তীব্র সংকট ও বিশৃঙ্খলার মধ্যে হঠাৎ করেই সব খাতে ডলারের দাম ৫০ পয়সা কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন থেকে ব্যাংকগুলো প্রতি ডলার (সব খাতে) কিনবে ১১০ টাকায়। বিক্রি হবে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। আন্তঃব্যাংকে ডলারের সর্বোচ্চ দাম হবে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। নগদ ডলারের দাম নির্ধারণ করবে ব্যাংকগুলো নিজেরাই। আগে ব্যাঙ্কগুলো প্রতি ডলার ১১০ টাকা ৫০ পয়সা কিনত এবং ১১১ টাকায় বিক্রি করত। আজ থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে।
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) যৌথ সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বুধবার অনুষ্ঠিত সংক্ষিপ্ত বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা ছাড়াই দাম কমানোর সিদ্ধান্ত হয়।
দাম কমানোর সিদ্ধান্ত এমন সময়ে এলো যখন বাজারে ডলারের সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে, ব্যাংকগুলোকে এলসি খোলার দাবি জানিয়েও ডলার পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। ডলারও কেনা হচ্ছে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৫ থেকে ১১ টাকা বেশি দরে। এদিকে রেমিটেন্স ডলার ব্যাংকগুলো নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৮ থেকে ১৫ টাকা বেশি দিয়ে কিনছে। ডলারে শৃঙ্খলা আনতে দুই সপ্তাহ আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল। এমন বিশৃঙ্খল বাজার পরিস্থিতির মধ্যে ডলারের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।
বৈঠকে ডলারের দাম কমার কারণ হিসেবে বলা হয়, বৈদেশিক মুদ্রার চলতি অ্যাকাউন্টে ঘাটতি কমে উদ্বৃত্ত হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ডলার জমার হার বেড়েছে, কমেছে বাণিজ্য ঘাটতি। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোতে বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপও কিছুটা কমেছে। এসব কারণে দাম কমানো হয়েছে।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বাজারে ডলারের সংকট প্রকট। বৈদেশিক দায় নিয়মিত পরিশোধ করা হচ্ছে না। বেশি দাম দিয়েও মিলছে না ডলার। অর্থ পরিশোধ না করায় অতিরিক্ত সুদের সঙ্গে দণ্ড সুদও দিতে হয়। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী ডলারের পেগ আর কার্যকর নেই। BAFEDA ও ABB নির্ধারিত হারে ডলার বিক্রি হচ্ছে না। বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রণীত নীতিমালা কাজ করছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ডলারের দাম কমলেও তা বাজারে কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারণ, বর্তমানে ডলারের দাম কাজ করছে না। ব্যাংকাররা নানা ফাঁকি দিয়ে ডলারের দাম চড়া রাখছে।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রেমিট্যান্সের ডলারের দাম হবে ১১০ টাকা। এর সঙ্গে সরকারি খাতের আড়াই শতাংশ প্রণোদনা ও ব্যাংক নিজস্ব উদ্যোগে আরও আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিতে পারবে। ডলারের দাম কমানোর ফলে রেমিট্যান্সের ডলারের দামও কমবে। বর্তমানে ৫ শতাংশ প্রণোদনাসহ রেমিট্যান্সের প্রতি ডলার সর্বোচ্চ ১১৬ টাকা করে কিনতে পারে ব্যাংক। কিন্তু কিছু ব্যাংক ১১৯ টাকা দরে কিনছে। আগে এর দাম ১২৭ টাকা উঠেছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপে এখন কমে ১১৯ টাকায় নেমেছে, যা নির্ধারিত দামের চেয়ে ৩ টাকা বেশি। নতুন দরে ৫ শতাংশ প্রণোদনাসহ প্রতি ডলারে প্রবাসীরা পাবেন সর্বোচ্চ ১১৪ টাকা ৫৫ পয়সা। প্রতি ডলারে দাম কমবে ১ টাকা ৪৫ পয়সা।
ব্যাংকাররা বলছেন, রেমিটেন্স সংগ্রহে এখন ব্যাংকগুলোকে তুমুল প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। ডলারের অবমূল্যায়নের ফলে রেমিটেন্স আসবে না। যেখানে দাম বেশি পাবে, সেখানে চলে যাবে। ফলে ব্যাংক চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স কমতে পারে। কারণ নিকট অতীতে দেখা গেছে, রেমিট্যান্সের ডলারের মূল্য হ্রাসের ফলে ব্যাংক চ্যানেলের মাধ্যমে তাদের প্রবাহ হ্রাস পায়। আবার দাম বাড়লে বাড়ে। অতএব, এই ক্ষেত্রে, পদক্ষেপ খুব সাবধানে নিতে হবে।
রপ্তানি আয়ের ডলারও এখন আগের চেয়ে ৫০ পয়সা কমে ১১০ টাকা করে কিনবে ব্যাংকগুলো। আগে কিনত ১১০ টাকা ৫০ পয়সা করে। আমদানির দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে এখন ডলারের দাম হবে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু এ দামে বাণিজ্যিক আমদানিকারকরা ডলার পাচ্ছেন না। তাদের কিনতে হচ্ছে ১১৭ থেকে ১২২ টাকা করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেশি দামে। কারণ, বর্ধিত মূল্যে রেমিট্যান্স কিনে ওই ডলার আমদানির জন্য নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করা সম্ভব নয়। এ কারণে ডলারের দামের সঙ্গে বাড়তি প্রিমিয়াম যোগ করে এর দাম বেশি নিচ্ছে।
এদিকে এর আগে আন্তঃব্যাংকে ডলারের সর্বোচ্চ দাম ১১৪ টাকা নির্ধারণ করা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এর আগে ডলার বিক্রি হতো ১১১ টাকা দরে। আজ থেকে বিক্রি হবে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সা দরে। তবে আন্তঃব্যাংক ডলার লেনদেন খুব কমই সম্ভব। কারণ, ডলার কিনতে ব্যাংকগুলোর ক্রয়মূল্য বেশি পড়ে। এ কারণে এখানে লোকসানে কেউ ডলার বিক্রি করে না।