গেলো বেশ কিছু দিন আগে সমাবেশ থেকে বিএনপির বর্তমান ৭ এমপি পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন। আর সেই লক্ষই এবার বাস্তবায়ন করলেন বিএনপির আলোচিত এমপি হারুনুর রশীদ। জানা গেছে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন।
এর আগে ১১ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ থেকে বিএনপির ছয় সদস্য পদত্যাগ করেন। ওই দিন বিএনপির সাত সংসদ সদস্য পদত্যাগপত্র জমা দিলেও এমপি হারুন বিদেশে থাকায় তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেননি স্পিকার।
হারুনের পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপির সব দলের নেতাকর্মীরা। পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার সময় হারুনুর রশীদের সঙ্গে ছিলেন সদ্য পদত্যাগ করা সাবেক সংসদ সদস্য মোশাররফ হোসেন ও জিএম সিরাজ।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও পদত্যাগী সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, “গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসভায় আমাদের দলের সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া হয়। আমি বিদেশে থাকায় স্বাক্ষরিত পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু কার্যবিধি অনুযায়ী প্রত্যেক সংসদ সদস্যকে স্পিকারের উপস্থিতিতে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করে জমা দিতে হয়।তাই সেদিন আমার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়নি।গত রাতে দেশে ফিরে আজ পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।
হারুনুর রশীদ বলেন, ‘আইন ও সংবিধান অনুযায়ী দেশ চলছে না। মহাজোটের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পরিণত হয়েছে জাতীয় সংসদ। এখানে বিরোধী দলের কোনো সংসদ সদস্য নেই। এটি একদলীয় সংসদ। আমাদের সংবিধান ও কার্যপ্রণালী বিধিতে এমন কোন বিধান নেই। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবো সংবিধান ও আইন পরিবর্তন করতে, যদি তারা চায় যেভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে চায়।
গত ৭ ডিসেম্বর বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশের অভিযান প্রসঙ্গে হারুন বলেন, গণতান্ত্রিক ও সভ্য দেশে এটা সম্ভব নয়। দলীয় নেতা-কর্মীদের মিথ্যা নাশকতা ও সন্ত্রাসের মামলা দিয়ে আটক করা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে, এটা সম্পূর্ণ আইনের লঙ্ঘন। দেশে আইনের শাসনের চিহ্ন নেই। দেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে সরকার যদি রাজনৈতিক দলগুলোর সমাবেশে এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে চায়, তাহলে সংবিধান বাতিল ও বাতিল করতে হবে।
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ ও তার শরিকদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নিরপেক্ষ নির্বাচনী সরকার ব্যবস্থার মাধ্যমে নির্বাচন করতে হবে। বাংলাদেশে নির্বাচন প্রহসনে পরিণত হয়েছে।
হারুন দাবি করেন, সরকার চাল-চালনা করে ক্ষমতা ধরে রেখেছে। তিনি আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটের শরিকদের সংসদ থেকে পদত্যাগ করার অনুরোধ জানান। হারুন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সিনিয়র নেতাদের মুক্তি দাবি করেন।
প্রধানমন্ত্রী জনসভা করে নৌকায় ভোট চাইছেন দাবি করে হারুনুর রশীদ বলেন, বিএনপি ও তাদের জোট নির্বাচনে অংশ না নিলে আগামী নির্বাচনে শূন্য মাঠে গোল হবে। তিনি বলেন, সরকার যদি একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাহলে শেখ মুজিব ১৯৭৪ সালে তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে যেভাবে সব রাজনৈতিক দলকে বিলুপ্ত করেছিলেন সেভাবে আইন ও সংবিধান পরিবর্তন করে সব রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড বাতিল করতে পারেন। কিন্তু মানুষ তা মেনে নেবে না।
হারুন বলেন, স্পিকারের পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করার কোনো সুযোগ নেই। তিনি আমাদের অনুরোধ করে বলেন, আপনারা সংসদ থেকে পদত্যাগ না করেও করতে পারতেন। আপনি সংসদে আপনার বক্তব্য বলতে পারতেন।
প্রসঙ্গত, গেলো কয়েক ম্যাশ ধরেই বাংলাদেশের বিভাগীয় জেলা গুলোতে সমাবেশ করে আসছিলো বিএনপি। সেই ধারাবাহিকতায় গেলো ১০ তারিখ ঢাকায় সমাবেশ করে তারা। আর সেই সমাবেশ থেকেই বিএনপি সাত এমপি সংসদ থেকে করেন পদত্যাগ।