Friday , September 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / শর্ত দিয়ে গৃহবধূকে নিষিদ্ধ দ্রব্যের ব্যবসা করতে দিলেন ওসি, অডিও ফাঁস

শর্ত দিয়ে গৃহবধূকে নিষিদ্ধ দ্রব্যের ব্যবসা করতে দিলেন ওসি, অডিও ফাঁস

রাজশাহীর চারঘাট থানার ওসি মাহবুবুল আলমের বিরুদ্ধে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নামে সাত লাখ টাকা ঘুষ দাবি করা এক গৃহবধূর অডিও ফাঁস হয়েছে। আর ওই গৃহবধূকে পাঁচ লাখ টাকার মা”দক ব্যবসা করার পরামর্শ দেন ওসি। এ ছাড়া জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ওসিকে বদলি করতে আরও দুই লাখ টাকা দাবি করেন ওসি মাহবুবুল। টাকা না দিলে বড় বিপদে পড়বেন বলেও হুমকি দেন ওই গৃহবধূকে।

তিনি ১৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে সাহারা বেগমকে (২৮) ওসির কোয়ার্টারের বেডরুমে ডেকে গৃহবধূর কাছে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন।

এ ঘটনার পর থেকে আত”ঙ্কে ঘরছাড়া গৃহবধূ। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী গৃহবধূ শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজশাহীর পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের অনুলিপি সরাসরি এবং ডাকযোগে পুলিশের আইজিপি, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি এবং রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নসহ মিডিয়া অফিসে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগের কপিসহ ৬ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের ওসির একটি অডিও রেকর্ডিং পাঠানো হয়েছে।

গৃহবধূ সাহারা বেগম চারঘাট থানার চামতা গ্রামের আব্দুল আলিম কালুর স্ত্রী। কালু বেশ কিছুদিন জেলে আছে। আব্দুল আলীম কালু বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শলুয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। স্থানীয় প্রতিপক্ষের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। এ কারণে তাকে মাদ”ক মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান সাহারা বেগম। ১৩ সেপ্টেম্বর ওসি মাহবুবুল আলম চাঁদাবাজির অভিযোগ করতে গৃহবধূ সাহারা বেগম ও তার ছেলে রাব্বিকে তার শোবার ঘরে ডেকে নেন। প্রথমে তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন নেন ওসি। এরপর ওসি কথা শুরু করেন।

ফাঁস হওয়া অডিও রেকর্ডিংয়ে ওসি মাহবুবুল আলমকে বলতে শোনা যায়, নির্বাচন পরিচালনার জন্য মন্ত্রী আমাকে গাইবান্ধা থেকে এখানে নিয়ে এসেছেন। আমি তার কথা ছাড়া কারো কথা শুনি না। এরপর তিনি চারঘাট এলাকায় গিয়ে মা”দক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার ও মামলা করার জন্য জেলা ডিবির ওসির সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, দুই লাখ টাকা দিলে আমি আগামীকাল ডিবির ওসিকে বদলি করব (ডিবির ওসি আবদুল আলীম কালুকে গ্রেপ্তার করেছিলেন)।

তখন ওসি গৃহবধূ সাহারা বেগমকে বলেন, তোমার স্বামী আমার অনেক ক্ষতি করেছে (ওসির বিরুদ্ধে এসপি অফিসে অভিযোগ)। এখন, আপনি যদি আপনার পরিবারের কাউকে ধরেন, আপনি তাদের ১০ লাখ টাকার নিচে ছেড়ে দিতে পারবেন না। এরপর ওসি বলেন, এখনও তোমার গায়ে আচর দেয়নি। বহুত ফাঁকি দিয়েছো। কালকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে আসবা। এখন সেই সময় নয় যখন কেউ টাকা খায় না। এখানে আমার থানা চালাতে মাসিক অনেক টাকা লাগছে। আমি স্যারকে কথা দিয়ে এসেছি। স্যারের এখন কি কি লাগবে পাঁচ লাখ টাকা… সাত লাখ টাকা লাগবে। আমি বলেছি আমি চেষ্টা করবো। স্যারকে বলেছি এখানে মাদক ছাড়া কিছু নেই।

ওসি আরও বলেন, মুক্তা (চারঘাটের মাদ”ক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত) ব্যবস্থা নিতে পারে না, শুভ (ছাত্রলীগ নেতা ও মাদক ব্যবসায়ী) ব্যবস্থা নিতে পারে না। পাঁচ লাখ টাকা দিতে পারবেন? আমি তাদের চালান দেব। আমি বেঁচে থাকুক বা না থাকুক আমি তাদের আকার দেব। আপনি বাইরে থেকে ব্যবসা (মা”দক ব্যবসা) করবেন।

জেলা ডিবির ওসি আতিকুর রেজা অডিওতে আবারও আতিকের সমালোচনা করে ওসিকে বলতে শোনা যায়, নির্বাচনের আগে শুভকে ধরতে পারব না। আমি সব নষ্ট করব না। কথা শেষ; আতিকের বদলি চাইলে দুই লাখ টাকা দেন। আতিককে আগামীকাল বদলি করা হবে।

চারঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুবুলকেও বলতে শোনা যায়, ক্ষমতা যেখানে সেখানে। পাঁচ লাখ এবং দুই লাখ সাত লাখ দিয়ে ব্যবসা শুরু করুন। আতিক ছাড়াও ওই দুজনকে (মুক্তা ও শুভ) সামলানোর দায়িত্ব আমার। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরে মন্ত্রীকে বলে ওই দুজনকে ধরে অ্যারেস্ট করে চালান করে দিব। আমার সব ওপরের লাইন। যে টাকা দিবা, এই টাকাই ওপরে কাজ করবে। অডিওতে গৃহবধূ সাহারা বেগমের সুন্দর চেহারা নিয়েও মন্তব্য করতে শোনা যায় ওসিকে।

সাহারা বেগম বলেন, আমার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ ও র‌্যাবের সোর্স হিসেবে কাজ করছেন। চারঘাট এলাকায় র‌্যাব-পুলিশ তাদের সোর্সের মাধ্যমে অনেক মা”দক জব্দ করেছে। এ ছাড়া গত নির্বাচনে তিনি ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর থেকে এলাকার শীর্ষ স”ন্ত্রাসী মুক্তার, শুভ ও সাব্বিরের সঙ্গে আমার স্বামীর বিরোধ চলছিল। এ কারণে তারা আমার স্বামীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করেছে।

তিনি আরো বলেন, চারঘাটের চামতা গ্রামের অঞ্জুর ছেলে মুক্তা, শিবপুর গ্রামের সাইমুদ্দিনের ছেলে সাব্বির ও শলুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ শুভ আমার কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। একইসঙ্গে টাকা না দিলে মামলায় ফাঁসানোর হুম”কি দেন। ওই অভিযোগ করতে থানায় গেলে ওসি সাত লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন এবং মাদ”ক ব্যবসা করতে বলেন। আমি রাজি না হলে মামলা করার হুমকি দেয়।

এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও ওসি মাহবুবুল আলম ফোন ধরেননি। তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

রাজশাহী জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও মিডিয়া সেলের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, “আমরা অডিও রেকর্ডিংসহ একটি অভিযোগ পেয়েছি। ঘুষ চাওয়ার ঘটনা সত্য হলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কণ্ঠস্বর কি না তা খতিয়ে দেখা হবে। ওই অডিওর ওসি নাকি না।

About bisso Jit

Check Also

আ.লীগ ও তৃণমূল থেকে বিএনপিতে যোগদানের হিড়িক

নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে বিএনপিতে যোগদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *