সুন্নতে খৎনা করাতে গিয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আয়ান চাইল্ডহুড অ্যাজমা সমস্যায় ভুগছিল। শ্বাসকষ্টের জন্য আয়ানকে মাঝে মাঝে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দেওয়া হতো। সুন্নতে খৎনার অপারেশনের আগে ওয়েটিং রুমেও তাকে নেবুলাইজার ও ইনহোলার দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়টি চিকিৎসকদের জানানো হয়নি।
প্রতিবেদনের মতামত বিভাগে আরও বলা হয়েছে যে অপারেশনের সময় আয়ানের স্বাভাবিক রক্তপাত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ১৫ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে উপ-পরিচালক (আইন) ডা. পরিমল কুমার পাল এ প্রতিবেদন দাখিল করেন।
আজ রোববার (২৮ জানুয়ারি) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি আতাবুল্লাহ হাইকোর্ট বেঞ্চে প্রতিবেদনটি শুনানি হবে।
এর আগে গত ২২ জানুয়ারি শিশু আয়েন আহমেদের মৃত্যুর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে এ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
ওই দিন আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এবিএম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।
গত ১৫ জানুয়ারি শিশু অয়নের মৃত্যুর ঘটনায় আয়ানের পরিবারকে কেন ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে শিশু আয়ানের মৃত্যুর তদন্ত করে ৭ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া দেশের সব সরকারি অনুমোদিত-অনুমোদিত হাসপাতাল ক্লিনিকের তালিকা এক মাসের মধ্যে আদালতে জমা দিতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।
এর একদিন আগে গত ১৪ জানুয়ারি ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু আয়ান আহমেদের পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা রিটের শুনানি শেষ হয়। একই সঙ্গে এ বিষয়ে আদেশের জন্য আজ দিন ধার্য রয়েছে।
গত ৯ জানুয়ারি শিশু আয়ান আহমেদের পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়। রিটে শিশু আয়ানের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকের মেডিকেল সার্টিফিকেট বাতিল ও ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
সুপ্রিম কোটের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করেন। পরে শিশু আয়ানের বাবা রিটে পক্ষভুক্ত হন। নতুন করে রিটে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়। স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
অপরদিকে আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকদের গাফিলতির অভিযোগ তদন্তে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
প্রসঙ্গত, গত ৮ জানুয়ারি রাজধানীর ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সুন্নাতে খৎনা করাতে গিয়ে টানা ৭ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর আয়ান মারা যায়।