বাংলাদেশের একজন নামকরা প্রথিতযশা অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর। তিনি শুধু অভিনয়ে নন, তিনি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের একজন বিশেষ ব্যক্তিত্ব। সেইসাথে তিনি একজন সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কিছুদিন আগে আসাদুজ্জামান নূরের দুটি চোখে সমস্যা দেখা দিলে তার চোখ অপারেশন করা হয়। এবার সেই অপারেশনের ভিন্ন এক অভিজ্ঞতার গল্প শোনালেন জনপ্রিয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর।
আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “আমার প্রথম চোখের অপারেশনের কয়েক মাস পর আমার আরেকটি অপারেশন হয়। ডাঃ মাহবুব (চক্ষু বিশেষজ্ঞ) একজন অত্যন্ত স্মার্ট, রুচিশীল মানুষ। গান শুনতে ভালোবাসেন তিনি। তার চেম্বারে গানও বাজানো হয়। রোগীরা গান শুনতে শুনতে তার সাথে কথা বলেন। আমার অপারেশনের দিন তিনি আমাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। এ সময় একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত আছে- ‘যতবার আলো জ্বালাতে চাই, নিভে যায় বারে বারে’।
গানটা শুনে মনে ভ”য় ঢুকে গেল। ডাক্তার সাহেবের যে রুমে গান বাজছে, সে রুমে আমার চোখে আলো জ্বালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আর গানটি বাজছে ‘যতবার আলো জ্বালাতে চাই, নিভে যায় বারে বারে’।
চিকিৎসকদের উদ্দেশে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আমি আপনাদের অনুরোধ করবো যত খুশি গানটি বাজান, তবে গান নির্বাচনের বিষয়ে ভালোভাবে চিন্তা করুন।
তার বক্তব্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মধ্যে হাসির সৃষ্টি হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শহীদ মিল্টন হলে সচেতনতা মাস বুধবার বাংলাদেশ সোসাইটি অব ক্যাটারাক্ট অ্যান্ড রিফ্লেকটিভ সার্জনস (বিএসসিআরএস) বিএসসিআরএসের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ জাফর খালেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডা. অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শরফুদ্দিন আহমেদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর আরও বলেন, সুস্থ থাকতে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরি। আমরা যেভাবে টেলিভিশন, মোবাইল, কম্পিউটার দেখি তাতে চোখের অনেক ক্ষতি হয়। এটি শি”/শুদের মধ্যে বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
তিনি আরও বলেন, শি”/শুরা বইয়ের চেয়ে মোবাইল ফোন পছন্দ করে। এভাবে চলতে থাকলে শুধু চোখই নয়, শারীরিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে সব বয়সের মানুষকে তার চোখ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
বিএসএমএমইউ ভিসি প্রফেসর ড. মোঃ শরফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০৩২ সালের মধ্যে দেশে ৩,২০০ চক্ষু বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হবে। এখন মাত্র ১,৪০০ জন। আগামী বছরগুলোতে এই সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, ওষুধসহ স্বাস্থ্য খাতে জনবল ও দক্ষ জনবল খুবই কম। এ সংকট কমাতে হবে। চিকিৎসকের কোর্সে শিক্ষার্থী বাড়বে। চোখের ডাক্তারদের শুধু প্রশিক্ষণ দিলেই হবে না, অপারেশন সম্পর্কেও জানতে হবে।
অধ্যাপক ডাঃ মোঃ শরফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ছানি নিয়ে রোগীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। অনেক রোগীর ছানি অপারেশনের প্রয়োজন হয় কিন্তু রোগীরা তা করতে চান না। তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং অপারেশনের ভয় দূর করতে হবে।
মোঃ শরফুদ্দিন আহমেদ রচিত এবং আনোয়ার পারভেজ, প্রভাষক, স্নাতক নার্সিং বিভাগের (ইংরেজি) সম্পাদিত চোখের সমস্যা ও সমাধান বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড.
বাংলাদেশ সোসাইটি অব ক্যাটারাক্ট অ্যান্ড রিফ্লেক্টিভ সার্জনস মহাসচিব অধ্যাপক মোস্তাক আহমেদ ছানি সচেতনতা বিষয়ক প্রেজেন্টেশন দেন।
আসাদুজ্জামান নূর শুধু একজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নন, তিনি রাজনীতিতে নেমে জনসাধারণের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি এই অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলেন জনগণের জন্য আপনাদের চিকিৎসাসেবা কাজে লাগাবেন, শুধু বাণিজ্যিকভাবে চিকিৎসা নয়, নিজেদেরকে জনকল্যাণে নিয়োজিত করবেন, এটাই আশা করি আপনাদের কাছ থেকে।