সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে সুপরিচিত শিশু বক্তা মুফতি রফিকুল ইসলাম মাদানীকে তাফসীরুল কুরআন মাহফিলের মঞ্চে প্রবেশে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে উপস্থিত মুসল্লিদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২৫ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ২ রাউন্ড গ্যাস নিক্ষেপ করে। এতে দুই পুলিশ সদস্যসহ কয়েকজন মুসল্লি আহত হন। পুলিশ বলছে, রফিকুল ইসলাম মাদানীকে গ্রেপ্তারের গুজব ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, উপজেলার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের মহরম গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে মোজাম্মিল হক লিটন (৩৩), একই ইউনিয়নের কাস্তল গ্রামের মৃত মাওলানা তবারক ইসলামের ছেলে রায়হান, মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে বশির আহমেদ (৩৮)। সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার বাদাঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
হিলফুল ফজল পরিষদ নামে একটি সংগঠন গত ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি উপজেলার বাদাঘাট বাজার সংলগ্ন বাদাঘাট মাদ্রাসা মাঠে দুই দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের আয়োজন করে। প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট শিশু বক্তা মুফতি রফিকুল ইসলাম মাদানী। মাহফিলে অন্যান্য বক্তাদের ওয়াজ শেষে প্রধান অতিথি মঞ্চে আসতে চাইলে পুলিশ তাকে বাধা দেয়। মাহফিলে উপস্থিত মুসল্লিরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন।
হঠাৎ মঞ্চে সংবাদ আসে রফিকুল ইসলাম মাদানীকে আটক করে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে মাহফিলের মুসল্লীরা ক্ষিপ্ত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বাদাঘাট তদন্ত কেন্দ্রে ঘেরাও করতে চাইলে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ শরু হয়।
প্রায় এক ঘণ্টা সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২৫ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ২ রাউন্ড গ্যাস নিক্ষেপ করে। এ ঘটনার জেরে বর্তমানে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার অর্থ ও প্রশাসন (পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আবু সাঈদ, সহকারী পুলিশ সুপার (তাহিরপুর সার্কেল) মোঃ নাসিম উদ্দিন।
বাদাঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই নাজমুল ইসলাম জানান, বাদাঘাট বাজার সংলগ্ন বাদাঘাট মাদ্রাসা মাঠে প্রশাসনের কোনো অনুমতি ছাড়াই গত ১৯ ও ২০ ফেব্রুয়ারি দুদিনব্যাপী তাফসিরুল কুরআন মাহফিলের আয়োজন করে হিলফুল ফজল পরিষদ নামের একটি সংগঠন। সোমবার বাদ জোহর মাহফিল শুরু হয়ে রাত ১২টা পর্যন্ত চলে। হঠাৎ করে শিশু বক্তা মুফতি রফিকুল ইসলাম মাদানীকে মাহফিলে আসতে নিষেধ করা হচ্ছে বলে মুসল্লিদের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এরপর শত শত মুসল্লি বাদাঘাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের আশপাশে জড়ো হয়ে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে তা ভাংচুর করে। এ ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
তাহিরপুর থানার (ওসি) মোঃ নাজিম উদ্দিন বলেন, রফিবুল ইসলাম মাদানীকে পুলিশ আটক করেনি, তিনি তাফসীর মাহফিলে আসেননি। এটি মূলত গুজবের উপর ভিত্তি করে যে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে হামলা হয়েছে। পুলিশ আত্মরক্ষার্থে ২৫ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ২ রাউন্ড গ্যাসের গুলি ছোড়ে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে ৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বিষয়টি খতিয়ে দেখে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে এ সময় রফিবুল ইসলাম ঘটনাস্থলেই অবস্থান করছিলেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।