সুদর্শিনী তরুনীর নাম এলিজাবেথ হোমস। তিনি অনেকটা রাতারাতি হয়ে যান বিলিনিয়ার। তার বিলিয়নিয়ার হওয়ার পেছনে ছিল একটি প্রযুক্তির আবিষ্কার। মাত্র দুই-এক ফোটা রক্ত নিয়ে খুব অল্প সময়ের মধ্যে পরীক্ষা করার একটি হতবাক করা প্রযুক্তি আবিষ্কার করেন। এরপর তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন থেরানোস নামক একটি কোম্পানি। তার ঐ আবিষ্কারের খবর ছড়িয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিনিয়োগের প্রস্তাব আসতে শুরু করে। একটি সময়ে এসে যুক্তরাষ্ট্রের যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে থেরানোস কম্পানির অর্থমূল্য গিয়ে দাঁড়ায় ৯০০ কোটি মার্কিন ডলারে। এর তার আবিষ্কার এবং কোম্পানির বিষয়টির গুরুত্ব পায়। কিন্তু শেষ অবধি সেই সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে পারলেন না যুক্তরাষ্ট্রের সেই বিলিয়নিয়র তরুণী। প্রতা’রণার জন্য তিনি ফেঁ’সে গেলেন।
প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এলিজাবেথ হোমস খুব অল্প সময়ের গবেষণার মাধ্যমে কিভাবে এতটা সফলতা অর্জন করতে পারে। এটা নিয়ে শুরু হয় তদন্ত। তদন্তের পর যেটা তদন্তকারী দল পেল সেটা অনেকটা কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসার মত ঘটনা।
তদন্তে দেখা গিয়েছে, তিনি বড় ধরনের প্রতা’রণার করেছেন। এ বিষয়টি নিয়ে বেশ দীর্ঘ দিন ধরে ক্যালিফোর্নিয়ার আদালত তাকে অভিযুক্ত করে শুনানি শুরু করে। এরপর তার প্রতা’রণার বিষয়টি ধরা পড়ে এবং তারপর তাকে প্রতারনার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়।
প্রকিসিউটররা বলেছেন, বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সজ্ঞাতে প্রতা’রণা করেছেন এলিজাবেথ হোমস। তিনি দাবি করেছিলেন, মাত্র দু’এক ফোঁটা রক্ত ব্যবহার করেই তার কোম্পানি আবিষ্কৃত প্রযুক্তি ব্যবহার করে রোগ নির্ণয় করা যায়।
কিন্তু জুরিরা তাকে চারটি অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন। এর মধ্যে আছে বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তিনি প্রতারণা করেছেন। ওয়্যার প্রতারণার তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। এলিজাবেথ হোমস তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
কিন্তু অভিযোগ প্রমাণের পর এখন তাকে শাস্তি দেওয়ার পালা। এতে প্রতিটি অভিযোগে তার সর্বোচ্চ ২০ বছর করে জেল হতে পারে। তাকে এখনও নিরাপত্তা হেফাজতে নেওয়া হয়নি। কবে শা’স্তি ঘোষণা হবে সেই তারিখও জানানো হয়নি। আরও শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে আগামী সপ্তাহে।
এলিজাবেথ হোমসের বিরুদ্ধে মোট ১১টি অভিযোগ আনা হয়েছে। তার মধ্যে চারটি অভিযোগে তাকে অভিযুক্ত করা হয়নি। তবে এসব নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন জুরিরা। বিচারক বলেছেন, জুরিরা অন্য তিনটি অভিযোগের বিষয়ে একমত হতে না পারলে আংশিক রায় ঘোষণা করতে পারেন।
