ঢালিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা এবং নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, শিক্ষার্থীরা এ দেশের বভিষ্যৎ নেতা এবং তাদের চেয়ে ক্ষমতাশালী আর কেউ নেই। হাফ ভাড়া করা তাদের যে দাবি তুলেছে সেটা শতভাগ যৌক্তিক, এটাকে মেনে নিয়ে অর্ধেক ভাড়া কার্যকর করতে হবে।
গতকাল (শনিবার) দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে এই নিরাপদ সড়ক চাই এর প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীরা ঢাকা অবরোধ করার মাধ্যমে ৯ দফা দাবির একটি ছিল রাজধানী এলাকাসহ সমগ্র দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়ার ব্যবস্থা করা। কিন্তু ফের সেই অর্ধেক ভাড়ার বিষয়টি নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। পাকিস্তান আমলেও এই দেশে অর্ধেক ভাড়া দিয়ে আমরা বাসে চড়তাম। আমি নিজেও অর্ধেক ভাড়া দিয়ে বাসে যাতায়াত করেছি। এটাই শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি। এটা মেনে নিতে হবে। কারণ ভাড়া নির্ধারণের সময় হাফ ভাড়া যোগ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পরিবহন মালিকদের দাবি মেনে ১০-১৫টি আসন খালি থাকার বিষয়টিও ভাড়ায় অন্তর্ভুক্ত থাকে। এটি অন্য যাত্রীরা বহন করে। তাই হাফ ভাড়ার বিষয়ে আইন করার দরকার নেই। সরকার উদ্যোগ নিলেই হবে। ছাত্রদের হাফ ভাড়ার বাকিটা তো জনগণই দিচ্ছে।
সড়কে বিশৃঙ্খলা দূর করার চেষ্টা হচ্ছে না জানিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, পরিবহন নেতাদের কাছে জনগণ ও সরকার জি’ম্মি। এই জি’ম্মি দশা থেকে বের হওয়ার জন্য যেসব পরিকল্পনা বা কৌশল নেওয়া দরকার কোনো সরকার তা করেনি। প্রতিবারই পরিবহন নেতাদের কাছে হেরে যাওয়ার একটা প্রবণতা ছিল। ফলে তাদের সাহস বেড়ে গেছে এবং তারা মনে করছেন যে তারা যা দাবি করবে সরকারকে সে দাবিগুলো পূরণ করতে হবে এবং জনগণকেও তা মেনে নিতে হবে। কারণ তারা একটা সংঘবদ্ধ শক্তি।
নিসচার দাবির ভিত্তিতে সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, সরকার কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে। যেমন চালকদের ইনস্টিটিউশনের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রশিক্ষণ দিতে গিয়ে সরকার দেখল ইনস্টিটিউশনই নেই, প্রশিক্ষকও নেই। এখন সরকার ১৪১০ জন প্রশিক্ষক তৈরি করছে। আবার এ ক্ষেত্রে ভালো প্রশিক্ষকেরও সং’কট ছিল। অনেক কষ্টে ৪-৫শ প্রশিক্ষক তৈরি করা হয়েছে। যারা ভুয়া লাইসেন্সে গাড়ি চালাচ্ছে তাদের ২২ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সরকার প্রশিক্ষণার্থীদের দৈনিক এক হাজার করে টাকা ও খাওয়া-দাওয়া দেবে। ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফিও সরকার দেবে। যারা হালকা গাড়ি চালাচ্ছেন তাদেরও একই প্রক্রিয়ায় ভারী গাড়ি চালানোর জন্য ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এই প্রশিক্ষকরাই তিন লাখ চালক তৈরি করবে। এতে ভালো সুফল মিলতে পারে।
২০১৮ সালে যে সড়ক আইন প্রনয়ন করা হয় সেটার বাস্তবায়ন না হওয়া প্রসঙ্গে নিচসা’র প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, আইনটি সংশোধন করা দরকার যেটা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়নে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে সেটা পূনরায় সংসদে পাঠানোর চেষ্টা চলমান আছে। বর্তমান সময়ে ছাত্ররা ফের রাস্তায় নেমেছে, তারা যদি এই সময়ে সরকারকে কিছুটা চাপ দেয় তাহলে হয়তো আইনের বাস্তবায়ন হবে।
দুর্ঘ’টনা ঘটার কারণ নিয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা এবং নিরাপদ সড়ক নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা পথিকৃত ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, শহরাঞ্চলে যেসব চালক বাস চালায় তাদের মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগ চালকই নিষিদ্ধ দ্রব্যের প্রতি আসক্ত। এ দিকে মোটরসাইকেলের সংখ্যা বেড়েছে যার কারণে দুর্ঘটনার সংখ্যাও বেড়েছে। প্রতিদিন ৭-৮টি মোটরসাইকেল দু’র্ঘটনার ঘটনা ঘটছে যেটা আরো বাড়তে পারে। তবে উঠতি বয়সী ছেলেরা ইদানিং যেভাবে এবং যে গতি নিয়ে মোটর সাইকেল চালাতে দেখা যায় সেটা একটি উদ্বেগের বিষয়। অন্যদিকে ট্রাক ভ্যান চালক যারা রয়েছেন তারা সম্পূর্ণ অদক্ষ। তাদের ড্রাইভিং বিষয়ে কোনো ধরনের শিক্ষা নেই।