বিদায়ী বছরের শেষ মাসের ২৩ ডিসেম্বর রাতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকার সদরঘাট থেকে বরগুনার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া অভিযান-১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নীকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় প্রায় ৪৭ জনের মৃ/ত্যু হয়েছে। এবং অনেকেই গুরুত্ব আহত হয়েছেন। এছাড়াও এখনো কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন। সম্প্রতি এই ঘটনার তদন্ত কমিটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে করে জানাগেছে কীভাবে লঞ্চে অগ্নীকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।
ঢাকা থেকে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চটির ইঞ্জিনে ত্রুটি ছিল। সেখান থেকেই ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে পৌঁছার পর লঞ্চটিতে আগুন লাগে বলে জানিয়েছে এই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি। এই কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনে দায়ী ব্যক্তিদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে বেশ কিছু সুপারিশও করা হয়েছে। সোমবার রাতে আগুনের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়। মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী মঙ্গলবার প্রতিবেদন জমার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন। সচিব বলেন, ‘তারা দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করেছে। সেই সঙ্গে তারা কিছু সুপারিশ করেছে।’ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে, সতর্কতামূলক বিষয়গুলোর ব্যাপারে আগেভাগে যাত্রীদের জানানো, চাইলেই যেন যন্ত্রাংশ পরিবর্তন করা না যায় এ ধরনের বিভিন্ন বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।
সূত্রে জানা যায়, অভিযান-১০ লঞ্চে আগুনের ঘটনায় যে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে তাতে সদরঘাটে কর্মরত নৌপরিবহন অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই লঞ্চের মালিক ইঞ্জিন পরিবর্তন করেছিলেন। লঞ্চটির ক্রটিপূর্ণ ইঞ্জিনের কারণে ওই আগুনের ঘটনা ঘটে। লঞ্চের ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখতে পাওয়ার পরেও লঞ্চের কর্মীরা কোনো ব্যবস্থা নেননি। আগুন লাগার পরে সেটি নেভাতেও কোনো ব্যবস্থা নেনটি বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে ২৫টি সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে রোটেশন পদ্ধতিতে লঞ্চ চলাচল বন্ধ, লঞ্চ ছাড়ার আগে যথাযথভাবে পরিদর্শন, ঘন ঘন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, লঞ্চের কর্মীদের প্রশিক্ষণের বিষয় উল্লেখ রয়েছে। লঞ্চে আগুনের ঘটনায় নৌ আদালতে করা মামলায় তিন মালিক ও চার মাস্টার- চালককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ঘটনার পরদিন প্রথমে পাঁচ সদস্যের কমিটি করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। কিছুক্ষণ পর সে কমিটি বাতিল করে নতুন করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি ঘটনা করা হয়। ঘটনার ১২তম দিনে তদন্ত প্রতিবেদন দিল কমিটি।
প্রায় সময় নানা ধরনের অনিয়মের জের ধরে নৌপথে ভয়াবহ দূর্ঘটনার সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে প্রান হারাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। তবে এই সকল অনিয়ম প্রতিরোধে কাজ করছেন নৌমন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিরা। ইতিমধ্যে নৌপথে অনিয়মকারীদের অনেককেই আটক করে আইনের আওতায় এনেছে দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যাক্তিরা।