ছাত্র ও জনসাধারণের আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই থেকে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। এদিকে, তাকে দেশে ফিরিয়ে বিচারের আওতায় আনার দাবি ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ৮ আগস্ট শপথ নেওয়ার পর জানান, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা জরুরি। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনও আদালতের নির্দেশ পেলে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চালানোর কথা বলেন।
প্রশ্ন উঠছে, অন্তর্বর্তী সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে যদি ভারতের কাছে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চায়, ভারত কি তা প্রত্যাখ্যান করতে পারবে? ২০১৩ সালে স্বাক্ষরিত এবং ২০১৬ সালে সংশোধিত ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশ একে অপরের কাছে পলাতক অপরাধীদের ফেরত দেওয়ার জন্য বাধ্য।
এই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি কোনো গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত হন বা এক বছরের বেশি কারাদণ্ডের শাস্তি পান, তবে উভয় দেশ তাকে ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা, গুম এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, যা রাজনৈতিক অপরাধের আওতায় পড়ে না। ফলে, ভারত আইনি ভিত্তিতে তাকে ফেরত দিতে বাধ্য।
তবে, চুক্তির ৬ নম্বর ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো রাষ্ট্র মনে করে যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, তবে প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া থেকে সরে আসার অধিকার রয়েছে। এই ধারাটি ভারতের জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরত না দেওয়ার একটি আইনি সুযোগ হতে পারে। তারা দাবি করতে পারে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে সৎ উদ্দেশ্যে নয়, বরং রাজনৈতিক কারণে।
শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন। তাই নয়াদিল্লি যদি তাকে ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানায়, সেটি দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। যদিও এমন একটি সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি করতে পারে, তবে বিষয়টি কীভাবে এগোবে, তা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর নির্ভর করবে।
এই পরিস্থিতিতে, শেখ হাসিনা ইস্যুতে ভারত তার কৌশলগত অবস্থান পরিবর্তন করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।