Thursday , November 14 2024
Breaking News
Home / Entertainment / শর্ত দিয়েছেন তাঁর সম্পর্কে বাইরে কিছু বলা যাবে না, ছবি তোলা যাবে না : আলমগীর

শর্ত দিয়েছেন তাঁর সম্পর্কে বাইরে কিছু বলা যাবে না, ছবি তোলা যাবে না : আলমগীর

বাংলা রুপালী জগতের নব্বইয়ের দশকের অন্যতম দাপটে অভিনেতা আলমগীর। ক্যারিয়ারে একনাগারে বেশকিছু ব্যবসায় সফল সিনেমা উপহার দিয়ে জায়গা করে নিয়েছেন কোটি কোটি দর্শকের মনে। তবে অভিনয়ের পাশাপাশি একজন সফল প্রযোজক ও গায়ক হিসেবেও বেশ খ্যাতি রয়েছে তার। এদিকে সম্প্রতি এবার আলাপ হলো গুণী এই অভিনেতার সঙ্গে-

কার অনুপ্রেরণায় অভিনয়ে এসেছিলেন?

অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন সবার মতো আমারও ছিল। তবে আমি গায়ক হতে চেয়েছিলাম। বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল আমি ডাক্তার হই। একসময় ছবিতে প্লেব্যাক করতে চলচ্চিত্র নির্মাতা সফদর আলী ভূঁইয়ার অফিসে গেলাম। তিনি আমাকে গাইতে বললেন। চোখ বন্ধ করে গাইলাম। তিনি বললেন, তোমার এক্সপ্রেশন খুব সুন্দর। তুমি চেষ্টা করবে নায়ক হতে। ছোটবেলায় দিলীপ কুমার, উত্তম কুমার আর পরে রাজ্জাক সাহেবের ছবি দেখতাম। উত্তম কুমারের স্টাইল, ফ্যাশন, কথা বলার ভঙ্গিমা বেশ ভালো লাগত। বলতে পারি উত্তম কুমারের অনুপ্রেরণায় অভিনয়ে এসেছি। তবে উত্তম কুমার হওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। চলচ্চিত্রে আসার ১০/১৫ বছর পর বুঝতে পারলাম উত্তম কুমার হওয়ার চেষ্টা করা যায় কিন্তু হওয়া যায় না। কারণ উত্তম কুমার ইজ ওয়ান পিস।

মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের সঙ্গে দেখা হওয়ার গল্পটিই শুনি-

মহানায়িকা সুচিত্রা সেন লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যাওয়ায় আমি জেদ করেই তাঁর সঙ্গে দেখা করি। এদিক থেকে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করছি। কারণ মহানায়িকা অন্তরালে চলে যাওয়ার পর আর কেউ তাঁর সাক্ষাৎ পাননি। আমার কথা ছিল উনি দেখা করবেন না কেন? যাক সামহাউ তাঁর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। তিনি বাংলাদেশের মরণ চাঁদের দই খেতে চেয়েছিলেন। সেই দই পৌঁছে দেওয়ার জন্য আরও দুবার তাঁর সঙ্গে দেখা করি। তিনি শর্ত দিয়ে বলেছিলেন তাঁর সম্পর্কে বাইরে কিছু বলা যাবে না আর ছবি তোলা যাবে না। তাঁকে একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করেছিলাম। কেন তিনি একাকী জীবন বেছে নিলেন। তিনি বললেন, আমি তো আগেই বলেছি, ব্যক্তিগত কোনো প্রশ্ন করা যাবে না। তারপর জানতে চাইলাম অভিনয় করছেন না কেন? উত্তরে তিনি শুধু একটি শব্দ বলেছিলেন- ‘ডিরেক্টর কোথায়?’

প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লার সঙ্গে অভিনয়টা কীভাবে?

এই উপমহাদেশের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লার সঙ্গে ‘শিল্পী’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ছবির নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম সাহেব যখন প্রস্তাব দেন তখন সঙ্গে সঙ্গে রিফিউজ করি। কারণ আমার সময় ছিল না। শেষ পর্যন্ত রুনা লায়লা নিজেই আমাকে রিকোয়েস্ট করেছিলেন। তাঁর রিকোয়েস্টেই শেষ পর্যন্ত ‘শিল্পী’ ছবিতে অভিনয় করি।

সবাই জানে আপনি একজন রাশভারি মানুষ, আসলেই কি তাই?

