০২২ সালের ক্যালেন্ডার বছরে দলের মোট আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ কোটি টাকা। ৫ কোটি ৯২ লাখ ৪ হাজার ৬৩২ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে তিন কোটি ৮৮ লাখ ৩৩ হাজার ৮০৩ টাকা। অর্থাৎ দলটির মুনাফা ২ কোটি ৩ লাখ ৭০ হাজার ৮২৯ টাকা।
দলটি এর আগে টানা তিন বছর ধরে ঘাটতিতে ছিল, যা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম বিক্রির অর্থ থেকে পূরণ করা হয়েছিল।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের পর দলটির আর কোনো সঞ্চয় নেই। এ সময় দলের তহবিলের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ কোটি ১৩ লাখ ২৭ হাজার ২৩৭ টাকা। এরপর থেকে টানা তিন বছর আয়ের থেকে ব্যয় বেড়েছিলো ।
২০২১ সালের ক্যালেন্ডার বছরে দলের আয় ৮৪ লাখ ১২ হাজার ৪৪৪ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৯৮ লাখ ৪৭ হাজার ১৭১ টাকা। মোট ঘাটতি ছিল ১ কোটি ১৪ লাখ ৩৪ হাজার ৭২৭ টাকা। রিজভী বলেন, ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ঘাটতি পূরণ হয়েছে।
২০২০ সালে বিএনপির আয় ছিল ১ কোটি ২২ লাখ ৫৩ হাজার ১৪৯ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে এক কোটি ৭৪ লাখ ৫২ হাজার ৫১৩ টাকা। বিএনপির তহবিল থেকে ব্যয় বেড়েছে ৫১ লাখ ৯৯ লাখ ৩৬৪ টাকা।
২০১৯ সালে, দলটি তার আয়ের তিনগুণেরও বেশি ব্যয় করেছে। তখন বিএনপির আয় হয়েছিল ৮৭ লাখ ৫২ হাজার ৭১০ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ২ কোটি ৬৬ লাখ ৮৬ হাজার ১৩৭ টাকা। আয়-ব্যয়ের পার্থক্য এক কোটি ৭৯ লাখ ৩৩ হাজার ৪২৭ টাকা। অর্থাৎ আয়ের চেয়ে ব্যয় তিন গুণ বেশি।
তবে টানা তিনবার (১৬-১৮ বছর) দলের আয় ব্যয়ের চেয়ে বেশি ছিল।
রাজনৈতিক দলগুলো মনোনয়ন ফরম বিক্রি, মাসিক সদস্য ফি, এককালীন অনুদান থেকে আয় করে। আর অফিসের বিভিন্ন খরচ, নির্বাচনী খরচ, ত্রাণ কার্যক্রম, কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদি, বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন ইত্যাদি খাতে ব্যয় হয়।
ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, দলগুলোর সবচেয়ে বড় রাজস্ব হচ্ছে নির্বাচনী মনোনয়ন ফরম বিক্রি। নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি সেই টাকা আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই তহবিল বড় হওয়ার পরিবর্তে দিন দিন ছোট হচ্ছে।
ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে দলটির আয় ছিল ৯ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার ৩৮০ টাকা এবং ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৭৩ লাখ ২৯ হাজার ১৪৩ টাকা। এ সময় দলীয় তহবিলে মোট উদ্বৃত্ত ছিল ৬ কোটি ১৩ লাখ ২৭ হাজার ২৩৭ টাকা।
২০১৭ সালে দলটি মোট আয় দেখিয়েছে ৯ কোটি ৪৬ লাখ ২৪ হাজার ৯০২ টাকা। আর মোট ব্যয় দেখিয়েছে ৪ কোটি ১৯ লাখ ৪১ হাজার ৯৫৪ টাকা। ৫ কোটি ২৬ লাখ ৫২ হাজার ৯৪৮ টাকা হাতে বা ব্যাংকে রয়েছে।
২০১৬ সালে দলের আয় ছিল ৪ কোটি ১৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭৩০ টাকা। এতে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬৩ হাজার ৭৫২ টাকা। আয় বেড়েছে ১৪ লাখ ৪ হাজার ৭৭৮ টাকা।
আগের তিন বছরে (১৩-১৫) দল ঘাটতিতে ছিল। ২০১৫ সালের ক্যালেন্ডারে বিএনপি ঘাটতি দেখিয়েছিল ১৪ লাখ ২৬ হাজার ২৮৪ টাকা। তখন দলটির আয় দেখিয়েছিল ১ কোটি ৭৩ লাখ ৩ হাজার ৩৬৫ টাকা। এতে ব্যয় দেখানো হয়েছে ১ কোটি ৮৭ লাখ ২৯ হাজার ৬৪৯ টাকা।
২০১৪ সালের ক্যালেন্ডারে দলটি বিভিন্ন খাতে আয় দেখিয়েছে ২ কোটি ৮৭ লাখ ৪৮ হাজার ৫৭৪ টাকা। আর ব্যয় দেখিয়েছে ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৩ হাজার টাকা। দলটির আয়ের চেয়ে ব্যয় হয়েছে ৬৫ লাখ ৫৪ হাজার ৪২৬ টাকা বেশি।
২০১৩ সালের ক্যালেন্ডার বছরে দলটির আয় ৭৬ লাখ ৫ হাজার ৭৬২ টাকার বিপরীতে ব্যয় দেখিয়েছে ২ কোটি ২৭ লাখ ২৫ হাজার ৩২৬ টাকা। সে সময় ঘাটতি ছিল প্রায় দেড় কোটি টাকা।
প্রতি বছর ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে দলগুলোকে নির্বাচন কমিশনে আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে হয়।
টানা তিন বছরের হিসাব ছাড়া কোনো দলের নিবন্ধন বাতিল করার বিধান রয়েছে। নিবন্ধিত 42 টি দলের মধ্যে বেশ কয়েকটি দল ইতিমধ্যে তাদের হিসাব জমা দিয়েছে।