Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Countrywide / শিক্ষক উৎপলকে পিটিয়ে নিথর করার কারন জানালেন সেই জিতু

শিক্ষক উৎপলকে পিটিয়ে নিথর করার কারন জানালেন সেই জিতু

আশরাফুল হোসেন জিতু হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে স্ট্যাম্প দিয়ে বেধ’ড়ক পেটানোর পর প্রয়াত হন। এই ঘটনার পেছনের কারণ ছিল, রিমার সাথে প্রেম। তাদের বিভিন্ন সময় কাছাকাছি আসার ঘটনা চোখে পড়ার পর উৎপল কুমার তাদেরকে বেশ বকাঝকা করেন।
এরপর একদিন রিমা এবং জিতুকে একসাথে স্কুলের বারান্দায় কাছাকাছি দেখতে পায়। তারা সেখানে কেক খাচ্ছিলেন, সেটা উৎপল কুমারের নজরে আসে। সেটা নিয়ে তাদের বকাঝকা করেন এবং পরবর্তীতে বিষয়টি তাদের দুজনের পরিবারের কাছে জানিয়ে দেয়।

তখন রিমার পরিবার রিমাকে কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। ক্ষি”প্ত হয়ে জিতু দুটি স্ট্যাম্প এনে শিক্ষক উৎপলকে এলোপা”তাড়ি আঘা’/ত করে। আঘা’/তে উৎপলের প্রয়ান ঘটে।

আদালতে ঘটনার দায় স্বীকার করে জবানবন্দিতে একথা বলেন অভিযুক্ত স্কুলছাত্র জিতু। এছাড়া জিতুর বাবাও তার জবানবন্দিতে এসব কথা স্বীকার করেছেন। পুলিশ ও আদালত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জবানবন্দিতে জিতু জানান, রিমার সঙ্গে তার প্রেম ছিল। এ নিয়ে স্কুল ক্যাম্পাসে শিক্ষক উৎপল তাদের বকাঝকা করতেন। সর্বশেষ ঘটনার দু-তিন দিন আগে স্কুলের বারান্দায় কেক খাচ্ছিল জিতু ও রিমা। এ সময় শিক্ষক উৎপল তা দেখেন। সে জিতু আর রিমাকে বকাঝকা করে। এ সময় জিতুর সঙ্গে উৎপলের ঝগড়াও হয়। শিক্ষক উৎপল জিতু ও রিমার বাড়িতে অভিযোগ করেন। এ কারণে রিমার পরিবার তাকে স্কুলে যেতে বাধা দেয়। এতে জিতু রেগে যায়।

জিতু আরও জানান, ঘটনার দিন জিতু বাড়ি থেকে দুটি স্ট্যাম্প নিয়ে স্কুলে আসে। সুযোগ পেয়ে উৎপলকে ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে এলোপাতাড়ি মা’/রধ’র করে। এ সময় শরীফ নামের এক শিক্ষক জিতুকে ধরে ফেলেন। শরীফ আহত উৎপলকে মাটি থেকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করলে জিতু ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। এরপর জিতু মানিকগঞ্জে পা”লিয়ে যায়। পুলিশের তৎপরতা দেখে তিনি পাবনার উদ্দেশে রওনা হন। সেখানেও পুলিশের তৎপরতা দেখে গাজীপুরের শ্রীপুরের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে তাকে আটক করে র‌্যাব। জিতু তার বক্তব্যে দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

পাঁচ দিনের রিমা”ন্ড শেষে বুধবার তাকে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের (সিজেএম) সামনে হাজির করা হয়। সেই সময়, তিনি এই ঘটনার জন্য দোষ স্বীকার করেছিলেন এবং স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হয়েছিলেন। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক এমদাদুল হক তার জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব হাসান তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) তাকে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (সিজেএম) আদালতে পাঠানো হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক এমদাদুল হক মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। শুনানি শেষে ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব হাসান তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে বুধবার (২৯ জুন) সন্ধ্যায় গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকা থেকে আশরাফুল আহসান জিতুকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

এছাড়া ২৬ জুন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জিতুর বাবা উজ্জ্বলকে কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে আশুলিয়া থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ২৯ জুন ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শেখ মুজাহিদুল ইসলাম জিতুর বাবা উজ্জ্বলকে পাঁচ দিনের রিমা”ন্ড মঞ্জুর করেন। পাঁচদিনের রিমা”ন্ড শেষে মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) তাকে ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ।

এ সময় তিনি ঘটনার দায় স্বীকার করে স্বেচ্ছায় সাক্ষ্য দিতে রাজি হন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তার জবানবন্দি রেকর্ড করতে আবেদন করলে ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী আশরাফুজ্জামান জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

জবানবন্দিতে উজ্জ্বল বলেন, শিক্ষক উৎপল জিতুর বিষয়ে আমার কাছে অভিযোগ করেছিলেন। আমি শিক্ষক উৎপলকে বিষয়টি দেখতে বলেছিলাম। ঘটনার দিন আমি স্কুলে গিয়ে বলেছিলাম থানা পুলিশ না করতে। পরে জিতুকে আমার চান্দুরার বাড়িতে রাখি। পুলিশ অভিযান চালালে তাকে পাবনায় পাঠাই। কুষ্টিয়ায় মুজাহিদদের বাড়িতে গিয়েছিলাম। কুষ্টিয়া থেকে পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে। শিক্ষক উৎপলকে নিথর করে জিতুই।

গত ২৫ জুন আশরাফুল আহসান জিতু নামে দশম শ্রেণির ছাত্র শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে গু”রু”তর আ’হ/ত করে। পরে তাকে আহ”ত অবস্থায় এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (২৬ জুন) ভোররাতে শিক্ষক উৎপল কুমার প্রয়াত হন।

প্রয়াত শিক্ষকের বড় ভাই অসীম কুমার সরকার বাদী হয়ে ছাত্রের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা করেন।

প্রয়াত উৎপল সরকার সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থানার এঙ্গেলদানি গ্রামের প্রয়াত অজিত সরকারের ছেলে। তিনি আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক এবং শৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ছিলেন।

উল্লেখ্য, এই ঘটনার পর ওই এলাকায় বেশ আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি হয়। তবে উৎপল কুমার এর সাথে এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে জিতু ও রিমার প্রেমের বিষয়ে, সেটা অনেকটা নিশ্চিত করেন ঐ এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা। তবে জিতুর এই ধরনের ঘটনা ঘটানোর পেছনে অন্য কোন বিষয় রয়েছে কিনা সেটা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।

About bisso Jit

Check Also

উপদেষ্টা পরিষদেই বৈষম্য

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে আঞ্চলিক বৈষম্যের অভিযোগ উঠেছে। ২৪ সদস্যের এই পরিষদে ১৩ জনই চট্টগ্রাম …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *