শীতকালে ঠাণ্ডাজনিত কারণে সর্দি, কাশি, জ্বরের মতো সমস্যা সবারই থাকে। কিন্তু এর বাইরেও রয়েছে নানা সমস্যা। এর মধ্যে মাথাব্যথা, মাথা চেপে ধরা এবং মুখমণ্ডল ভারাক্রান্ত হওয়ার মতো ব্যথা খুবই যন্ত্রণাদায়ক। আর শীতকালে এই সমস্যা প্রায় সবারই হয়। চিকিৎসকদের মতে, সাইনোসাইটিস বা সাইনাসের কারণে এই সমস্যা হয়।
ইএনটি বিশেষজ্ঞ অর্জুন দাশগুপ্ত শীতে মাথাব্যথার কারণ সম্পর্কে একটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, হঠাৎ করে এমন ব্যথা শীতকালে বাড়ে। এগুলো বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস সংক্রমণের কারণে হয়ে থাকে। ক্রনিক সাইনোসাইটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও ক্রমাগত দূষণের কারণে বাড়ছে।
সাধারণত এই রোগীদের মাথায় ভয়াবহ যন্ত্রণা হয় না। মাথা ও নাকের দু’পাশ বরাবর গালের একাংশ ভীষণ ভারী হয়। কখনো কখনো হঠাৎ যন্ত্রণা শুরু হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।
ইএনটি বিশেষজ্ঞ সুবীর হালদার মন্তব্য করেন- আমাদের মুখের নাকের দুই পাশে ম্যাক্সিলারি সাইনাস, চোখের নিচে ইথমায়েডাল সাইনাস, কপালে ফ্রন্টাল সাইনাস এবং চোখের পেছনে মস্তিষ্কের নিচে স্ফেনয়েড সাইনাস রয়েছে। এই সাইনাসগুলি মূলত বায়ু ভর্তি চেম্বার। যা শ্বাসের সাথে শরীরে প্রবেশ করা বাতাসকে ফিল্টার করে এবং ভয়েসের মড্যুলেশনও নিয়ন্ত্রণ করে।
এই বিশেষজ্ঞ বলেন, এই প্রকোষ্ঠগুলো অনুনাসিক গহ্বরের সঙ্গে যুক্ত। যার মাধ্যমে বায়ু চলাচল করে। এদিকে, সাইনাসে এক ধরনের ঝিল্লি থাকে যাকে মিউকাস মেমব্রেন বলে। যদি সংক্রমণ বা অ্যালার্জির কারণে প্রদাহ দেখা দেয় তবে সাইনাসে স্বাভাবিক বায়ুপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। যা থেকে ব্লকেজ তৈরি হয়।
সুবীর হালদার বলেন, প্রচণ্ড ঠান্ডায় এ প্রবণতা বাড়ে। বিশেষ করে তীব্র ঠান্ডার কারণে। কিন্তু বর্তমানে বায়ু দূষণই এর প্রধান কারণ। যা থেকে ধীরে ধীরে সাইনোসাইটিস বাড়ছে।
এদিকে, ইএনটি শিক্ষক এবং ডাক্তার দ্বৈপায়ন মুখোপাধ্যায় বলেছেন যে পিএম-২.৫ সবথেকে বেশি সমস্যা করে। অর্থাৎ, বাতাসে ভাসমান অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণা বেশি সমস্যা করে। আমাদের অজান্তেই সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ধূলিকণাগুলো রাসায়নিকক সঙ্গে নিয়ে নাকের মাধ্যমে শ্বাসতন্ত্রে প্রবেশ করে। এ থেকেই সাইনাসাইটিস হওয়া এবং মাথাব্যথা রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলছে। শীতে সোয়েটার, চাদর, কম্বল ও গরম পোশাকে থাকা ময়লা থেকেও অনেক সময় অ্যাল্যার্জি হয়। ঘুম ভাঙার পরই মাথাব্যথা শুরু হয়। যা বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে। তবে এই চিকিৎসক আরও বলেন, সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।