আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো মাঠে সক্রিয় হতে শুরু করেছে। বৃহৎ দুটি দল আওয়ামীলীগ ও বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে বিপরীত মুখে সমাধান রাজ পথে হওয়ার কথা বলছে তারা। বিএনপি এর দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছে এবং দাবি আদায়ের মাধ্যমে তারা ঘরে ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে। অপরদিকে আওয়ামীলী রাজ পথ দখলের ঘোষনা দিয়ে মাঠে নামছে। এমন সময়ে বিএনপি জোট ছাড়ার ঘোষনা্ জামায়াতের নতুন মোড় নিয়েছে রাজনীতিতে।
বিএনপির সাথে জোটগত সম্পর্ক নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমানের একটি কর্মসূচিতে দেয়া বক্তব্য নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। জামায়াত কি বিএনপির সঙ্গে জোট ভেঙেছে? এমন প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে। তবে জামায়াত নেতারা জানিয়েছেন, তাদের আমিরের এ বক্তব্যটি একটি ঘরোয়া বৈঠকে দেয়া। এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা থাকলে সংবাদ সম্মেলন বা প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জাতিকে জানাবে জামায়াত। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলায় জামায়াতের প্রার্থী বাছাই নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনায় উঠে এসেছে। তবে জামায়াত নেতারা এটাকে তাদের নিয়মিত কাজের অংশ বলে দাবি করেছেন।
গতকাল জামায়াতের আমির ড. শফিকুর রহমানের বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে তিনি বলেন, এতদিন আমরা জোটে ছিলাম।ছিলাম বলে আপনারা হয়তো ভাবছেন, কিছু হয়ে গেছে নাকি? আমি বলি হয়ে গেছে। এটি ২০০৬ সাল পর্যন্ত একটি উপকারী জোট ছিল। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর জোট তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। সেদিন পথ হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এটা আর ফিরে আসেনি। তিনি আরো বলেন, এ ধরনের অকার্যকর জোট বছরের পর বছর চলতে পারে না। এই জোটের সঙ্গে থাকা বিভিন্ন দল বিশেষ করে প্রধান দল বিএনপির (বিএনপি) এই জোট বাস্তবায়নের কোনো ইচ্ছা নেই। বিষয়টি আমাদের কাছে দিবালোকের মতো পরিষ্কার এবং তারা আমাদের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন বাস্তবতা হলো নিজের অবস্থান থেকে আল্লাহর উপর ভরসা রেখে চলা। তবে হ্যাঁ, জাতীয় স্বার্থে একই দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করব, ইনশাআল্লাহ।
বিএনপির সঙ্গে জোটের কথা উল্লেখ করে ওই ভাষণে জামায়াতের আমির বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছি। তারা একমত. তারা আর কোনো জোট করবে না। এখন সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ যদি আমাদের তাওফীক দেন তাহলে আগামী দিনে কঠোর প্রস্তুতি নিতে হবে। অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আল্লাহর দরবারে এই কোরবানিগুলো মঙ্গলময় হোক এই প্রার্থনা করেন তিনি। এই আত্মত্যাগের বিনিময়ে আল্লাহ আমাদের একটি পবিত্র দেশ দান করেন। যে দেশটা কুরআনের আইনে পরিচালিত হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম গতকাল ফোনে দেশের একটি জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যমেকে বলেন, জামায়াতের আমির ঘরোয়া বৈঠকে এ কথা বলেছেন। ঘরোয়া বৈঠকে তো অনেক কথায়ই হয়। এতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ছাড়ার কি কোনো ঘোষণা দিয়েছেন? যদি আমাদের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে হয়, আমরা প্রেস কনফারেন্স বা প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তা করব।
এরই মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য বেশ কয়েকটি জেলায় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জামায়াত। তবে বর্তমানে দলটির নিবন্ধন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, প্রার্থী চূড়ান্ত করা জামায়াতের নিয়মিত সাংগঠনিক কাজের অংশ। প্রার্থীদের নার্সিং করতে এটা করা হয়। এটি স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। এটি বিগত সময়েও করা হয়েছে। এটি বিশেষ কোনো কিছু না।
স্বৈরাচার এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ ছিল জামায়াত ও বিএনপি। পৃথক হলেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন দুই জোটের যুগপত আন্দোলনেই পতন ঘটে এরশাদের। সংখ্যায় কম হলেও জামায়াতের সমর্থনে বিএনপি ১৯৯১ সালে সরকার গঠন করে। ফিরে আসে সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। ২০০১ সালে, বিএনপি এবং জামায়াত একটি আনুষ্ঠানিক চারদলীয় জোটের সাথে ক্ষমতায় ফিরে আসে। ২০০৬ সালের পর এক যুগেরও বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা সত্ত্বেও বিএনপি ও জামায়াতের জোট শক্তিশালী ছিল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তাদের যুগপৎ কর্মসূচি দেখা যায়নি।
প্রসঙ্গত, যদিও তাদের আমির এ বক্তব্য দিয়েছেন কিন্তু এখনো কোনো্ আনুষ্ঠানিক ঘোষনা আসেনি বলে দাবি করেন অন্যান্য শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। জামায়াতের শীর্ষ নেতারা বলেন জোট না থাকলে একই দাবি নিয়ে তারা আন্দোলন করবে।