শর্ত না মানলে ভারতকে ইলিশ দিবে না বলে জানিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী

৭১ এর আগে থেকেই বাংলাদেশের সাথে ভারতের একটি সুসম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশে বিভিন্ন বাণিজ্যিক কাজেও ভারতকে ব্যবহার করে থাকে এবং ভারত বাংলাদেশকে। বিগত বেশ কয়েক যুগ আগে থেকেই তিস্তার পানি নিয়ে বাংলাদেশের সাথে ভারতের একটি চুক্তিতে নিয়ে আসার কথা থাকলেও এখনও পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। তবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকে কাজে লাগিয়ে তিস্তার পানি নিয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে চায় বলে জানিয়েছেন তিনি।

কারন ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত তিস্তা নদীর পানি ঢাকার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক এই নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করলেও নানা কারণে এই পানিবণ্টন চুক্তি বিলম্বিত হচ্ছে।

এ অবস্থায় ভারত সফরে গিয়ে তিস্তার পানি নিয়ে ভারতকে ‘বার্তা’ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আপনি (ভারত) আমাদের পর্যাপ্ত পানি দিচ্ছেন না, তাই আমি এখনই আপনাকে ইলিশ মাছ দিতে পারছি না।

মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য হিন্দু।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির ব্যর্থতার জন্য ভারত সরকারকে কৌতুকপূর্ণভাবে তিরস্কার করেছেন। তিনি সোমবার বলেছিলেন যে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে মতপার্থক্যের কারণে ২০১১ সাল থেকে স্থগিত এই চুক্তিটিও দেশে (ভারত) ইলিশ মাছ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে।

সোমবার দিল্লিতে এক কূটনৈতিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা ও অন্যান্য নদীতে কম জলপ্রবাহের বিষয়টি তুলে ধরে হাসিমুখে বলেন, ‘আপনি (ভারত) আমাদের পর্যাপ্ত পানি দিচ্ছেন না, তাই আমি আপনাকে দিতে পারব না। এই মুহূর্তে ইলিশ মাছ।” তবে কথা দিচ্ছি, আসন্ন পূজা মৌসুমের (অক্টোবর) মধ্যে ইলিশ সরবরাহ করতে পারব।’

মঙ্গলবার ভারত ও বাংলাদেশ দুই দেশের মধ্যে অভিন্ন নদীগুলির যৌথ ব্যবস্থাপনার বিষয়ে কিছু চুক্তি স্বাক্ষর করবে এবং পানি বণ্টনে সহযোগিতার বিভিন্ন উপায় নিয়ে আলোচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে, দ্য হিন্দু জানিয়েছে।

ভারত ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক এজেন্ডায় পানি বণ্টনের গুরুত্ব বিবেচনা করে বাংলাদেশ হাইকমিশন সোমবার এ কূটনৈতিক সংবর্ধনার আয়োজন করে। দিল্লিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মন্ত্রী, কূটনীতিক ও সামরিক কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

দ্য হিন্দুর মতে, বিশেষ সংবর্ধনার সময় নৈশভোজের প্রতিটি টেবিলের নামকরণ করা হয়েছিল বাংলাদেশের একটি নদীর নামে। তিস্তার পাশাপাশি মেঘনা, পদ্মা, খোয়াই ও কুশিয়ারা নামেও একটি টেবিল রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গে বৈঠকের আশা করেছিলেন, কিন্তু তা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (মমতা) আমার বোনের মতো, আমি যখন খুশি তার সঙ্গে দেখা করতে পারি। আমাদের সবসময় ভালো সম্পর্ক ছিল।’

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, অতীতের মতো এবারও তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চান। কিন্তু পরে জানা যায় মমতা দিল্লি আসছেন না। তাঁর কথায়, ‘মমতা আমার বোনের মতো এবং আমরা যে কোনও সময় দেখা করতে পারি। কিছু সম্পর্ক ব্যক্তিগত, রাজনীতির বাইরে। গান্ধীদের সাথে আমার সম্পর্কের মতো।’

ভারতের শীর্ষ রাজনীতিবিদ এবং দেশের প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। ইতালিতে মায়ের মৃত্যুর কারণে সোনিয়া গান্ধী এখন ভারতের বাইরে অবস্থান করছেন।

এছাড়া সফরের প্রথম দিনে সোমবার রাজধানী নয়াদিল্লিতে নিজামুদ্দিন দরগাহ ও মাজারে গেলে কার্যত আবেগে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা। তিনি জানান, বাবার হত্যার পর তিনি যখন দিল্লিতে নির্বাসনে ছিলেন তখন তিনি প্রথম এই দরগায় গিয়েছিলেন।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই সফর নিয়ে আমার একটা অস্বাভাবিক অনুভূতি ছিল, এটা খুবই আধ্যাত্মিক জায়গা। আমি তখন গিয়ে আমার বাবার (বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের) ডায়েরি পড়ি এবং জানতে পারি যে তিনি ১৯৪৬ সালের ৯ এপ্রিল নিজামউদ্দিনের মাজারে এসেছিলেন।’

শেখ হাসিনা আগামী বৃহস্পতিবার ভারতের রাজস্থানের আজমিরে শরীফ দরগায় যাবেন।

এবারের ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রীর সাথে নেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পথমে প্রররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভারত না যাওয়াকে কেন্দ্র করে নানা সমালোচানা হলেও এক সংবাদ মাধ্যমে তার অসুস্থতার কথা প্রকাশ করে সমালোচনাকে রুখে দেয়। জানা গেছে তার হার্ট ব্লকের আসংখা রয়েছে যর জন্য তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গি হতে ব্যর্থ হন।