এলিজাবেথ হোমসকে নিয়ে এক সময় সারাবিশ্বে রিপোর্ট প্রকাশ হয়। কারণ, তিনি যে প্রযুক্তি এনেছেন, তাতে প্যাথলজিতে এক বৈপ্লবিক সমাধান এনেছে বলে বলা হয়েছিল। এর ফলে তিনি ৯০০ কোটি ডলারের মালিক হয়ে যান খুব অল্প বয়সে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে নামে মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। ২০১৫ সালে তারা অনুসন্ধানে দেখতে পায়, এলিজাবেথ হোমস রক্ত পরীক্ষার যে প্রযুক্তি এনেছেন, তা কার্যকর নয়।
এ নিয়ে প্রায় চার মাস ধরে বিচার প্রক্রিয়া চলে। এতে এলিজাবেথ হোমস সম্পর্কে দুটি ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন আটজন পুরুষ ও চারজন নারী জুরি।
এলিজাবেথ হোমস বিনিয়োগকারীদের কাছে যে পণ্য বিক্রি করেছেন, তা ভুয়া ছিল এ কথা তিনি জানতেন বলে প্রমাণ দিতে প্রসিকিউশন ৩০ জন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য নেন। শুনানিতে বেশ কিছু ল্যাবের পরিচালকরা সাক্ষ্য দেন। তারা বলেন, থেরানোস প্রযুক্তিতে ত্রুটি ছিল। কিন্তু তাদেরকে এ বিষয়ে কথা বলতে বারণ করা হয়েছিল। একই সময়ে বিনিয়োগকারীদের কাছে এলিজাবেথ হোমস বলেছিলেন, পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে তার প্রযুক্তি।
সমাপনী যুক্তিতর্কে প্রসিকিউটর জেফ শেঙ্ক বলেন, ব্যবসায় ব্যর্থতা নিয়ে প্রতারণাকে বেছে নিয়েছিলেন হোমস। বিনিয়োগকারী এবং রোগীদের বিরুদ্ধে তিনি অসততাকে বেছে নিয়েছিলেন। এটা শুধু নি’ষ্ঠু/রতাই নয়। একই সঙ্গে অপরা’ধও।
পক্ষান্তরে আত্মপক্ষ সমর্থন করে এলিজাবেথ হোমস থেরানোসের কর্মকাণ্ডে ত্রুটির কথা স্বীকার করেছেন। তবে বিনিয়োগকারী বা রোগীদের সঙ্গে প্রতারণার কথা অস্বীকার করেছেন। এক্ষেত্রে তার সাবেক ব্যবসায়িক পার্টনার ও দীর্ঘদিনের বয়ফ্রেন্ড রমেশ সানি বলওয়ানিকে দায়ী করেছেন। রমেশ তার চেয়ে ১৯ বছরের বড়। এলিজাবেথ হোমস অভিযোগ করেছেন রমেশ বলওয়ানি তাকে ইমোশনাল এবং যৌন নির্যাতন করেছেন। তবে রমেশ এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। ২০১৬ সালে থেরানোসের প্রধান নির্বাহী পদ ত্যাগ করেন রমেশ বলওয়ানি। এ সময়েই তাদের এক দশকের রিলেশনশিপের ইতি ঘটে। ওদিকে আগামী মাসে আলাদা একটি মামলার মুখোমুখি হতে হচ্ছে রমেশ বলওয়ানিকে।
এলিজাবেথ হোমসের ১৯ বছর পার হওয়ার আগেই তিনি থেরানোস কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে নামকরা সকল গবেষকদের হতবাক করে দেয়। তিনি স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন। কিন্তু তিনি তার এই আবিষ্কারের পর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া বাদ দিয়ে তিনি তার ঐ কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এলিজাবেথের কোম্পানিতে মিডিয়া ম্যাগনেট হিসেবে পরিচয় পাওয়া রুপার্ট মারডক এবং ল্যারি এলিসন নামের একটি বড় ধরনের প্রযুক্তিবিষয়ক কোম্পানিকে বিনিয়োগ করার জন্য আকৃষ্ট করেন। কিন্তু রক্ত পরীক্ষা করার দ্রুততর প্রযুক্তি আবিষ্কার করার কেলেঙ্কা’রি ধরা পড়ার পর সেখানকার প্রশাসন ২০১৮ সালের দিকে ওই কোম্পানির সকল ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়।
খবর বিবিসির।