বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশের সবচেয়ে নামকরা এবং দামি যে হাসপাতাল, সেই হাসপাতালেই বেগম জিয়ার চিকিৎসা হচ্ছে। ওনার ছেলে তারেক তার স্ত্রী একজন ডাক্তার। শুনলাম তার শাশুড়িকে অনলাইনে দেখে থাকে। ছেলে কোথায়, ছেলের বউ তো তাকে কখনো দেখতে আসেনি। অবশ্য কোকোর স্ত্রী তার কাছে এসে দেখভাল করছেন। তারা তো ওনাকে দেখতে আসেনি। যা-ই হোক, বিএনপি এত দিন পর সুযোগ পেয়েছে। খালেদা জিয়ার অসুস্থতার জন্য তারা আন্দোলন শুরু করছে। এটা খুব ভালো, তারা চালিয়ে যাক. কিন্তু আমার যা করার সাধ্য বা করার যতটুকু ছিল সেটুকু করেছি।
বুধবার (৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আওয়ামী যুবলীগের ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এরশাদকে তো কারাগারে ব’ন্দি করে রেখেছিল। তাকে চিকিৎসার জন্য কোনওদিনও সুযোগ করে দেয়নি। রওশন এরশাদকে দেয়নি। আবার জিয়াউর রহমান যখন ক্ষমতায় আমাদের সাজেদা চৌধুরীর অপারেশন হয়েছিল। ঘা শুকায়নি। সেই ব্যান্ডেজ অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করে জিয়াউর রহমান জেলে ভরেছিল। ঠিক একই অবস্থা মতিয়া চৌধুরীর, তাকেও তখন জেলে দিয়েছিল। তারও তখন টিবি হয়েছিল, অসুস্থ ছিল। তাকেও জে’লে দিয়েছিল। এ রকম বহু অন্যায়-অবিচারের কথা আছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমি বিএনপির নেতাদের জিজ্ঞাসা করি—তারা যে সহানুভূতি দেখাতে বলে, তারা যে সহযোগিতা চায়—খালেদা জিয়া কেমন আচরণ করেছিল? একুশে আগস্ট যে গ্রেনেড হা’মলা তার আগে খালেদা জিয়ার কী বক্তব্য ছিল? শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা কোনও দিন বিরোধী দলের নেতাও হতে পারবে না—এই বক্তৃতাই তো খালেদা জিয়া দিয়েছিল এবং আওয়ামী লীগ একশো বছরেও ক্ষমতায় যেতে পারবে না। আল্লাহর খেলা বোঝা তো ভার। বরং খালেদা জিয়াই প্রধানমন্ত্রী হতে পারেনি, বিরোধী দলীয় নেতাও হতে পারেনি। এটা তার ওপরেই ফলে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারপরও সে যখন অসুস্থ এবং দুর্নীতির দায়ে দোষী—সে দুর্নীতিটা কী? গ্যাটকোর কেস তার বিরুদ্ধে, নাইকোর কেস তার বিরুদ্ধে এবং এটা কিন্তু আমাদের না। আমেরিকার এফবিআই তারা খুঁজে বের করেছে। সিঙ্গাপুরে তার এবং তার ছেলের দুর্নীতি বেরিয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাই বের করেছে। সেই কেইসগুলো তো আছেই। সবচেয়ে বড় কথা এতিমদের জন্য টাকা এসেছিল। সেই এতিমদের টাকা এতিমদের হাতে কোনওদিন পৌঁছায় নাই। সে টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে রেখে দিয়েছে।
তিনি বলেন, নিজেই খেয়েছে সে টাকা, খালেদা জিয়াই ভোগ করেছে এতিমের অর্থ। কাজেই সেই সাজা পেয়েছে এবং সেই সা’জা সে ভোগ করছে। তারপর সে কা’রাগারে ছিল। খালেদা জিয়ার বড় বোন আর ভাই আমার কাছে এসেছে। বোন, বোনের স্বামী, ভাই এরা সব এসেছিল। আসলো যখন খুব স্বাভাবিকভাবে রেহানাও আমার সঙ্গে উপস্থিত ছিল। একটা মানবিক দিক থেকে আমি তাকে তার বাড়িতে থাকার একটা ব্যবস্থা—আমার অ্যাক্সিকিউটিভ পাওয়ারে আমি যতটুকু করতে পারি অর্থাৎ নির্বাহী যে ক্ষমতাটা আমার আছে সেটার মাধ্যমে আমি তার সাজাটা স্থগিত করে তার বাসায় থাকার অনুমতি এবং চিকিৎসার অনুমতি দিয়েছি।
সরকার প্রধান বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে এ দেশের কী অবস্থা ছিল? আজকে তার চিকিৎসার জন্য এত চেঁচামেচি করে বেড়াচ্ছে। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে সাবেক সেনা প্রধান জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান যখন অসুস্থ তাকে সিএমএইচে চিকিৎসা পর্যন্ত করতে দেয় নাই, এমন কী সে যখন আইসিইউতে ভর্তি তাকে স্ট্রেচারে করে কোর্টে নিয়ে হাজির করেছে। তাকে জেনারেল পদ দেওয়া হয়েছিল সেটা বাতিল করে দিয়েছিল। তার প্রমোশনও বাতিল করেছিল। এমন কী আমি সে’নাবাহি’নীতে যখন নারী অফিসারদের ভর্তি নিশ্চিত করি কারণ আমাদের সশ’স্ত্র বাহিনীতে আগে নারী সদস্য ছিল না।
