বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে। গণহত্যার অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতিও চলছে। তার কূটনৈতিক (লাল) পাসপোর্ট বাতিল হওয়ায় অন্য দেশে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে গেছে। ভারতীয় আইন অনুযায়ী, শেখ হাসিনা বিনা ভিসায় ভারতে ৪৫ দিন থাকতে পারবেন, যার মধ্যে ২৯ দিন অতিবাহিত হয়েছে। ফলে, তার হাতে এখন ১৬ দিন বাকি।
এই পরিস্থিতিতে, শেখ হাসিনার সামনে দুটি প্রধান বিকল্প রয়েছে: হয় তিনি ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইবেন, নয়তো দেশে ফিরে আসবেন। ৭৭ বছর বয়সী এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী বর্তমানে অন্য কোনো অপশন নেই।
ভারত এখন সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে। তারা কি শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেবে, যেমন ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেওয়া হয়েছিল? সে সময় হাসিনা ছয় বছর ভারতীয় রাজধানী নয়াদিল্লিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
ভারতের নীতি বিষয়ক উদ্বেগ এখন দ্বিগুণ। তারা যদি শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়, তবে বাংলাদেশ সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে, যা বর্তমানে খুবই তিক্ত। এছাড়া, ভারতের সাম্প্রতিক কার্যক্রম নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে নানা প্রশ্ন উঠছে।
ভারত কি শেখ হাসিনাকে নিরাপত্তা দেবে? পাসপোর্ট বাতিল হওয়ায় শেখ হাসিনা এখন উদ্বাস্তু অবস্থায় রয়েছেন। অন্য কোনো দেশে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও তা অত্যন্ত কঠিন। চীন এবং ভারত উভয়ই হাসিনাকে নিয়ে আগ্রহী ছিল, তবে বর্তমানে পরিস্থিতি বদলে গেছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো স্পষ্ট মন্তব্য করেননি। যদি হাসিনা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে বসেন, তবে ভারতের নীতি কী হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ইতিমধ্যে এমন একটি ইঙ্গিত দিয়েছেন।
ভারতের উদ্বেগের বিষয় হলো সেভেন সিস্টার অঞ্চল। হাসিনার সময় কিছু অর্জন হলেও তা হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। ভারতের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ যে তারা চীনের আগমন ঠেকাতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও তাদের অবস্থান শক্তিশালী করেছে এবং ঢাকা এখন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অধীনে রয়েছে, যিনি বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রাখতে সক্ষম।
কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা নরেন্দ্র মোদির সরকারকে আবেগতাড়িত না হয়ে বাস্তব সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন। বর্তমানে হাসিনার দেশে ফিরে আসা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই, কারণ গণহত্যার অভিযোগে তিনি অভিযুক্ত হতে যাচ্ছেন। বিশ্বের কোনো গণতান্ত্রিক দেশ তাকে গ্রহণ করতে চায় না। ভারতের অবস্থানও বর্তমানে প্রশ্নবিদ্ধ, বিশেষ করে কোটা বিরোধী আন্দোলন এবং বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বন্যার প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষাপটে। উত্তরে চীন ও পশ্চিমে পাকিস্তানের পাশাপাশি ভারত কোনো নতুন নিরাপত্তা ফ্রন্ট খুলবে কি না, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিচ্ছেন, কারণ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের নজর রয়েছে এসব ঘটনায়।