শূন্যপদের বিপরীতে বদলির সুযোগ চেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে শিক্ষা উপদেষ্টার পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করেন এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুই শিক্ষক। বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সচিবালয়ে এই ঘটনাটি ঘটে, যার ছবি ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের একটি দল শূন্যপদের বিপরীতে বদলির দাবি নিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে দেখা করেন। দলটির সাধারণ সম্পাদক মো. সাকিবুল ইসলাম ও রাজশাহী জেলার সমন্বয়ক শরিফুল ইসলাম আবেগতাড়িত হয়ে উপদেষ্টার পায়ে পড়ে কাঁদতে থাকেন। শিক্ষা উপদেষ্টা তাদের শান্তনা দেন এবং উঠে দাঁড়াতে বলেন। পরে তিনি তাদেরকে সহানুভূতির সঙ্গে কাজের অগ্রগতি নিয়ে আশ্বস্ত করেন।
এ বিষয়ে শিক্ষক মো. সাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এটা ইচ্ছাকৃত করিনি, আবেগের বশবর্তী হয়ে করে ফেলেছি। কারণ, গত ৭ তারিখে আমার দাদি শাশুড়ি মারা গেছে কিন্তু আমি সেখানে যেতে পারিনি। কারণ, আমি চাঁদপুরে কর্মরত। মৃত্যু সংবাদ পেয়েছি সকাল ৮টায় আর দাফন হয়েছে দুপুর আড়াইটায়। আমার পক্ষে ওই সময়ের মধ্যে রাজশাহীতে যাওয়া সম্ভব ছিল না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার আত্মীয়-স্বজন মারা গেলেও আমি দেখতে যেতে পারি না। আমার মতো অসংখ্য শিক্ষক আছে যাদের জীবন দুর্বিষহ।’
ওই সময় কী ঘটেছিল? জানতে চাইলে তিনি জানান, তিনি ওটা করে ফেললে উপদেষ্টা মহোদয় বলেন, ‘ওঠো ওঠো বাবা, তোমাদের কাজ তো করে দিয়েছি, তোমাদের কাজ তো হচ্ছে।’ এরপর শিক্ষা উপদেষ্টা নিজের ব্যক্তিগত সহকারীর সঙ্গে তাদেরকে পাঠিয়ে দেন বিস্তারিত কথা বলার জন্য। সেখানে কর্মকর্তারা শিক্ষকদের আশ্বস্ত করেন যে, তাদের কাজ দ্রুত হয়ে যাবে।
এনটিআরসিএর তথ্যমতে, ২০১৬ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে সুপারিশ করে আসছে। প্রথম গণবিজ্ঞপ্তিতে উপজেলাভিত্তিক শিক্ষক সুপারিশ করায় নিজ উপজেলায় শূন্যপদ না থাকায় অনেক শিক্ষক বাধ্য হয়ে মাদরাসায় ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ নেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে মেধাতালিকা অনুযায়ী জাতীয়পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছিল।
প্রতিষ্ঠানটির নিয়োগ পরিপত্র থেকে জানা গেছে, একজন ইনডেক্সধারী শিক্ষক যেকোনো বয়সে পরবর্তী যেকোনো গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের মাধ্যমে মেধাতালিকা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করতে পারবেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে অনেক নিবন্ধনধারী শিক্ষক নিজ এলাকায় শূন্যপদ না থাকায় দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে আবেদন করে সুপারিশ পেয়েছেন।
তবে হঠাৎ করে নিয়োগ কর্তৃপক্ষ পরিপত্র ২০১৫-এর ৭ নম্বর অনুচ্ছেদ সাময়িক স্থগিত করার কারণে চতুর্থ ও পঞ্চম গণবিজ্ঞপ্তিতে ইনডেক্সধারীদেরও আবেদনের সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ইনডেক্সধারী শিক্ষকরা এখন সমস্যায় পড়েছেন। এতে লক্ষাধিক ইনডেক্সধারী শিক্ষক ভোগান্তিতে পড়েন। তারপর থেকেই শিক্ষকরা নানা সময়ে বদলির দাবীতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে এলেও তাদের এ সমস্যার সমাধান হয়নি। শিক্ষকদের দাবির মুখে কয়েকদিন আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পারস্পরিক বদলির প্রজ্ঞাপন প্রকাশ করে। এরইমধ্যে শিক্ষকদের পারস্পরিক বদলির আবেদন শুরু হয়েছে যা চলবে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু শিক্ষকরা মনে করছেন, এতে ১ শতাংশ শিক্ষকও উপকৃত হবেন না।