তিনি বলেন, মেয়েরা সে’নাবাহিনীতে ছিল না, আমি তাদেরকে নেই। মোস্তাফিজের ছোট মেয়ে সে প্রথম ব্যাচে জয়েন করে। তার পাসিং আউট প্যারেড যখন হয় খালেদা জিয়া ক্ষমতায়। আমি একটা নিয়ম করেছিলাম সেটা এখনও চলমান—বাবা-মা তাদের প্যারেডে উপস্থিত থাকবে। তারা নিজের হাতে তার সন্তানকে ব্যাজ পরাবে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো খালেদা জিয়া জেনারেল মোস্তাফিজ এবং তার স্ত্রীকে আসতে দেয়নি। তার মেয়ের ব্যাজটা তারা পরাতে পারেনি। অথচ এরাই ছিল সেনাবাহিনীতে প্রথম নারী অফিসার। কিন্তু মোস্তাফিজের সেই পারমিশনটা পর্যন্ত ছিল না—এই হলো খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন, আমাদের পার্টির অনেক নেতাকে গ্রেফতার করে যে অকথ্য অত্যাচার করেছে— বাহাউদ্দিন নাছিম থেকে শুরু করে মহিউদ্দিন খান আলমগীর, সাবের হোসেন, শেখ সেলিমসহ বহু নেতাদেরকে গ্রেফতার করে তাদের উপর অকথ্য নির্যাতন করেছে। নাসিমকে তো এমন অত্যাচার করেছিল যে তাকে মৃত মনে করে তাড়াতাড়ি কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। সে বেঁচে গেছে। দিনের পর দিন অত্যাচার করেছে—আবার সে অত্যাচারের ভিডিও নিয়ে খালেদা জিয়া-তারেক জিয়া দেখে উৎফুল্ল হয়েছে। এই ধরণের হিংস্র একটা চরিত্র আমরা দেখেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু তাই না, খালেদা জিয়ার ছেলে কোকো যখন মারা গেলো—আমি গেলাম সহানুভূতি দেখাতে। আমি হঠাৎ করে যাইনি। আমার এখান থেকে আমার মিলিটারি সেক্রেটারি যোগাযোগ করেছে। এডিসি যোগাযোগ করেছে। সময় নির্দিষ্ট করা হয়েছে। আমি সময় মতো গেছি। আমার এখান থেকে এসএসএফ গেছে, সেখানে তারা দেখেছে কোথায় যাব। আমি যখন রওনা হয়ে গেছি, গুলশান রোডে ঢুকছি তখন শুনলাম ওই বাড়ির মেইন গেট খুলবে না, আমার গাড়ি ঢুকতে দেবে না। তা আমি বললাম—এতদূর যখন চলে আসছি ফিরে আসবো কেন? পাশে নিশ্চয়ই পকেট গেট আছে, সেখান দিয়ে যাব। যখনই আমার গাড়িটা বাড়ির সামনে থেমেছে আমার যে এসএসএফ অফিসারটা ভেতরে ছিল—সে আমাকে ভেতরে নিতে জাস্ট বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে দরজাটা বন্ধ করে তালা দিয়ে দেয় তারা। আমি গাড়ি থেকে নেমে বেকুব হয়ে গেলাম, আমি আর ঢুকতে পারি না। আমি গেছি একটা সন্তানহারা মাকে সহানুভূতি দেখাতে। আর সেখানে এইভাবে অপমান করে ফেরত দিয়েছে আমাকে।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ সালে একটা ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিল। কারণ তার ইচ্ছা ছিল কোনওমতো জনগণের ভোটটা চুরি করে সে ক্ষমতায় টিকে থাকবে। কিন্তু চুরি করা সম্পদ যে ধরে রাখা যায় না, জনগণের ভোট চুরি করলে আর ক্ষমতায় থাকা যায় না—সেটা সে বুঝতে পারেনি। ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে কর্নেল রশীদ এবং মেজর হুদা—একজনকে কুমিল্লা থেকে আরেকজনকে চুয়াডাঙ্গা থেকে সেই ভোটারবিহীন নির্বাচনে নির্বাচিত ঘোষণা করে পার্লামেন্টে এনে বসায়। আর জিয়াউর রহমান যেমন ওই রাজাকার-আলবদর বা’হিনী এবং যুদ্ধাপরা’ধীদের ছেড়ে দিয়ে তাদেরকে মন্ত্রী, উপদেষ্টা করেছিল খালেদা জিয়াও সেই একই পদাঙ্ক অনুসরণ করে—সেই যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানায় এবং ক্ষমতায় বসায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া ১৫ ফেব্রুয়ারির সেই ভোট চুরি করা নির্বাচন টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়নি। ভোট চুরির অপরাধ মানুষ সহ্য করেনি, বাংলাদেশের জনগণ এটার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে এবং ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। খালেদা জিয়া টিকতে না পেরে সেই সময় পদত্যাগ করেছিল, গণ-আন্দোলনের মুখে পড়ে তিনি এটি করেছিলেন এটি দেশের জনগণের মনে রাখা উচিত। ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট চুরি করার মাধ্যমে তিনি নিজেকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন। তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। আর ঠিক দেড় মাসের মাথায় তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়।