মানুষের ভাগ্য বদলায় ক্ষনে ক্ষনে, আর এই ভাগ্য একজন কোটিপতিকে স্বল্প সময়ের ব্যবধানে করে দিতে পারে পথের ফকির, এমন ধরনের কথা মানুষ প্রায় উদাহরন হিসেবে বলে থাকে। তবে এই বিষয়টিকে উড়িয়েও দেওয়া যায় না, কারন মানুষ তাদের অভিজ্ঞতা থেকে চিরায়ত ঐ কথাগুলো বলে থাকে। এবার তেমনই একটি ঘটনা ঘটেছে আবুল কালাম নামের এক ব্যক্তির জীবনে। তকে শহরের সকল মানুষ বলতেন একজন সফল ব্যবসায়ী। তিনি সবকিছু হারিয়ে এখন ফুটপাতের একজন টোকাই। তিনি অন্য টোকাইদের মতো শহরের বিভিন্ন অলিগলি ঘুরে বাসার আনাচ-কানাচ ও ডাস্টবিন থেকে প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করেন। এসব পরিত্যাক্ত জিনিসপত্র বিক্রি করার মাধ্যমে আবুল কালাম তার সারা দিনে খাবার জোগাড় করেন। তার জমিজমা অর্থ-প্রতিপত্তি সবকিছু হারিয়ে তিনি এখন অন্যের রান্নাঘরে রাত কাটান।
আবুল কালাম শেরপুরের নকলা উপজেলার বাসিন্দা। তিনি উপজেলা শহরের একজন পুরানো ব্যবসায়ী। নব্বই দশকে উপজেলা শহরের আলেয়া সিনেমা হলের সামনে তার একটি রেস্টুরেন্ট ছিল। এটি শহরের সেরা রেস্টুরেন্ট হিসাবে পরিচিত ছিল। তার হোটেলে ২০ থেকে ২৫ জন কর্মচারী কাজ করতো।
নাস্তার জন্য রেস্তোরায় ভিড় থাকতো দুপুর পর্যন্ত। দুপুরের খাবার চলতো সন্ধ্যা নাগাদ। মধ্য রাত পর্যন্ত ভিড় লেগে থাকতো রাতের খাবারের জন্য। সময়ের পরিক্রমায় হল ব্যবসায় ভাটা পড়ার সাথে সাথে ব্যবসা কমতে থাকে আবুল কালামের হোটেলের।
এরপর হিসেবের খাতা ওলটপালট হয়ে যায় আবুল কালাম অসুস্থ হয়ে পড়লে। তাকে ছেড়ে চলে যায় স্ত্রী সন্তানরা। সেই থেকে ভিটে মাটি ছাড়া তিনি। থাকেন অন্যের রান্না ঘরে আশ্রিত অবস্থায়।
আবুল কালাম বলেন, ‘এক সময় শহরের সবচেয়ে বড় হোটেল রেস্টুরেন্ট ব্যবসা আমার ছিল। হঠাৎ লিভারের রোগে আক্রান্ত হয়ে অপারেশন করাতে হয়। এতে সব অর্থ-সম্পদ শেষ হয়ে যায়। এরপর স্ত্রী-সন্তানেরা আজ আমাকে ফেলে দূরে সরে গেছে।’
তিনি দাবি করেন, ৬৭ বছর বয়সে তিনি একটি সরকারি ঘরে পেতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। তবে কোনো লাভ হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে অন্যের রান্না ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। নকলা বাজারের স্যানিটারি ব্যবসায়ী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদুল আলম (বাবুল) বলেন, ‘আবুল কালাম ওই সময়ের সেরা হোটেল রেস্তোরা ব্যবসায়ী হিসেবে পুরো উপজেলা তার সুনাম ছিল। ভাগ্যের খেলায় আজ সেই কালাম রাস্তায় টোকাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘তার জীবন কাহিনীকে এখন সেখানকার মানুষেরা উদাহরন হিসেবে কথা বলে থাকে। তিনি একসময় সকলের নিকট একজন প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন এখন তিনি একাকী জীবন যাপন করেন। তার অসুস্থতাই তার জীবনের সকল কিছু কেড়ে নিয়েছে। তিনি এখন পুরোপুরি একজন নি:স্ব ব্যক্তি। তার স্ত্রী-সন্তানেদের উচিৎ তার এই দূ:সময়ে পাশে দাঁড়ানো কিন্তু তারা সেটা না করে তাকে দূরে ঠেলে দিয়েছেন। সুনাম করা ব্যক্তি আজ টোকাই হয়ে জীবন যাপন করেন, সরকারের পক্ষ থেকে তাকে সহায়তা করা উচিৎ।’