সম্প্রতি আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় এক ধরনের রাজনৈতিক দাপটে ঝরে যাচ্ছে দেশের কিংবদন্তীরা। কিন্তু সবাই নীরবে দেখছে তবে মুখ খুলছে না।কারণ তারা জানে মুখ খুললে তাদের একই অবস্থা হবে।এভাবে চলতে থাকলে সামনে ভয়াবহ অবস্থা হবে গোটা বিনোদন জগতে।বিষয়টি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন লেখিকা মিলি সুলতানা হুবহু পাঠকদের জন্য নিচে দেওয়া হলো।
আজ সাদী মহম্মদের অনুজ শিবলী মহম্মদের করুণ কান্না দেখে আমিও চোখের জল ফেললাম। বুকের আনাচে কানাচে উঁকি দিয়ে উঠলো স্বজন হারানোর নিদারুণ কষ্ট। মনে হলো আমাদের রক্তের এক ভাই কাঁদছেন আরেক ভাইয়ের জন্য। দেশবরেণ্য সংগীতশিল্পী সাদী মহম্মদের মৃত্যু আমাদের নির্লজ্জ মুখে চপেটাঘাত করে গেলো। আমরা তার সম্মান দিতে পারিনি। আমাদের লজ্জায় গুটিসুটি হয়ে মরে যাওয়া উচিত। কিন্তু আমরা মরিনা, সাদী মহম্মদের দ্বারা চপেটাঘাতেও আমাদের লজ্জাবোধ নেই। যদিও আত্মহত্যা আমরা কেউ সমর্থন করিনা। কিন্তু এটাও ওভারলুক করলে চলবেনা কেন জাতীয় পর্যায়ে দেশবরেণ্য শিল্পীদের অবহেলা করা হয়। আমরা তেলা মাথায় তেল দেই। সাবিনা ইয়াসমিন রুনা লায়লা ছাড়াও আমাদের দেশে শাহনাজ রহমতুল্লাহ, আবিদা সুলতানা নার্গিস পারভীন,শাম্মি আকতারের মত বরেণ্য শিল্পী আছেন। একমাত্র আবিদা সুলতানা ছাড়া বাকি তিনজনই আজ মৃত। কিন্তু তাঁদের জীবদ্দশায় রাষ্ট্র কেন তাঁদেরকে মূল্যায়ন করেনি? পুরুষদের মধ্যে বেঁচে আছেন সৈয়দ আবদুল হাদী, মোঃ খুরশিদ আলম, রফিকুল আলম। কিন্তু তাঁদেরকে যোগ্য সম্মান দেয়া হয়নি। অযোগ্যদের ডেকে নিয়ে তাদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে সম্মানসূচক রাস্ট্রীয় পদক। কেন এই বৈষম্য?সাদী মহম্মদ কি শুভ্রদেবের চেয়েও অযোগ্য নাম ছিলেন?পঁচা পঁচা গান গেয়ে শুভ্রদেবরা পদক হাতিয়ে নিচ্ছেন। আর অভিমানের আগ্নেয়গিরিতে জ্বলে শেষ হয়ে গেলেন সাদী মহম্মদের মত কিংবদন্তী। কিন্তু আমরা বেহায়া নির্লজ্জ আর নির্লিপ্ত। সাদী মহম্মদকে বিচার করলে বলা যায় পদক প্রাপ্তিতে তিনিই এগিয়ে ছিলেন। কি এমন ক্ষতি হত তাকে জাতীয়ভাবে সম্মানিত করলে?? সংস্কৃতির প্রতিটি শাখা প্রশাখায় উইপোকাদের বিচরণ। তাদের অশুভ তৎপরতার কারণে যোগ্য ব্যক্তিকে অবহেলা করা হচ্ছে। সাংস্কৃতিক জগত ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে। আজ যদি সাদী মহম্মদকে মূল্যায়ন করা হত তিনি হয়ত ব্যক্তিগত বিষাদে ভুগতেন না। পুরস্কারপ্রাপ্তির আনন্দর মধ্যে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারতেন।
বস্তুত আরো আগেই তাঁকে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি দেয়া উচিত ছিল। কিন্তু শুভ্রদেব গংদের অশুভশক্তির দাপটের কাছে মার খেয়ে যাচ্ছেন আমাদের সংগীত জগতের কিংবদন্তীরা। যার ফলে তাঁরা অবসাদে ভূগছেন। এভাবে একে একে গুণীদের যদি অবসাদের দিকে ঠেলে দেয়া হয় দেশের সংস্কৃতিরও অপমৃত্যু হবে। যাঁরা একবুক অভিমান নিয়ে চলে গেছেন তাঁদের তো আর আমরা ফিরে পাবোনা। কিন্তু যাঁরা বেঁচে আছেন এটলিস্ট তাঁদের অবদানকে পুরস্কৃত করার উদার মানসিকতা আর ইচ্ছাশক্তি যেন প্রয়োগ করি।