শেখ হাসিনা কি আসলেই হিন্দুধর্ম গ্রহণ করেছেন?, যা জানা গেল

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে তিনি ভারতে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেছেন। ছবিটিতে দেখা যায়, একজন হিন্দু পুরোহিত শেখ হাসিনার কপালে তিলক এঁকে দিচ্ছেন। এই দাবিটি যাচাই করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ভারতীয় ফ্যাক্ট-চেক সংস্থা লজিক্যালি ফ্যাক্টস, যা নিশ্চিত করেছে যে ছবিটি আসল নয়, বরং এডিট করা।

ভাইরাল ছবিতে দেখা যায়, শেখ হাসিনা একটি অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে আছেন এবং একজন হিন্দু পুরোহিত তার কপালে তিলক এঁকে দিচ্ছেন। কিছু ব্যবহারকারী এই ছবি শেয়ার করে দাবি করেছেন, “বাংলাদেশে মুসলমান আর ভারতে হিন্দু,” যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। তবে ফ্যাক্ট-চেক অনুসারে, এই ছবি সম্পূর্ণভাবে এডিট করা।

মূল ছবিটি ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসের, যেখানে ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী কেরালার শিবগিরি মঠে এক পুরোহিতের কাছ থেকে তিলক নিচ্ছিলেন। সেই ছবি এডিট করে রাহুল গান্ধীর স্থানে শেখ হাসিনার ছবি বসানো হয়েছে।

২০২২ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর, ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআই রাহুল গান্ধীর কেরালা সফরের এই ছবিটি প্রকাশ করে। ছবিতে রাহুলকে মন্দিরে পুরোহিতের কাছ থেকে তিলক নিতে দেখা যায়। কংগ্রেস দলও তাদের এক্স (পূর্বে টুইটার) অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিটি শেয়ার করে।

অন্যদিকে, এডিট করা ছবিতে শেখ হাসিনার যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসের। ছবিটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের আগে তোলা হয়। ছবিটি ফরাসি সংবাদ সংস্থা এএফপি-এর মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।

ফ্যাক্ট চেকের ফলাফল
১. রাহুল গান্ধীর ছবিটি এডিট করে সেখানে শেখ হাসিনার ছবি বসানো হয়েছে।
২. এডিট করা ছবিতে দৃশ্যত তিলক আঁকার দাবি করা হলেও এটি সত্য নয়।
৩. শেখ হাসিনার হিন্দু ধর্ম গ্রহণের দাবিটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

শেষ কথা
ভাইরাল হওয়া এই ছবিটি একটি মিথ্যা প্রচারণার অংশ। আসল ছবিতে রাহুল গান্ধী কেরালার একটি ধর্মীয় স্থানে পুরোহিতের কাছ থেকে আশীর্বাদ নিচ্ছিলেন। সেটিকে এডিট করে শেখ হাসিনার ছবি বসানো হয়েছে। এমন ভুয়া খবর ছড়ানো থেকে বিরত থাকা উচিত এবং যাচাই-বাছাই ছাড়া এসব খবর বিশ্বাস করা উচিত নয়।


চৌদ্দগোষ্ঠীর রাজনৈতিক পরিচয় খুঁজে ১৫ বছরে পুলিশে নিয়োগ ৯০ হাজার

বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে গত ১৫ বছরে ৮০ থেকে ৯০ হাজার সদস্যকে রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগ প্রার্থীদের চৌদ্দ গোষ্ঠীর রাজনৈতিক পরিচয় খতিয়ে দেখে এ নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। সোমবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য প্রকাশ করেন।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, “গত ১৫ বছরে পুলিশে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের এবং তাদের পরিবারের রাজনৈতিক পরিচয় যাচাই করা হয়েছে। প্রার্থীর বাবা, দাদা এমনকি পূর্বপুরুষরা কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তা পর্যন্ত খতিয়ে দেখা হয়েছে। বর্তমানে দুই লাখ পুলিশ সদস্যের মধ্যে ৮০ থেকে ৯০ হাজার সদস্য এইভাবে নিয়োগ পেয়েছেন।”

তিনি আরও বলেন, “এত বিপুল সংখ্যক সদস্যকে এখন আর বাহিনী থেকে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে যারা অপেশাদার আচরণে লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে আমরা কাজ করছি।”

ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ডিএমপি কমিশনার জানান, শহরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, “অটোরিকশা চলাচল নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে ঢাকার রাস্তায় হাঁটারও জায়গা থাকবে না। এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।”

সম্প্রতি রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, “ছিনতাই প্রতিরোধে ডিবি ও থানা পুলিশকে সক্রিয় করা হয়েছে। নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি।”

ডিএমপি কমিশনার ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় পুলিশের পেশাদারিত্বের অভাবের জন্য ক্ষমা চেয়ে বলেন, “তৎকালীন পরিস্থিতিতে কিছু অপেশাদার আচরণ দেখা গেছে। এ কারণে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং তাদের মধ্যে কয়েকজনকে বদলি করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার ফলে ঢাকা শহরে ডাকাতি এবং লুটপাট বেড়ে যায়। তখন সাধারণ মানুষকেও লাঠি হাতে পাহারা দিতে দেখা গেছে। তবে পুলিশকে পুনরায় সক্রিয় করতে আমরা কাজ করেছি এবং এখনো করে যাচ্ছি।”