সম্প্রতি বেতন বাড়ার দাবিতে রাজধানী ঢাকায় আন্দোলন করতে দেখা যায় একঝাক গার্মেন্টস শ্রমিকদের। তবে পরবর্তীতে পুলিশের হামলায় আন্দোলন ভাঙতে বাধ্য হন শ্রমিকরা। এমনকি আন্দোলনরত অবস্থায় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় আহত হয়েছেন অনেকেই।
তবে এ ঘটনা জের ধরে এবার গ্রামের মানুষ ভালো আছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কয়েকদিন ধরে গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলন করতে দেখছি। যদি আন্দোলন করে কারখানা ও কাজ বন্ধ করে দেয় তাহলে তো চাকরি চলে যাবে।
ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (৭ জুন) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনায় যোগ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েকদিন আগে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিক্ষোভ করতে দেখেছি। আন্দোলন করে, ঠিক আছে. কিন্তু যে দেশগুলো আমাদের তৈরি পোশাক কিনবে। আমরা আরও ভালো সুবিধা পাচ্ছি। উৎপাদন বাড়ছে। এসব শ্রমিকের বেতন বন্ধ হয়নি। আমরা প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি, টাকা দিয়েছি। পোশাক কারখানার শ্রমিকরা যাতে সরাসরি ভর্তুকি দিয়ে বেতন পায় সে ব্যবস্থা করেছি। আমি সরাসরি ফোনে পেমেন্ট করেছি। মালিকদের দিইনি।
তিনি বলেন, আজকে বেতন বাড়া, এটা সেটাসহ নানা ধরনের আন্দোলন করতে যা। এই রপ্তানি বন্ধ হলে পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। তারপর ‘আম যাবে, সালাও যাবে’। বেতন না বাড়লে চাকরি চলে যাবে। ঘরে ফিরে যেতে হবে। তখন কী করবে?
‘যে নেতারা উসকানি দিচ্ছেন। তারা কাদের প্ররোচনায় উসকানি দিচ্ছে তা আমাদের ভাবতে হবে। ‘
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি আসল কথা খুব খোলাখুলি বলেছি। ক্রয়ক্ষমতাও সীমিত হয়ে যাচ্ছে। দিন দিন খারাপ হচ্ছে। আমরা আমেরিকা, ইউরোপসহ বিভিন্ন জায়গায় পাঠাই। সব জায়গায় জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। মানুষজন চরম দুর্দশায়, কত মানুষ তিনজন না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে।তার তুলনায় আমি বাংলাদেশের সবার জন্য খাবার, ভ্যাকসিন, ওষুধসহ সবকিছুই করতে পারছি।
তিনি বলেন, কেউ অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করলে আমি বলবো শেষে এ কূল, ও কূল, দু কূল হারাতে হবে। এটাও সবাইকে মনে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর দেশে স্থিতিশীলতা এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলন-সংগ্রাম, কারাবরণ বা নিপীড়ন যাই হোক না কেন আজ আমরা দেশে স্থিতিশীলতা আনতে পেরেছি। বারবার চেষ্টার পরও কি? সরকারকে উৎখাত করতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর এই প্রথম দেশটি সমৃদ্ধ হয়েছে।
জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের সুযোগ দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলোও করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক মন্দার কবলে পড়েছে। ইউরোপ ও আমেরিকায় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। সেসব দেশে পণ্যের দাম বেড়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, “ইংল্যান্ডে মানুষ আগে তিনবেলা খাবার খেত, এখন তারা এক বেলা খাবার ছেড়ে দিয়েছে। সীমিত পরিমাণে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে, কেউ এক লিটারের বেশি ভোজ্যতেল কিনতে পারবে না। এটা একটা নিষেধাজ্ঞা।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশে ভর্তুকি দিয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে। আমরা প্রণোদনা প্যাকেজ দিয়েছি। আমি রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছি। সেই অর্থ বিদ্যুৎ, গ্যাস, কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে ভর্তুকি ও সহায়তায় ব্যয় করা হচ্ছে। কারণ কোনো দেশই তা করেনি।
বিনামূল্যে করোনার টিকা ও করোনা পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তারপরও যদি কেউ গোলমাল করার চেষ্টা করে, তাহলে এই দেশ পুরোপুরি থমকে যাবে। সাধারণ মানুষের কী হবে?”
দেশে প্রতিনিয়ত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে নানা সমস্যার সম্মুক্ষিন হতে হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষকে। অনেকেই দাবি করেছেন, আগে ১০০ টাকায় সংসার চললেও এবং ১০০০ টাকায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে ইতিমধ্যে এ বিষয়টি খুতিতে দেখতে মাঠে নেমেছে সরকার।