নাম হাবিবুর রহমান। তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। তবে অন্য আর ৮-১০ জনের তিনি শারীরিক দিক দিয়ে তিনি সবল নন। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হওয়ায় নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় তাকে। কিন্তু এরপরও দমে যাননি তিনি। গত বছর ২৫ আগেই নিজ উদ্যোগে অটিজম ও প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন হাবিবুর রহমান।
স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় বিদ্যালয়টি চলছে। তবে প্রতিষ্ঠার ২৫ বছর পেরিয়ে গেলেও বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যালয় পরিচালনায় চরম বিপাকে পড়েছে কর্তৃপক্ষ।
রোববার (৯ অক্টোবর) সকালে প্রতিষ্ঠানটির এমপিওভুক্তির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলতে নেত্রকোনা জেলা শহরের পারলা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ১৫৯ কিলোমিটার হেঁটে ঢাকায় যাত্রা শুরু করেন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষক হাবিবুর রহমান। এসময় জেলার বিভিন্ন প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা উপস্থিত থেকে এ কর্মসূচির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
জানা যায়, নেত্রকোনা সদর উপজেলার সাজিউড়ায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষক হাবিবুর রহমান ১৯৯৭ সালে ২০ শতাংশ জমিতে অটিজম ও প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। স্কুলে বর্তমানে ১৬৪ জন বিভিন্ন ধরণের প্রতিবন্ধী ছাত্র এবং 14 জন শিক্ষকতা কর্মী রয়েছে। সেখানে ১০ জন শিক্ষার্থী আবাসিক হিসেবে বিদ্যালয়ে থেকে লেখাপড়া করে আসছে।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা হাবিবুর রহমান বলেন, সরকারি নিয়ম অনুসরণ করে বিভিন্ন সময়ে এমপিওভুক্তির জন্য অনেক আবেদন করা হয়েছে। এটা কাজ হয়নি। . ২৭ নভেম্বর ২০১৮ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে পরিচালক-7 আল মামুন মুর্শেদ স্বাক্ষরিত একটি চিঠি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠানো হয়। এর মধ্যেও বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়নি।
তিনি আরও বলেন, গত বছরের ৩১ জানুয়ারি সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য হাবিবা রহমান খান শেফালী জাতীয় সংসদে স্কুলের দুর্দশা ও এমপিওভুক্তির কথা তুলে ধরে ১ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড ভাষণ দেন। তবে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়নি। এ অবস্থায় শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। তাদের খুব কষ্টে বাঁচতে হয়।
প্রতিদিন ২৫ কিলোমিটার হেঁটে ৭ দিনে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে পৌঁছাতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরতে এবং ভবিষ্যতে স্কুলটিকে এমপিওভুক্ত করার শেষ আশা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন জানাতে ১৫৯ কিলোমিটার হাঁটা শুরু করি।
তার এই আত্মবিশ্বাস ও অক্লান্ত পরিশ্রম রীতিমতো মুগ্ধ করেছে সবাইকে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও হাবিবুর রহমান যে কাজ করে দেখাচ্ছেন, তা যেন অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে সবাইকে।