রাজধানীসহ দেশের বিভাগীয় শহর গুলোতে খেলার মাঠের সংখ্যা দিনে দিনি কমে যাচ্ছে। আরও যেগুলো আছে সেগুলোও আস্তে আস্তে দলখ হয়ে যাচ্ছে। অথচ খেলার মাঠের অভাবে শিশুদের মানসিক বিকাশে ব্যাপক প্রভাব পড়চ্ছে। রাজধানীতে এ সমস্যার ব্যাপক ধারন করেছে এ বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ রাষ্ট্রায়ত্ত পুকুর ও মাঠ বিক্রয় বিষয় নিয়ে মন্তব্য করে এ প্রসঙ্গে যা জালালেন নারায়ণগঞ্জ মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী বলেন, গোদনাইলে জিএমসির (জার্মপ্লাজম মেইনটেন্যান্স সেন্টার) অনেক মাঠ ছিল। পাটের কারখানা ছিল। এগুলো জাতীয়করণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর শর্ত ছিল মসজিদ, মন্দির, মাঠ রেখে প্লট করে বিক্রি করা। কিন্তু মাঠ ও পুকুর বিক্রি করতে চান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
শুক্রবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে আলী আহমেদ চুনকা পাঠাগার মিলনায়তনে খেলাঘর জেলা কমিটির সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনে জহিরুল ইসলাম জাহিনকে সভাপতি ও ফুয়াদ মহসিনকে সাধারণ সম্পাদক করে ৫১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
আইভী বলেন, মামলা করে গোদনাইলের এই মাঠ রক্ষা করতে হচ্ছে। আমার কাছে অনেক সময় হাস্যকরও লাগে, কষ্টও লাগে, দুঃখও লাগে। যেখানে সরকার প্রধান বলছেন, শিশুবান্ধব নগরী গড়, বেশি করে খেলার মাঠ ও পার্ক কর; সেখানে প্রশাসন আবার মাঠ বিক্রি করে দিতে চাচ্ছে। জায়গা দেয়া হচ্ছে না, কি অদ্ভুত!
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিশুদের জন্য অনেক কিছু করার চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রশাসন কেন এমন হচ্ছে জানি না। তারা কেন ভবিষ্যতের কথা ভাবে না, মধ্যবিত্তের শিশুদের কথা ভাবে না। কারণ ধনীদের ছেলেমেয়েরা বেশির ভাগই বিদেশে পড়াশোনা করে এবং সেখানেই থাকতে চায়।
নাসিক মেয়র বলেন, আমি আসলে হয়তো বোকা, বোকা না হলে নিউজিল্যান্ড ছেড়ে নারায়ণগঞ্জে এভাবে যুদ্ধ করে টিকে আছি। আপনারা মাঝেমধ্যে বলেন তো, আমি রুক্ষ মেজাজি। কিন্তু আমি এমন ছিলাম না। আমি যখন চিকিৎসা পেশায় কাজ করতাম তখন সব রোগীই আমাকে পছন্দ করত।সেই মানুষটা আপনাদের মেয়র হয়ে প্রচণ্ড রুক্ষ মেজাজি হয়েছি।
আইভী বলেন, কাজ করার সময় কত ভূমিকা পালন করতে হয়। এ কঠিন না হলে তিনবার মেয়র হতে পারতাম না। শিশুদের মধ্যে সরলতা তৈরি করতে হবে। আমি ফ্ল্যাট বিক্রি করি। আমি যতগুলো ফ্ল্যাট করেছি সবগুলো মধ্যবিত্তদের জন্য। আমার মনে হয় নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের ফ্ল্যাট কেন থাকবে না।
তিনি বলেন, শুধু বড়লোকদের কেন চার-পাঁচটা থাকবে। অনেকে বলেন, ক্ষতি হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের কাজ সাধারণ মানুষকে সাহায্য করা। আমরা সেটাই করার চেষ্টা করছি।
মেয়র বলেন, নারায়ণগঞ্জে শিশুদের খেলাধুলার জন্য অনেক মাঠ তৈরি করছি। শেখ রাসেল পার্কের পাশে একটি মাঠও রয়েছে। এই জায়গাটা ছিল বস্তি এলাকা। যেখানে মাদকের অভয়ারণ্য ছিল। এই জায়গায় পার্ক, লেক, মাঠসহ একটি চারুকলা ইনস্টিটিউট করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা সিটি করপোরেশনের তিনটি এলাকায় ১৮-১৯টি খেলার মাঠ নির্মাণ করেছি। যেখানে আমাদের আদমজী মাঠ ধ্বংস করে দালানকোঠা বানানো হয়েছে। মাঠ-পুকুর রক্ষা করতে হলে মামলা-মোকদ্দমায় পড়তে হয়।
বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়া ক্লাবের চেয়ারপারসন মাহফুজা খানম, নাট্যজন মামুনুর রশীদ, চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা.আবু সাইদ, কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রুনু আলী, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক সমিতির সভাপতি ভবানী শংকর রায় প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা থাকলেও সেগুলো অনেক ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন নাসিক নারায়ণগঞ্জ মেয়র সেলিনা হায়াত আইভী। অনেক্ষে কঠোর হয়ে এগুলো রক্ষা করতে হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।