বান্ধবির সাথে ঘুরে বেড়ানোর সময়ে আজ্ঞাত কিছু যুবক হঠাৎ করে এসে ডেকে নিয়ে গিয়ে বান্ধবির চোখের সামনেই তার প্রাণনাশ করে। শাবিপ্রবির ক্যাম্পাসে বান্ধবির সাথে থাকাকালীন সময়ে প্রাণ হারানো সেই ছাত্র বুলবুল আহমেদকে তার বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে। গত ২৬ জুলাই রাতে তার নিজ এলাকায় প্রয়াত বুলবুলের পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বুলবুল আহমদকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে প্রাণনাশ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার সময় তার সঙ্গে থাকা বুলবুলের বান্ধবীর তথ্য ও আচরণ অনেক সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। বুলবুলের বান্ধবী পুলিশকে জানায়, প্রাণনাশকাণ্ডে তিনজন অংশ নেয়। কিন্তু ঘটনার পর তিনি তার মোবাইল ফোনের কল লিস্ট মুছে দেন। এর আগে মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) বিকেলে বুলবুলের বান্ধবী গোপনে হাসপাতাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে যান। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। এ প্রাণনাশকাণ্ডে সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে তার দেওয়া তথ্যে ভুল আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ কারণে মঙ্গলবার রাতে তাকে নিয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এ সময় ওই ছাত্র পুলিশকে জানায়, প্রাণনাশকাণ্ডে তিনজন মুখোশধারী যুবক ছিল। সে তাদের চেনে না। তিন মুখোশধারী যুবক বুলবুলকে ডেকে ছু// রিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। তবে কোনো রহস্যজনক কারণে তারা ওই ছাত্রকে আহত বা মারধর করেনি।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, ঘটনার পর ওই ছাত্রী তার মোবাইল ফোনের কল লিস্ট মুছে দেয়। তার দেওয়া তথ্য ও বক্তব্যে অসঙ্গতি রয়েছে। এর আগে সোমবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে ক্যাম্পাসের গাজীকালুর পাহাড়ে বুলবুলের রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে খবর দেয়। পরে তাকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রয়াত ঘোষণা করেন। বুলবুলের বাড়ি নরসিংদীতে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জনপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে এ ঘটনার পর বুলবুলের বান্ধবীকে সিলেট নগরীর মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু মঙ্গলবার বিকেলে হাসপাতাল থেকে হঠাৎ ‘নিখোঁজ’ হয়ে যান তিনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সহপাঠীরা সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পায়নি।
মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের পরিচালক শামীম আহমেদ বলেন, হাসপাতালে ওই ছাত্রীর সঙ্গে তার বেশ কয়েকজন সহপাঠী ছিল। পুলিশও তার ওপর নজর রাখছিল। সে বিকেলে গোপনে হাসপাতাল থেকে চলে যায়। আমরা তাকে অনুমতি দেইনি। এদিকে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ। সিলেট পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ওই ছাত্রী হাসপাতাল থেকে পালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে থাকে। সেখান থেকে তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। এরপর তাকে নিয়ে গাজীকালুর ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। পরে তিনি ঘটনার বর্ণনা দেন। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ বলেন, মেয়েটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে কাউকে কিছু না বলে হাসপাতাল থেকে চলে যায়। পুলিশ তাকে নজরদারিতে রাখে। এছাড়াও তার দেওয়া তথ্য যাচাই করা হচ্ছে। সেখানে তদন্তে অনেক অগ্রগতি। এই ঘটনার সাথে জড়িতদের শিগগিরই গ্রেফতার করা হবে।
বুলবুল আহমেদ প্রাণনাশকাণ্ডে ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার শাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডক্টর আকতারুল ইসলাম এই তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, ছাত্র উপদেষ্টা ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক আমিনা পারভীন, শাহপরান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান খান, জনপ্রশাসন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম ও সহকারী প্রক্টর আবু হেনা পহিল। তদন্ত কমিটির সদস্য শাবিরের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনার পরিচালক আমিনা পারভীন বলেন, ঘটনার পর ওই ছাত্রী তার মোবাইল ফোনের কল লিস্ট ডিলিট করে দেয়। তার মোবাইলের কল লিস্টে আমরা কিছুই পাইনি। মঙ্গলবার বিকেল ৩টার দিকে তাকে হাসপাতালে দেখতে পাই। তারপর খবর পেলাম তিনি হাসপাতাল ছেড়েছেন। তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড় দেওয়া হয়নি। পরে হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে দেখি, তিনি একাই হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেছেন। হাসপাতাল থেকে বের হওয়ার কিছুক্ষণ পর পুলিশ তাকে খুঁজে বের করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যায়। সেখান থেকে রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশ তাকে নিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, ওই ছাত্র পুলিশকে জানায় যে বুলবুল ঘটনাস্থলে বসে ছিল। আচমকা ওই জায়গায় এসে হাজির হয় তিন যুবক। সবাই মুখোশ পরা ছিল। ওরা এসে বুলবুলকে একটু দূরে নিয়ে গেল। এ সময় ওই ছাত্রটি দূরে তাকিয়ে কাউকে ডাকার চেষ্টা করছিল। এরপর বুলবুলের দিকে তাকিয়ে দেখেন তিন যুবক তাকে ছু// রিকাঘাত করে চলে যায়। তবে বুলবুলের সহপাঠীরা জানায়, ওই মেয়ের সঙ্গে বুলবুলের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। প্রেমের সম্পর্কের কারণে এ প্রাণনাশকাণ্ডে ঘটতে পারে। ঘটনার পর হাসপাতালে ভর্তি, মোবাইল কল লিস্ট মুছে ফেলা এবং হাসপাতাল থেকে গোপনে চলে যাওয়া প্রমাণ করে বুলবুল প্রাণনাশের সাথে সে জড়িত থাকতে পারে। সুষ্ঠু তদন্ত করলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। এ ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি চান বুলবুলের সহপাঠীরা।
উল্লেখ্য, ঘটনার সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে নিজের বাদ্ধবির সাথে ঘুরছিলেন। হঠাৎ করে কিছু অজ্ঞাত যুবক এসে তার বান্ধবির সামনে থেকে তাকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ছু// রিঘাত করে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রয়াত ঘোষনা করেন। হাসপাতালে বুলবুলের সার্বিক দিক পর্যালোচনা করার পরে সেখান থেকে কাউকে কিছু না বলেই লাপাত্বা হয়ে যায়। ফলে সন্দেহের তীর এখন সেই বান্ধবীর দিকে।