সারা বিশ্বের মানবাধিকার রক্ষা করার জন্য সচেষ্ট কাজ করে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং দেশটির স্টেট ডিপার্টমেন্ট। আর এই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মুখপাত্র নেদ প্রাইস বলেছেন বাংলাদেশ নিয়ে কথা। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ, স্বচ্ছ, শান্তিপূর্ণ ও প্রকৃত নির্বাচনের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নির্বাচন প্রশ্নে শেখ হাসিনার কথা ও কাজের সঙ্গে তাল মেলাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।
গেলো শুক্রবার (৬ জানুয়ারী) ওয়াশিংটনে ফরেন প্রেস সেন্টারে অনুষ্ঠিত মার্কিন পররাষ্ট্র নীতির হালনাগাদ বিষয়ে এক বিশেষ ব্রিফিংয়ে দেশটির পক্ষ থেকে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র নেড প্রাইস।
ব্রিফিংয়ে অংশ নিয়ে সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওপর জোর দিচ্ছে। আপনি গণতান্ত্রিক অধিকার সমুন্নত রাখার কথা বলতে থাকেন। কিন্তু দেশের চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী অবস্থান সত্ত্বেও, আমরা ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে দুটি প্রহসনের নির্বাচন প্রত্যক্ষ করেছি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এখন মার্কিন নির্বাচন এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন; বলা হয়, এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় না, বাংলাদেশের চেয়ে বেশি মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ব্যবস্থার ত্রুটি তুলে ধরে জ্ঞান বিতরণ করেন। এমন বাস্তবতায় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কী হবে?
জবাবে, প্রেসিডেন্ট ওবামার বিশেষ সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা বর্তমান স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার সরকার বাংলাদেশের আসন্ন সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হতে চায়। আমরা এই অনুরোধকে স্বাগত জানাই এবং তার কথাকে তার কাজের সাথে মেলাতে চাই। তার আগে একটা ধারণা পেতে চাই সরকার কীভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ করবে, যা একটি নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। আমি দেখতে চাই একটি প্রকৃত অবাধ, স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকার কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে।
নেড প্রাইস বলেন, যদিও নির্বাচনের দিন এখনো আসেনি, তবুও বাংলাদেশ প্রকৃত নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে। আমরা শুধুমাত্র একটি প্রকৃত, স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন প্রক্রিয়া আয়োজনের লক্ষ্যে গঠনমূলক উদ্যোগে সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসব।
মুখপাত্র নেড প্রাইস, একজন প্রাক্তন সিআইএ অফিসার, বলেছেন: “আমরা বিরোধী রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের সহিংসতা, হয়রানি এবং ভয় দেখানোর ঘটনা সম্পর্কে সচেতন এবং সরকারের কাছে আমাদের উদ্বেগ উত্থাপন করেছি। এবং আমরা এই ধারা অব্যাহত রাখব।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র নেড প্রাইস বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশে আমাদের রাষ্ট্রদূত দারুণ কাজ করছেন। তিনি শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করেননি, কিন্তু গণতন্ত্র ও মানবাধিকার, আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূল ভিত্তি সমুন্নত রাখতে অক্লান্ত ভূমিকা পালন করেছেন এবং চালিয়ে যাবেন।
প্রসঙ্গত, শুধু এবারই নয় এর আগেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ নিয়ে বলেছে অনেক কথা। বিশেষ করে দেশের বিরোধী দলের উপর দমন পীড়ন বাদ দিয়ে এক সাথে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার আহবান করেছে দেশটি। আর সেই সাথে পরবর্তী নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে বলেও জানিয়েছে দেশটি।