গেল দুই মাস ধরে নিখোঁজ ছিল কলেজছাত্রী সুকন্যা। আর সেই থেকেই এই বিষয়টি নিয়ে সবখানে চলছিল বেশ আলোচনা। বিশেষ করে ঐ ছাত্রীর মা হারানো মেয়েকে খুজে পেতে বেশ কয়েকবার করেছেন সংবাদ সন্মেলন। শেষ পর্যন্ত রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ থেকে নিখোঁজ কলেজছাত্রী ইয়াশা মৃধা সুকন্যাকে পাওয়া গেছে।
মঙ্গলবার একটি বেসরকারি টেলিভিশনের মুখোমুখি হন ইয়াশা মৃধা সুকন্যা।
বাড়ি না ফেরার জন্য গর্ভধারণী মাকে দায়ী করে সুকন্যা বলেন, আমি পরিবারে ফিরতে চাই না। আমার মা আমাকে নানাভাবে নির্যাতন করে। সে আমাকে বিক্রি করতে চেয়েছিল।
সুকন্যা জানান, তাকে জোর করে বিয়ে দেয়া হচ্ছে। মা আমাকে সাড়ে তিন লাখ টাকায় বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। রাতে ভয়ে ঘুমাতে পারতাম না। আমাকে বালিশ চাপা দেয়া হবে! আমি যখন নানার বাড়িতে যেতাম, তারাও আমাকে একই কথা বলত। বিযে করো সাড়ে তিন লাখ টাকা পাব। প্রয়োজনে আরও টাকা বাড়ানো হবে।
কলেজ ছাত্রী বলেন, মা জানত আমি ক্ষুধা সহ্য করতে পারি না। কিন্তু মা আমাকে দুইদিন রুমে আটকে রেখেছিল। কিছু খেতে দেয়নি। ওয়াশরুমের পানি খেয়ে কোনোরকমে প্রাণ বাঁচিয়েছি।
এ ঘটনায় সুকন্যার মায়ের দায়ের করা মামলায় তার বন্ধু ইসতিয়াক এখন কারাগারে রয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সুকন্যা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমার বন্ধু চিশতীর কোনো দোষ নেই।
এর আগে শনিবার সুকন্যার খোঁজে সংবাদ সম্মেলন করে মা নাজমা ইসলাম বলেন, আমার মেয়ে আমাকে নিয়ে বদনাম করেছে। আমি তাকে প্রহার করি মা হিসেবে কথা না শোনা, পড়ালেখাসহ নানা কারণে তাকে মারতে পারি। কিন্তু ক্লাস সেভেনের পর থেকে আমি কখনো তার গায়ে হাত দেইনি।
এদিকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে লন্ডন প্রবাসী বাবা আকুতি জানায়, সব ভুলে বাসায় ফিরে এসো মা (সুকন্যা)।
প্রসঙ্গত, ২৩ জুন সুকন্যা তার মায়ের সঙ্গে মডেল টেস্ট দিতে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে যান। পরীক্ষা শেষে অন্য শিক্ষার্থীরা বের হলেও মা নাজমা ইসলাম তার মেয়েকে খুঁজে পাননি। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, সুকন্যা পরীক্ষা দেয়নি। নিজের কাছে থাকা মেয়ের মুঠোফোনে দেখেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ চিশতীর সঙ্গে দেখা করার পূর্বপরিকল্পনা ছিল সুকন্যার।
এ তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন পুলিশ ইশতিয়াককে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে ইশতিয়াক ২৩শে জুন রাতে সুকন্যাকে নিয়ে রাজধানীর গেন্ডারিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরির কথা জানালে সুকন্যাকে রিকশায় করে বাসায় নিয়ে যাওয়ার দাবি জানায়।
পুলিশের উদ্ধারকৃত সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সুকন্যাকে ইশতিয়াকের সঙ্গে একই রিকশায় ২৩ জুন সন্ধ্যা ৭টা ৭ মিনিটে রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় দেখা যায়। প্রায় এক ঘণ্টা পর রাত ৮টা ৫০ মিনিটে দুজনকে দুটি আলাদা রিকশায় দেখা যায়।
প্রসঙ্গত, ২ মাস আগে কলেজের কথা বলে আর ফেরেনি কলেজ ছাত্রী সুকন্যা। এরপর থেকেই নানা ধরনের গুঞ্জন চলতে থাকে এই বিষয়টি নিয়ে। তবে তাকে উদ্ধার করার পরে এখনো মেলেনি অনেক তথ্য। বিশেষ করে সে কি ভাবে এতদিন বাইরে ছিল কোথায় ছিল তা নিয়ে জানা যায়নি এখনো কিছুই।