ভালবেসে সম্প্রতি বিয়ে করেছিলেন এক কলেজ শিক্ষিকা এবং এক কলেজ ছাত্র তবে বিয়ের পর না ফেরার দেশে চলে গিয়েছেন সেই শিক্ষিকা ইতিমধ্যে খায়রুন নাহারের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন বলে মনে করছে পুলিশ। খাইরুনের স্বামী মামুনেরও একই বক্তব্য। এর আগেও ‘নানা ঝামেলায় বিষিয়ে ওঠা’ খায়রুন গত ২৩ জুন হারপিক খেয়েছিলেন বলে রয়েছে তথ্য। যদিও খায়রুনের পরিবারের দাবি—তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা বলেন, ‘স্বামী মামুনকে আমরা প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসা করেছি। মামুনের দাবি, তাঁদের (স্বামী-স্ত্রী) মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তিনি গভীর রাতে বাসা থেকে বের হয়ে যান। বের হওয়ার পর খাইরুন মামুনকে কলও করেন। তারপরই তিনি আত্মহত্যা করেন বলে আমরা শুনেছি। এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে আরও তদন্তের প্রয়োজন। আমি বিষয়টি ভালোভাবে জানার চেষ্টা করছি।’
কী কারণে এ দম্পতির মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়, জানতে চাইলে লিটন কুমার সাহা বলেন, ‘শুনেছি ওই শিক্ষিকার এক ছেলে রয়েছে। ওই ছেলে তাঁর মাকে একটি ভালো মোটরসাইকেল কিনে দিতে বলে। এ বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয় বলে শুনেছি। এ ব্যাপারে আগেও তাঁদের মধ্যে ঝুট-ঝামেলা হয়েছে।’
লিটন কুমার সাহা আরও বলেন, “এসব বিষয় নিয়ে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে রাতে মামুন বাসা থেকে বের হয়ে যান। বের হওয়ার সময় বলেন, ‘থাক তুই, আমি চলে গেলাম।’ এরপর মামুন বাসায় ফিরে দেখেন, তাঁর স্ত্রী গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। পরে মানুষ আগুন দিয়ে ওড়না পুড়িয়ে তাঁর স্ত্রীকে নিচে নামান বলে মামুনের দাবি। কারণ, ওড়না কাটার জন্য না-কি তাঁর সামনে কিছু ছিল না।’
লিটন কুমার সাহা বলেন, ‘এ ছাড়া সামাজিক ও পারিবারিক নানা চাপে তাঁদের মধ্যে মাঝেমধ্যেই ঝামেলা হতো। এসব ঝামেলার কারণে গত ২৩ জুন ওই শিক্ষিকা হারপিক খেয়েছিলেন। মূলত, তাঁদের জীবন বিষিয়ে উঠেছিল। নানা মানুষ ফোন করে তাদের জীবন আরও বিষিয়ে তুলেছে। ভাইরাল হওয়ার পর তা আরও প্রকট আকার ধারণ করে। শিক্ষিকার পরিবারের দাবি, নানা মানুষ বিভিন্ন কথা বলায় তাদের সম্মানহানি হচ্ছে।’
খায়রুনের পরিবারের দাবি, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে লিটন কুমার সাহা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমাদের আত্মহত্যা মনে হয়েছে। অধিকতর তদন্তে এবং ময়নাতদন্তেদর রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত বলা যাবে।’
মামুন ও তাঁর স্ত্রী খায়রুন যে বাসায় থাকতেন, ওই ফ্ল্যাটের পাশের ফ্ল্যাটের একজনের সঙ্গে কথা বলেছেন এনটিভির নাটোর প্রতিনিধি হালিম খান। তিনি জানিয়েছেন, গভীর রাতে পাশের ফ্ল্যাটের লোকজন ঝগড়া-ঝাটির শব্দ শুনেছেন। এমনকি রান্না ঘরে হাড়ি-পাতিল ভাঙার শব্দও তারা শুনেছেন।
আজ রোববার সকালে খায়রুনের মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ। বেলা পৌনে ১টার দিকে রাজশাহী থেকে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ দলের প্রধান ছিলেন সিআইডির পরিদর্শক অনিমেষ মকুটমণি। যদিও খায়রুনের মৃত্যুর বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
এর আগে সকালে নাটোর থানা পুলিশ ও পিবিআই সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ করেন। বর্তমানে মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এদিকে, ময়নাতদন্তের জন্য তিন সদস্যের টিম গঠন করেছে নাটোর সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার খুবজীপুর ডিগ্রি কলেজের দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক খায়রুন নাহার প্রেম করে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর বিয়ে করেন শহরের নবাব সিরাজ উদ দৌলা সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মামুন হোসেনকে। বিষয়টি চলতি বছরের ৩১ জুলাই জানাজানি হলে এ নিয়ে খায়রুন নাহারের প্রথম স্বামী ও ছেলেসহ পরিবারের লোকজন ব্যাপকভাবে তাঁর সমালোচনা শুরু করেন। পরে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ঝড় তোলে। এরপর আজ খায়রুনের মৃত্যুর খবর এলো।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক শিক্ষিকা এবং এক কলেজ ছাত্রের প্রেমার সম্পর্ক এবং তাদের বিয়ে নিয়ে নানান আলোচনা শোনা গিয়েছিল এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের এই খবর আসতেই অনেকে তাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন অনেকেই আবার সমালোচনাও করেছেন তাদের