একজন শিক্ষককে কখনও হতে হয় বন্ধু, কখনও বা হতে হয় একজন কড়া অভিভাবক। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্পর্ক গাঢ় না হলে একজন শিক্ষার্থী শিক্ষকের কাছ থেকে কোনো কিছু শিখতে গেলেও প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয় বা শিখতে গেলেও নানা প্রতিবন্ধকতায় শিক্ষার ঘাটতি রয়ে যায়। তবে এবার এক শিক্ষক এলেন আলোচনায়, শিক্ষার্থীদের কষ্ট দূর করতে ঘটালেন ভিন্ন ধরনের ঘটনা, যার কারণে নেট দুনিয়ায় তিনি প্রশংসায় ভাসছেন।
শ্রেণীকক্ষে ফ্যান চলে ধীরগতিতে, বাতাস পাওয়া যাচ্ছে না- শিক্ষার্থীরা অভিযোগ শোনা মাত্রই অধ্যক্ষ তার কক্ষের ফ্যান খুলে মাথায় বয়ে নিয়ে এসে লাগিয়ে দিলেন অধ্যক্ষ নিজেই।
মঙ্গলবার (২৮ জুন) দুপুরে নোয়াখালীর মাইজদী মাইজদী কোর্টের সায়েন্স অ্যান্ড কমার্স কলেজে এ ঘটনা ঘটে। তবে হাস্যোজ্জ্বল অধ্যক্ষের মাথায় একটি ফ্যান, তার পাশে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফে”সবুকে অধ্যক্ষই নিজেই এমন একটি ছবি পোস্ট করেন।
অধ্যক্ষ ড. আফতাব উদ্দিন সামাজিক মাধ্যমে পোস্টে লিখেছেন, ‘আমাদের দিন কাটে আনন্দে! ক্লাস টেনের শিক্ষার্থীরা বললো, “স্যার, আমাদের একটা ফ্যান আস্তে ঘোরে। আমি সাথে সাথে নিজের রুমের একটা ফ্যান খুলে মাথায় নিয়ে ওদের রুমে হাজির হলাম। কয়েকটা মেয়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে বলল, স্যার একটা ছবি তুলবেন? আমি বললাম, নাও! তারাও খুশি, আমিও খুশি।”
পদ-পদবি নিয়ে দ্ব”ন্দ্ব, বাইরের কৃত্রিমতা, অশালীন প্রতিযোগিতাকে ইঙ্গিত করে অধ্যক্ষ মো. আফতাব উদ্দিন আরও লিখেছেন, ‘বড় কোনো পদপদবি নেই, চাকচিক্য নেই, কম্পিটিশন নেই, ছেলেমেয়েদের সঙ্গে আনন্দে সময় কাটাই। সবাই ভালো থাকবেন।’
ফে”সবুকে ছবি পোস্ট করার পর প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শুভানুধ্যায়ীদের নিকট থেকে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছেন আফতাব উদ্দিন। মুহিবুল্লাহ খান ভুট্টো নামের একজন মন্তব্য করেন, ‘ভার-ভারিক্কি আর পদ-পদবির জেরে বা বিপদে থেকে এই আনন্দ অনেকেই উপভোগ করতে পারে না। অনেকে বোঝেই না শিক্ষকতার আনন্দ! তারা দারোগাগিরি আর হম্বিতম্বিতে পার করে তাদের সময়গুলো। হাসতে বা হাসাতেও পারে না কাউকে। সহকর্মী ও ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে আনন্দে সময় কাটাতে পারাটাই সফলতা বলে মনে করি। আ স ম কামাল উদ্দিন লিখেছেন, একজন অধ্যক্ষকে অলরাউন্ডার হতে হয়, আপনি এমন একজন শিক্ষক। শুভকামনা।’
প্রতিষ্ঠান অধ্যক্ষের এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে অনেকেই সাধুবাদ জানিয়েছেন এবং তারা বলছেন কোনো প্রতিষ্ঠান এ ধরনের প্রধান থাকা উচিত, যিনি শিক্ষার্থীদের কষ্ট দূর করতে নিজের পদ-পদবির দিকে তাকান না। প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ যে কাজটি করেছেন সেটি কোন ছোট কাজ নয় বরং তিনি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। আমরা সকলে এই শিক্ষককে স্যালুট জানাই, এমনটি জানিয়েছেন এক নেটিজেন।