বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসের সব থেকে বড় এবং সমৃদ্ধশালী দল এটি। আর এই কারনে দলের শৃঙ্ঘলা বজায় রাখতে সব সময় সচেষ্ট থাকে তারা। ঠিক এই জন্যই দল থেকে বহিস্কার করে দেয়া হয়েছিল গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে। তবে এবার জানা গেলো নতুন খবর। গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাময়িক বরখাস্তকৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের দলে ফেরার পর অবশেষে বিশৃঙ্খলার অবসান ঘটেছে। তরুণ এই নেতার নির্বাসন প্রত্যাহার করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিজেই এ তথ্য জানিয়েছেন।
জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগে ফিরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও নগরবাসী। তারা বলছেন, এতে করে তিনি আবার মেয়রের দায়িত্ব পেলে সংগঠন শক্তিশালী হবে এবং গাজীপুর সিটির উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
গত শনিবার আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় বিশৃঙ্খলার অভিযোগে দলের নেতা ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের সাধারণ ক্ষমার সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর নগরবাসী বিশেষ করে জাহাঙ্গীরের সমর্থকদের মধ্যে লাগামহীন উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। জাহাঙ্গীরের নির্বাসন প্রত্যাহারের খবরে তাদের মনে স্বস্তি আসে।
তবে জাহাঙ্গীরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ শিবির তার দলে ফেরাকে গুজব ও মিথ্যা আখ্যা দিয়েছে। তাদের দাবি, সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পরও জাহাঙ্গীরকে দলে ফিরিয়ে আনার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি কেন্দ্র। এমনকি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও এখন পর্যন্ত বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়নি। নগরবাসীও এ নিয়ে সন্দিহান ছিল।
অবশেষে এ বিষয়ে কথা বলেছেন কেন্দ্রের তিন নেতা। আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাছিম সোমবার একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, যারা অতীতের ভুল স্বীকার করে দলে যোগদানের আবেদন করেছেন, তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তৃণমূলকে শক্তিশালী করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হোসেনও এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বিশৃঙ্খলা ও বিদ্রোহের কারণে বহিষ্কৃত শত শত মানুষ দলে ফেরার আবেদন করেছেন। নেত্রী তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন। তারা এখন আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করবে।
জাহাঙ্গীর আলমের নির্বাসন প্রত্যাহারের বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, জাহাঙ্গীর আলমের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করে তাকে ক্ষমা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার একটি বেসরকারি টেলিভিশনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, যে ভুলের জন্য তাদের সাজা হয়েছে তার পুনরাবৃত্তি করবেন না এই শর্তে তাদের ক্ষমা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বলা যায় আপনি শর্ত ভঙ্গ করেছেন।
জাহাঙ্গীর আলম প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, জাহাঙ্গীর আবেদন করেছেন। এটা মওকুফ করা হয়েছে. যারা আবেদন করেছিল তাদের সবাইকে ক্ষমা করা হয়েছে। শতাধিক ছিল। অনেকে বিতর্কে জড়িয়েছেন, শৃঙ্খলাবিরোধী মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। এগুলো ক্ষমা করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগে ফেরানোর সিদ্ধান্তে উচ্ছ্বসিত তার কর্মী-সমর্থকরা। জনপ্রিয় এই নেতাকে দলে ফিরিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন বলে মনে করছেন গাজীপুরবাসী। দলে ফেরার সবুজ সংকেত পেয়ে জাহাঙ্গীর আলমের মেয়রের চেয়ারে বসার প্রতিবন্ধকতাও দূর হবে বলে আশা করছেন নগরবাসী।
জাহাঙ্গীর আলমকে বহিষ্কারের খবরে নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বসিত। টক অব দ্য গাজীপুরে গত কয়েকদিন ধরেই জাহাঙ্গীর আলমের ফেরার কথা চলছে। গত কয়েকদিন ধরেই জাহাঙ্গীরের বাড়িতে ভিড় করছেন তৃণমূল কর্মীরা।
জাহাঙ্গীর আলম বয়কট প্রত্যাহার করায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, দলের জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করব। তৃণমূলকে শক্তিশালী করে সংগঠনের গতি বাড়াতে কাজ করব।
প্রসঙ্গত, এ দিকে নিজের বহিস্কার আদেশ প্রত্যাহার নিয়ে কথা বলেছেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি এ নিয়ে তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন আগামী দিনে আধুনিক গাজীপুর গড়তে স্থানীয় মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও দলীয় নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করব। আমরা সম্মিলিতভাবে প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য আমি আন্তরিকভাবে সবকিছু করব।তিনি আরও বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। গাজীপুর মহানগরীর ৫৭টি ওয়ার্ড নিয়ে আমরা গাজীপুর মহানগরীকে একটি বাসযোগ্য আধুনিক শহর হিসেবে গড়ে তুলব।