টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শুরুতেই স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪১ রানের টার্গেটের কাছে হেরে যায় বাংলাদেশ। তবে পরবর্তীতে সহজ দুই প্রতিপক্ষকে হারিয়ে বাছাই পর্বে খেলার আশা বাঁচিয়ে রেখেছিল টাইগাররা। তবে বাছাই পর্বের প্রথম ম্যাচেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে লজ্জাজনক হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় টাইগারদের। আর এর ফলে সাকিবদের ওপর থেকে রীতিমতো আস্থা হারিয়ে ফেলেন ক্রিকেট প্রেমি ভক্তরা। তার ওপর সমালোচকদের আয়নায় চেহারা দেখতে বলে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। তার মতো একজন সিনিয়র ক্রিকেটারের কাছে এমন কথা আশা করেনি কেউ। এছাড়া বিশ্বকাপে তিনি বারবার স্কুপ আর রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে আউট হচ্ছেন। দেশকে বিপদে ফেলছেন। সাধারণ সমর্থকের পাশাপাশি ক্ষোভের আগুন এবার ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বিনোদন জগতেও। একসময়ের ঢালিউড সুপারস্টার নায়ক রুবেল সরাসরি মুশফিকের শাস্তি দাবি করেছেন।
একটি বেসরকারি টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাতকারে নায়ক রুবেল বলেন, ‘তামিমের মতো হার্ডহিটার প্লেয়ার কেন এবারের বিশ্বকাপ দলে নেই এটা আমার একটা জিজ্ঞাসা। আর মুশফিক সাহেবের কাছে আমার জিজ্ঞাসা, যেহেতু রিভার্স সুইপ খেলে মাঝেমধ্যেই আপনি দেশকে একটা খারাপ জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন; সেহেতু আপনি নরমাল শট কেন খেলেন না? নরমাল শটে তো আপনি অনেক ভালো খেলেন। গতকালের (শুক্রবার) খেলায় মুশফিক এবং লিটন যখন ভালো খেলছিলেন, তখন মুশফিকের স্কুপ করার তো কোনো দরকার ছিল না। তাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। কারণ উনারা বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করছে।’
মুশফিকের এমন আত্মঘাতী শট খেলা উচিত হয়নি উল্লেখ করে রুবেল বলেন, ‘উনি এমন আত্মঘাতীমূলক খেলা খেলবেন… এমন শট আমি কখন খেলবে? যখন হাতে ৬ উইকেট আছে এবং জয়ের জন্য প্রয়োজন ১০ রান। কিন্তু এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ খেলা, যেখানে আগের ম্যাচে আমরা হেরেছি। সেই ম্যাচেও তিনি রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন; সেক্ষেত্রে গতকাল (শুক্রবার) এমনটা করা উচিত হয়নি। আমি উনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, দেশ ও জাতি আপনাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। আপনারা ভালো করলে আমরা হাসি। ঘরের ভেতরে চিৎকার দেই, সেই চিৎকার শুনে পাশের বাসার লোকজন দৌড়ে আসে। এমন জোরে চিৎকার করি আমরা তাদের জন্য।’
তিনি বলেন, ‘আমি দেশকে ভালোবাসি। দেশের জন্যই চিৎকার করি। উনাদের জন্য (ক্রিকেটার) আমার অনেক ভালোবাসা আছে। অনেক সময় রাগে উনাদের দুই-চারটা কথা বলি। এটা কিন্তু মেনে নিতে হবে। হিরো হিসেবে আমিও অনেক কথা শুনেছি। সমালোচনা শুনতে হবে। সমালোচনা শুনে আপনি বলবেন- আয়নায় নিজের চেহারা দেখেন; এটা ঠিক না। আপনি যখন যেখানে যাবেন, আপনাকে জানতে হবে যে সমালোচনার সন্মুখীন হবেন। আপনি যেই হোন না কেন। আমি আড়াইশ ছবির হিরো। আমাকেও অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে। তার জন্য কাউকে কোনোদিন কিছু বলিনি। আমারটা আমি করে যাব। আপনি ভালো কী করে করবেন, দেশ ও জাতিকে ভালো কী উপহার দেবেন, সেই চিন্তা করেন।’
রুবেল মনে করেন তারকাদের সমালোচনা গ্রহণের ক্ষমতা থাকতে হবে, ‘আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, উনারা সমালোচনা নিতে পারে না। কিন্তু উনাদের নিতে পারা উচিত। উনারা যখন ভালো রেজাল্ট করে, তখন আমরা দেশ ও জাতি উনাদের অনেক কিছু দেই। কিন্তু আমি আগেও বলেছিল আবারও বলছি, উনারা যখন আত্মঘাতী কাজ করবে; রবীন্দ্রনাথের ভাষায় জেনে শুনে বিষ পান করবে; তখন তাদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত। তারা জিতলে পরে যখন তাদের সবকিছু দিচ্ছি, গাড়ি-বাড়ি টাকা-পয়সা সব দিচ্ছি; আমি জেনেশুনে যখন একটা দেশকে ডুবিয়ে দিচ্ছি, এমন খেললে আমাদের ক্ষতি হবে, সেখানে আপনাদের কী বিচার আছে? আমরা তো কিছু করছি না। কেন? আমরা শুধু তাদের দিয়েই যাব, তারা যা খুশি খেলবে সেটা তো হবে না।’
দেশবাসী ক্রিকেটারদের কতটা ভালোবাসে তা উল্লেখ করে রুবেল বলেন, ‘আমরা তাদের দিকে তাকিয়ে থাকি। সারাদেশ, গোটা জাতি তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারা জিতলে আমরা রাস্তায় পাগলের মতো মিছিল বের করি, কাদের জন্য করি? উনাদের জন্যই তো করি। উনাদের তো সমালোচনা সইতে হবে। উনারা যখন ভালো করে তখন আমরা গলা ফাটিয়ে চিৎকার করি, খারাপ খেললে আমরা চিৎকার করব না। আমি ব্যক্তিগতভাবে একজন স্পোর্টসম্যান হিসেবে কখনই চিৎকার করব না। একজন প্লেয়ার একদিন ভালো খেলবে আরেকদিন মন্দ করবে সেটা হতেই পারে। টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডেতে আমি মনে করি, তামিমের চেয়ে ভালো প্লেয়ার আমাদের দেশে নেই।’
কেবল বাংলাদেশ জিতলেই জিতে যায় গোটা জাতি। তাই এ হার শুধু টাইগারদের নয়, বরং সবার। বুক ভরা আশা নিয়ে সকলেই তাকিয়ে থাকে তাদের দিকে। কিন্তু ম্যাচ শেষে টাইগারদের এমন হার, রীতিমতো মেনে নিতে পারছে না কেউই। তবে আগামীতে ভালো কিছু করবে, এমনটাই প্রত্যাশা এখন সকলের।