Wednesday , November 20 2024
Breaking News
Home / Countrywide / শতকোটি টাকা মালিক হয়ে চাকরি ছাড়লেন এনবিআরের পিয়ন

শতকোটি টাকা মালিক হয়ে চাকরি ছাড়লেন এনবিআরের পিয়ন

এক সময় বাড়ি ছাড়া তার কোনো সম্পদ ছিল না। সাতক্ষীরার তালা উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের দিনমজুর মৃত শেখ তমেজ উদ্দিনের ৩ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে মাহমুদুল ইসলাম সবার ছোট। বাবার সঙ্গে দিনমজুরের কাজ করতেন। ১৯৯০-এর দশকে মাহমুদুল ইসলাম জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীনে অফিস সহকারী (পিয়ন) হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন।

প্রথমে তিনি এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে ছিলেন। এরপর তাকে খুলনা, কুষ্টিয়া হয়ে নিজ জেলা সাতক্ষীরায় বদলি করা হয়। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে তিনি সাতক্ষীরা শহরের আবগারি কমিশনার (সার্কেল-১৩) (আয়কর অফিস) অফিসে কর্মরত ছিলেন। সেখানে তিনি একজন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের সাথে বন্ধুত্ব করে অবৈধভাবে বিপুল অর্থ উপার্জন করেন। তার সম্পদের অলৌকিক সব কারবার নিয়ে এলাকায় সমালোচনা শুরু হলে চাকরি ২৫ বছর হওয়ামাত্রই তিনি ২০১৭ সালে স্বেচ্ছায় অবসর নেন।

অষ্টম শ্রেণী পাস করে সাতক্ষীরায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অফিস সহকারী (পিয়ন) পদে যোগ দিয়ে ‘আলাদিনের প্রদীপ’ পান মাহমুদুল। এখন সাতক্ষীরার সবচেয়ে বড় শপিং কমপ্লেক্স, চারতলা বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিশাল মাছের ঘের, নামে-বেনামে শত কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলে এলাকার সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। এবং স্থানীয়রা যখন এসব সম্পদের উৎস নিয়ে কানাঘুষা শুরু করে,তখনই নিজেকে রক্ষায় স্বেচ্ছায় চাকরিতে ইস্তফা দেন।

সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি কর্মকর্তাদের অবৈধ সম্পদ নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে অন্তত ৩০ কোটি টাকার একটি শপিং কমপ্লেক্স বিক্রির পরিকল্পনা করছেন মাহমুদুল। তার অবৈধ সম্পদের বিষয়ে দুদকে তিনটি অভিযোগ জমা পড়লেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাতক্ষীরার গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র পাটকেলঘাটার পল্লী বিদ্যুৎ রোড সংলগ্ন এলাকায় নজরকাড়া বহুতল শপিং কমপ্লেক্স গড়ে তুলেছেন মাহমুদুল। ‘বন্ধন শপিং কমপ্লেক্স’ নামের এই ভবনে রয়েছে নানা ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ১২ শতাংশ জমিতে স্থাপিত অত্যাধুনিক শপিংমলটি ২০২১ সালে উদ্বোধন করা হয়েছিল। জমি এবং পণ্য সহ এই খাতে তাঁর বিনিয়োগের পরিমাণ কমপক্ষে ৩০ কোটি টাকা।

পাটকেলঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ৪৭ দাগের ৯ শতাংশ জমিতে তৈরি করেছেন আলিশান চার তলা বাড়ি। বাড়ির পাশ ঘিরে তৈরি করা হয়েছে পাকা পুকুর। ১৭ শতাংশ জায়গায় ওই পাকা পুকুরকে এলাকার লোকজন সুইমিংপুল হিসাবে জানেন। জায়গা কিনে এই বাড়ি করতে তার অন্তত ২০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। স্ত্রী নাছিমা বেগমের নামে পাটকেলঘাটা বাজারের সবচেয়ে দামি রাজেন্দ্রপুর মৌজার ১৪৯ দাগে ১৭ শতাংশ, ১৫০ দাগে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ, ১৪৭ দাগে ৯ শতাংশ ও পাটকেলঘাটা চৌরাস্তা মোড়ে ৮১ দাগে ১ শতাংশ জমি কিনেছেন।

পাটকেলঘাটার পাঁচ রাস্তা জংশন এলাকায় মেয়ে ঊর্মির নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘উর্মি এন্টারপ্রাইজ’ গড়ে উঠেছে বলেও জানা গেছে। বেশ কিছু মালবাহী ট্রাক ও ইটের ভাটা রয়েছে। এই সংগঠনের নেপথ্যে তিনি চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বালিয়াদোহা গ্রামে উর্মির নামে কয়েক বিঘা জমি রয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে মাহমুদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার যে সম্পদ আছে তা আয়কর ফাইলে দেখানো হয়েছে। ১০০ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য সঠিক নয়, আমার ৪০ লাখ টাকার মতো সম্পদ আছে।’ বাড়ি, শপিং কমপ্লেক্স, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানসহ সব সম্পদের ফিরিস্তি তুলে ধরে এত সম্পদের দাম কীভাবে মাত্র ৪০ লাখ টাকা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেক সম্পদ আমি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে করেছি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এখনো আমার ঋণের পরিমাণ অন্তত পাঁচ কোটি টাকা।’ ৪০ লাখ টাকার সম্পদ বন্ধক দিয়ে আপনি কীভাবে ৫ কোটি টাকা ঋণ নিলেন-এমন প্রশ্নের কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।

দুর্নীতি ঢাকতে আপনি কি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার স্ত্রীর নামে আগে থেকেই কিছু ব্যবসা ছিল। আর দুর্নীতি ঢাকতে স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়া ঠিক নয়। কর্মজীবনে আমি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রধান কার্যালয়, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালন করেছি। সাতক্ষীরা থাকার সময় মেয়েদের বিয়ে নিয়ে ব্যস্ততার কারণে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছিলাম।

About Nasimul Islam

Check Also

সম্পদ বেড়েছে ৫৪ গুণ, তিন দেশে বাড়ি আছে দুর্নীতির ‘মহারাজ’ নিক্সনের

ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *