শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। ব্যাংকগুলোর কাছে তাদের পাওনার পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে, কিন্তু নগদ সংগ্রহ নামমাত্র। এছাড়া খেলাপি ঋণ থেকে নগদ সংগ্রহে নাজুক পরিস্থিতি বিরাজ করছে যেগুলো রিট অফ করে হিসাব থেকে আলাদা করা হয়েছে।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জুন মাসের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এমন চিত্র দেখা যায় ৪টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে। তবে খেলাপি ঋণ আদায়সহ প্রায় সব সূচকেই শক্ত অবস্থানে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক। শীর্ষ ২০ খেলাপির মধ্যে সোনালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংক আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার একক অঙ্ক অতিক্রম করতে না পারলেও রূপালী ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার ১৯ শতাংশ আদায় করেছে।
এছাড়াও রূপালী ব্যাংকের ক্ষুদ্র ও মাঝারি খেলাপি ঋণ থেকে আদায়ের হার ৪৭ শতাংশ যা ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলোকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে। প্রতি বছর খেলাপি ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ব্যাংকগুলো বড় খেলাপিদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তবে ছোট খেলাপি ঋণের আদায়ের হার খুবই ভালো। রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
সবচেয়ে ভালো হয়েছে রূপালী ব্যাংকের সংগ্রহ। ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে, শীর্ষ ২০ খেলাপিদের কাছে ব্যাংকটির ৩ ,৫৪৪ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। নগদ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৩৩৫ কোটি, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৬৫ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ১৯ শতাংশ। একইভাবে অন্য খেলাপিদের কাছে পাওনা ছিল ৫ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৭০ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ২৬৮ কোটি টাকা যা লক্ষ্যমাত্রার ৪৭ শতাংশ এবং ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের জুন ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক শীর্ষ ২০ খেলাপিদের কাছে ৮ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত নগদ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৭০ কোটি টাকা। মাত্র ১৬ কোটি টাকা আদায় হয়েছে যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ২ শতাংশ। বিপরীতে অন্যান্য খেলাপিদের কাছে ব্যাংকের পাওনা রয়েছে ৬ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৬৪৫ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ১১০ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ১৭ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছে ৬ হাজার ৮৫৪ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। ৬ মাসে নগদ সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৮৫ কোটি টাকা। খেলাপিরা পরিশোধ করেছে মাত্র ১২ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ২ শতাংশ। বিপরীতে অন্যান্য খেলাপিদের কাছে ব্যাংকের পাওনা ৮ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা। আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৮৫০ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে ২০২ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ২৪ শতাংশ।
শীর্ষ ২০ খেলাপির কাছ থেকে সোনালী ব্যাংকের পাওনা ৪ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা। আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩০০ কোটি, আদায় হয়েছে ২৬ কোটি, যা লক্ষ্যমাত্রার ৯ শতাংশ। এর বিপরীতে অন্যান্য খেলাপিদের বকেয়া পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ২৭০ কোটি টাকা। আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৭০০ কোটি টাকা। ২৫১ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৩৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যাংকের চেয়ে খেলাপিদের ক্ষমতা বেশি। এখন ব্যাংকাররা বড় ধরনের খেলাপিদের করুণায় রয়েছে। প্লিজ, কিছু দিলে পাবেন, না দিলে কিছু করার নেই। এছাড়া বছরের পর বছর ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পুরো ব্যাংকিং খাতের জন্যই খারাপ। এ অবস্থান থেকে বেরিয়ে আসতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সঠিক উদ্যোগ নিতে হবে।