আমি রাশভারি নই। সময়োপযোগী একজন মানুষ। যখন যেখানে যেমন পরিস্থিতি থাকে আমি সেই পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারি। মানুষের সঙ্গে সহজে মিশে যেতে পারি। আমার সম্মানবোধ অনেক বেশি। যেখানে আমার সম্মান থাকবে না মনে হয় সেখান থেকে সবসময় দূরে থাকি। আসলে আমি খুব গোছালো একজন মানুষ। সুখ একটি আপেক্ষিক শব্দ। সুখের অর্থ কী? এর উত্তর কেউ জানে না। সুখের কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। কারও জীবনে পূর্ণ প্রাপ্তি আসে না। পূর্ণতার জন্য শুধুই সাধনা করে যেতে হয়।

জাতীয় স্বীকৃতি অর্জন, কীভাবে দেখেন?

রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং দর্শকপ্রিয়তা, দুটিই আমি পেয়েছি। দুটি দুই রকম অর্থ বহন করে। দর্শকের ভালোবাসা হলো অনুপ্রেরণা। এতে কাজ নিয়ে পথচলা সহজ হয়। জনগণ ছাড়া ব্যাসিক্যালি আমরা শূন্য। আর জাতীয় স্বীকৃতি প্রতিটি শিল্পীর পরম কাম্য। প্রত্যেকটি শিল্পীর জীবনে এই স্বীকৃতি বিশাল অবদান রাখে, দায়বদ্ধতা বেড়ে যায়।

কাজের সাফল্য পেতে আবশ্যক কী?

পৃথিবীতে কোনো জিনিসই সহজ এবং সস্তা নয়। যে কোনো ক্ষেত্রে সফলতা পেতে সাধনার বিকল্প নেই। কাজ করতে হবে সিনসিয়ারলি। ছোটবেলা থেকে একটি জিনিস জেনেছি, আর তা হলো- গাছ যত বড় হয় গাছের ডালপালা তত ঝুঁকে যায়। কিন্তু আমরা যত বড় হই ততই যদি বড়াই করতে থাকি তাহলে সফল হতে পারব না। সাধনা হলো সাফল্যের সবচেয়ে বড় সোপান। সাধনা, একাগ্রতা, নিষ্ঠা, এসব কিছু মিলিয়ে হলো সাফল্য। এটি সবার জন্য এবং সবক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

বিদেশি ছবি আমদানি কীভাবে দেখেন?

প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে হবে। সবক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা অপরিহার্য। এর কোনো বিকল্প নেই। বিদেশি ছবি আমদানি হলে প্রতিযোগিতায় গিয়ে অবশ্যই আমাদের ছবি উন্নত হবে। বাইরের ছবির বাজেট বেশি বলে আমরা অসম প্রতিযোগিতার কবলে পড়ব এ কথাটি ঠিক নয়। একসময় আমাদের দেশে যখন ভারতের ছবি চলত তখন এখানে ১০/১২ লাখ টাকার ছবি নির্মাণ হতো। আর ভারতে তখন এক/দেড় কোটি রুপির ছবি হতো। তখন কি প্রতিযোগিতা হয়নি? তখন কি রহমান-শবনম এরা উত্তম কুমার-সুচিত্রা সেনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকেননি। রাজ্জাক সাহেব-কবরী কি মোহাম্মদ আলী-জেবার এগেইনস্টে নামেননি। তবে হিন্দি বা উর্দু ছবি, মানে যে ভাষার সঙ্গে আমাদের ভাষার মিল নেই তা এখানে চালাতে আমার আপত্তি আছে। কলকাতার ছবি আসতে পারে। আর কলকাতার ছবি তো এখানে চলছে। আমাদের ছবি কলকাতায় যাচ্ছে। দুই বাংলার মধ্যে ছবি আদান-প্রদানে সমস্যার তো কিছু নেই।

প্রদর্শক-প্রযোজকদের মধ্যে বিদ্যমান দূরত্ব কীভাবে দূর করা যায়?

সিনেমা হল মালিকদের অবশ্যই নিজেদের চলচ্চিত্রের মানুষ ভাবতে হবে এবং প্রযোজকসহ চলচ্চিত্রের যারা মঙ্গল কামনা করেন তাদের সঙ্গে বসে একটা হিসাব-নিকাশ করতে হবে। যেখান থেকে সবার মঙ্গল বেরিয়ে আসবে এবং এই শিল্পটি বেঁচে যাবে। চলচ্চিত্র পুরোপুরি বাণিজ্যিক বিষয় নয়। এটি একাধারে শিল্প এবং বাণিজ্যিক মাধ্যম। একটিকে বিসর্জন দিয়ে আরেকটি নয়। তাই শুধু প্রদর্শকদের দোষ দিলে চলবে না, প্রযোজকদেরও দায় আছে। এটি যে শিল্প ও বাণিজ্যিক মাধ্যম প্রযোজকদের সবার আগে তা মনে রাখতে হবে।

বর্তমানে প্রয়োজন সিনেপ্লেক্স নাকি সিনেমা হল?

