সম্প্রতি বরখাস্ত হওয়া মুরাদ হাসান শুধু যে এখনই সমালোচিত তা নয়। আগের থেকেই তিনি একজন বিতর্কিত মানুষ। নারীবিদ্বেষী মূলক আচরণ নিয়ে এর আগেও তিনি বেশ কয়েকবার আলোচনার শীর্ষে আসেন। নারীদের অবমাননার অভিযোগ অনেক আগে থেকেই তার প্রতি রয়েছে। বাংলাদেশের বড় বড় চিত্র নায়িকাদের নিয়ে কটুক্তি করা যেন তার কাছে নতুন কিছু নয়। তাদের ফিগার নিয়ে কথা বলা, অশালীন ভাষা ব্যবহার, নায়িকাদের কে কুপ্রস্তাব দেওয়া এ যেন মুরাদ হাসানের বৈশিষ্ট্য।
বিকৃত, যৌন হয়রানিমূলক ও নারীবিদ্বেষী বক্তব্য দিয়ে নেট দুনিয়া এবং গণমাধ্যমে সম্প্রতি সমালোচনা ও তোপের মুখে পড়েন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। এরপরই তাকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে ডা. মুরাদ হাসানের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে প্রায়ই বিভিন্ন সিনেমার মহরতে দেখা যেত। সেসব অনুষ্ঠানে গিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নায়িকার ‘ফিগার’ নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেন তিনি।
একটি সিনেমার মহরতে চিত্রনায়িকা মৌসুমীকে কটাক্ষ করে ডা. মুরাদ হাসান বলেন, ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ অসাধারণ একটি সিনেমা। সুপার-ডুপার হিট। মৌসুমী এখনও অভিনয় করছেন। সবই ভালো, শুধু ওয়েটটা (শারীরিক ওজন) কমাতে হবে। ফিল্মে যারা অভিনয় করবেন, তাদের কাছে হাতজোড় করে অনুরোধ করছি, ওয়েটটার (শারীরিক ওজনের) দিকে নজর রাখবেন।
একই বিষয় নিয়ে সম্প্রতি আবারও ‘ময়ূরাক্ষী’ সিনেমার মহরতে কথা বলেন ডা. মুরাদ হাসান। তিনি বলেন, এর আগে মৌসুমীকে নিয়ে কথা বলেছিলাম। অনেকেই মাইন্ড করেছেন। মৌসুমীকে টার্গেট করে বলেছি, তা তো নয়। আমি সবাইকে বলেছি। একজন নায়িকার ওয়েট কন্ট্রোল করতে হবে। নায়িকার ভূমিকায় কেউ যদি এমন ‘মোটাসোটা’ হয়, এতে বাংলাদেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়।
এ সময় চিত্রনায়িকা শিরিন শিলার দিকে তাকিয়ে তার ফিগারের প্রশংসা করেন ডা. মুরাদ হাসান। তিনি বলেন, ‘দেখেন শিরিন শিলা সুন্দর পাতলা স্লিম।’ সেখানে তিনি আদর্শ ফিগার হিসেবে ঐশ্বরিয়া রাই, ক্যাটরিনা কাইফ, কারিনা কাপুরদের নাম উল্লেখ করেন। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনেকেই তখন সিনিয়র অভিনেত্রী মৌসুমীকে নিয়ে এসব মন্তব্যে বিব্রত হয়েছিলেন।
সম্প্রতি ডা. মুরাদ হাসান বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তার মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে একটি অনলাইন সাক্ষাৎকারে অসৌজন্যমূলক কথা বলেন। এরপরই প্রতিমন্ত্রী মুরাদের একটি কথোপকথন ফাঁস হয়, যেখানে তিনি অশ্লীল ভাষায় চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে কথা বলেন। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন মহলে ডা. মুরাদের শাস্তির দাবি ওঠে।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে ১৪১, জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী, মেস্টা ও তিতপল্যা) সংসদীয় আসন থেকে বিপুল ভোটে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ডা. মুরাদ হাসান। তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে মহান জাতীয় সংসদের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রতিনিধি দলের সদস্য হিসেবে বিভিন্ন দেশ সফর করেন। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪১, জামালপুর-৪ সংসদীয় আসন থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে দ্বিতীবারের মতো সংসদ সদস্য হন। তিনি ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তারপর ১৯ মে ২০১৯ থেকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার বাবা প্রয়াত মতিউর রহমান তালুকদার জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
ব্যক্তিগত জীবনে ডা. মুরাদ হাসান এক কন্যা ও এক পুত্রসন্তানের জনক। তার স্ত্রী ডা. জাহানারা এহসানও পেশায় একজন চিকিৎসক। ২০০১ সাল থেকে ডা. মুরাদ হাসান নিজ নির্বাচনী এলাকায় লক্ষাধিক দুস্থ ও অসুস্থ রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করে আসছেন।
সমস্ত পদ থেকে তাকে ঠিকই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন সমালোচকদের একটাই দাবি এত কিছুর জন্য তাকে কেন বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না। একের পর এক কুকর্ম ফাঁস যেন তার আসল মুখোস খুলে দিয়েছে। কিন্তূ এত কিছুর পর তাকে দল থেকে বহিষ্কারেই সবাই খুশি নয় চায় তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা। যদিও শোনা যাচ্ছে তার বিরুদ্ধে এইবার আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি। এখন দেখার অপেক্ষা এর শেষ কোথায়।