সিনেপ্লেক্সে মধ্য এবং নিম্নবিত্তের দর্শক ছবি দেখতে পারে না। কারণ টিকিটের উচ্চমূল্য তাদের নাগালের বাইরে। এ দেশে সিনেপ্লেক্স আসলে তৈরিই হয়েছে উচ্চবিত্তের জন্য। এভাবে তো চলচ্চিত্রশিল্পের উত্তরণ হবে না। একটি ছবির সফলতার জন্য সব শ্রেণির দর্শক দরকার। শুধু উচ্চবিত্তের দর্শক দিয়ে ছবির ব্যবসায়িক স্বার্থরক্ষা সম্ভব নয়। তাই সিনেমা হলের প্রয়োজন কখনই অস্বীকার করা যাবে না।

এখনকার শিল্পীদের কাজ কেমন?

বর্তমান সময়ের শিল্পীরা কেন প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে না? সবাই যে খারাপ তা তো বলা যাবে না। আমরা শেষ ভরসা হিসেবে শাকিব খানকে পেয়েছি। শাকিবের পর যারা আছে তাদের সম্পর্কে খুব একটা জানি না। তবে যেহেতু আমি চলচ্চিত্র জুরি বোর্ডের সদস্য তাই এদের কিছু ছবি আমার দেখা হয়েছে। আমার মনে হয়েছে এরা খারাপ অভিনয় করে না। কিন্তু এদের কপাল খারাপ। কারণ ওরা দক্ষ পরিচালক পাচ্ছে না। কে ওদের কাছ থেকে কাজ আদায় করে নেবে। চলচ্চিত্র কিন্তু একটা ডিরেক্টরনির্ভর শিল্প। ডিরেক্টর ইজ অ্যা ক্যাপ্টেন অব দ্য শিপ।

ডিরেক্টরই জানেন তরকারিটা কীভাবে রান্না করতে হবে। সেই ধরনের দক্ষ পরিচালক তো তারা পাচ্ছে না। তারা যে খারাপ শিল্পী তা তো নয়। সঠিকভাবে গাইড পেলে এখান থেকে আরও কয়েকজন ভালো শিল্পী অবশ্যই বের হয়ে আসতে পারে।

নির্মাতা নাকি অভিনেতা স্বাচ্ছন্দ্য কোথায়?

নির্মাণ এবং অভিনয়, কোনোটিই আমার কাছে কষ্টের নয়। তবে অভিনয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। এগুলো হলো ক্রিয়েটিভ ওয়ার্ক। নিজেকে অভিনেতা দাবি করতে আমার খুব কষ্ট হয়। নিজেকে অভিনেতা হিসেবে মূল্যায়ন করতে গেলে কোনো রকমে টেনেটুনে পাস মার্ক পাব। অভিনেতা দাবি করার মতো অবস্থা আমাদের দেশের কোনো শিল্পীর আছে কি না জানি না। আমার তো নেই। অভিনয়ের বিশালতা এবং এর ব্যাপ্তি এত বড় যে তা একজনের পক্ষে এক জনমে ধারণ করা সম্ভব নয়। এর জন্য হয়তো শত জনম লাগবে। সেটি তো পাব না। কারণ জনম তো একটাই। নির্মাতা হিসেবে আমি কখনই হ্যাপি নই। হ্যাঁ, আমার নির্মিত ছবিগুলো হিট হয়েছে। ছবি হিট হবে এমন আশা নিয়ে নির্মাণ করি না।

১৯৭৩ সালে ‘আমার জন্মভূমি’ সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন আলমগীর। এরপর রাজ্জাক-সোহেল রানার সঙ্গে ‘জিঞ্জীর’ সিনেমায় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন তিনি। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য সিনেমার মধ্য রয়েছে-‘মা ও ছেলে’, ‘মরণের পরে’, ‘দেশপ্রেমিক’, ‘কে আপন কে পর’, ‘অন্ধ বিশ্বাস’, ইত্যাদি।

About

Check Also

গোপনে বিয়ে করলেন তৌহিদ আফ্রিদি, জানা গেল কনের পরিচয়

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে যখন সারা দেশের মানুষ ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তখন বেশ নিরব ছিলেন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *